272218

একজন কাজ পাগল ওবায়দুল কাদের

নিউজ ডেস্ক।।  অসুস্থতাকে পাত্তা না দিয়ে হার্টে ব্লক নিয়েই দেশের বিভিন্ন প্রান্তর ঘুরে বেড়িয়েছেন কাজ পাগল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নিয়মিত সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প ও দলের কাজে ব্যস্ত থাকতেন তিনি। গত ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগে মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক হলেও নির্বাচনের কারণে হার্টে রিং পরাননি। কারণ এতে কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে হতো তাকে। নির্বাচনের পরেও নানা ব্যস্ততায়তার আর হার্টে রিং পরানো হয়নি। আজ তিনি গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্দিক্ষণে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কিন্তু কাজ পাগল এই মানুষটি অসুস্থ্য হবার ঠিক আগের দিন শনিবার দলের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।

জানা যায়, গত ২০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগেই মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি হেসে বলেছিলেন, ‘আল্লাহ ভরসা। সামনে জাতীয় নির্বাচন। আগে নির্বাচন শেষ হোক তারপর না হয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্রয়োজনে স্ট্যান্টিং, বাইপাস কিংবা ওপেন হার্ট সার্জারি করব।’ সে সময় তার অসুস্থতার কথা সাংবাদিকদের জানাতে নিষেধও করেছিলেন তিনি।

অসুস্থ্য শরীরকে পাত্তা না দিয়ে নির্বাচনের মাঠ চষে বেড়িয়েছেন ওবায়দুল কাদের। নির্বাচনের পরেও নানা উন্নয়ন প্রকল্প দেখভাল করার জন্য ছুটে বেড়িয়েছেন ঢাকার আশুলিয়া, গাজীপুরের চন্দ্রা, কালিয়াকৈর; নারায়ণগঞ্জের কাচপুর ব্রিজ; মুন্সিগঞ্জের পদ্মাসেতু প্রকল্প ও মেঘনা-গোমতী ব্রিজ এলাকায়। সকালে গাজীপুর তো বিকালে নারায়ণগঞ্জ। কিন্তু তার হার্টে রিং আর পরানো হয়নি।

মন্ত্রী হবার পরপরই তার বিভিন্ন দফতরে ছুটে চলার কারণে আলোচনার সৃষ্টি করে তার নাম হয়েছিল ‘ফাটাকেষ্ট’। নানা অনিয়মের সরাসরি ব্যবস্থা নিয়েছেন তিনি। সড়কে দাড়িয়ে গাড়ির চালকদের লাইসেন্সও পরীক্ষা করেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি সময় দিয়েছেন স্বপ্নের পদ্মাসেতু প্রকল্পে। নানা আলোচনা সমালোচনার মধ্যে সরকারের চ্যালেঞ্জের এই পদ্মাসেতু দৃশ্যমান করেছেন তিনি। সাপ্তাহে তিন-চার দিন পদ্মাসেতু এলাকায় পরিদর্শনে গিয়েছেন। এছাড়া মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে যথেষ্ট সময় দিয়েছেন। প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিতে রাতদিন পরিশ্রম করেছেন। এর মধ্যেই নিজ এলাকা নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে নিয়মিত সময় দিয়েছেন তিনি। ঠিক মত ঘুমানোর সময় পেতেন না তিনি। মন্ত্রণালয়ের কোন ফাইল আটকে থাকতো না। নিয়মিত তা দেখে সচল রাখতেন সব কাজ। এজন্য প্রতিদিনই ঘুমাতে রাত ২টা বা ৩টা বেজে যেত। ওবায়দুল কাদের যত রাত করেই ঘুমান না কেনো উঠে যেতেন ফজরের সময়। নামাজ পড়ে নিয়মিত সকালে হাটতেন। এটা ছিল নিয়মিত অভ্যাস।
শত ব্যস্ততার মাঝে দলীয় কার্যক্রমে নিয়মিত সময় দিতেন তিনি। প্রায় প্রতিদিন বিকালে ধানমন্রডি আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজণৈতিক কার্যালয়ে হাজির হয়ে দলের কর্মীদের সময় দিতেন। শুনতেন কর্মীদের নানা কথা। সাপ্তাহে সব দিনই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের সংবাদের খোরাক মিটাতেন।

এই ব্যস্ততার মাঝেই গত রোববার সকালে হার্ট অ্যাটাকের পর এনজিওগ্রাম পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। একটিতে শতভাগ, একটি ৯৯ ভাগ ও একটিতে ৯০ ভাগ। চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিকভাবে একটিতে রিং (স্ট্যান্টিং) পরান। আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে এ অবস্থায় রোগীকে তিনটি রিং কিংবা ওপেন হার্ট সার্জারি করা যায় না। তাই অন্য দুটিতে পরানো সম্ভব হয়নি। বর্তমানে তিনি কার্ডিয়াক আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তার রক্তচাপ ক্রমশ কমে যাচ্ছে বলেও জানান চিকিৎসকরা।

এর আগে গত শুক্রবার (১ মার্চ) গণভবনে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন এবং রুটিন করে চলা শরীরের যত্ম নেয়ার পরামর্শ দেন। নিয়মিত খাওয়া-দাওয়ারও পরামর্শ দেন। বলেন, সবার আগে শরীর। অতিরিক্ত পরিশ্রম করো না। প্রধানমন্ত্রী তাকে শরীরের ফুল চেক-আপ করার জন্যও বলেন। তখন ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘আপা করবো।’ কিন্তু কাজ পাগল এই মানুষটির আর স্বাস্থ পরীক্ষা করা হল না। এর আগেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। উৎস: ইনকিলাব।

ad

পাঠকের মতামত