271038

চকবাজারের পোড়া লাশের দায় আমার…

হ্যা আমি স্বীকার করছি, চকবাজারের পোড়া লাশের দায় আমার। জাতিগত ভাবে আমরা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। রোজকার প্রতিযোগিতাপূর্ণ, নোংড়া যাপিত জীবন আমাদের সাহসী করেছে। শহুরে রাস্তায় প্রতিনিয়ত যানজটে থেমে থাকা হাজারো গাড়ির সাথে থেমে গেছে আমাদের চিন্তা করার শক্তিও। বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদার সাথে মৌলিক ভাবে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত সম্পদ গড়ার প্রতিযোগিতা। কাগুজে অর্থের কাছে পরাজিত হয়েছে জীবনবোধ।

আমি এও জানি ব্যস্ততার মধ্যে হাহা রিয়েক্টে দেবার মত মাজাদার বিষয় রেখে আমার রসবিহীন লেখা পরার রুচি আপনাদের নেই। একজন সাধারন মানুষ হিসেবে আমার মনে গত কিছুদিন ধরে একটা প্রশ্ন ঘুরছে। আচ্ছা চকবাজারের সকল বাসার মালিক কি সরকার? বসত বাড়ীতে রাসায়নিক গুদাম করার জন্য ভাড়া কে দিয়েছে? যারা পুড়ে মরলো তারা কেন মরলো? নাকি সরকার সীদ্ধান্ত নিয়েছে একই বাসায় রাসায়নিক এবং মানব
গুদাম হবে?

আমি সরকারের চাটুকার গোষ্টির কেউ না। আমি একজন সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কের প্রতিচ্ছবি হয়ে বলতে চাই, একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন, ব্যবসায়ীরা তাদের সুবিধার্থে গুদাম করেছে। যারা বসবাস করছে তারা তাদের প্রয়োজনেই সেখানে আছেন। আর শত বছরের নিয়মিত চর্চায় নির্ভিক হয়েছি আমরা।

কি আর এমন হবে। তা এখানে সরকারের করণীয় কিছুই নেই তা নয়, সরকার অবশ্যই জনগণের কল্যাণে নীতি প্রণয়ন করবে। আচ্ছা তা নাহয় সরকার করলো। এমন হাজারো অসাধারন নীতিমালা এদেশের জনগনের কল্যানে বিভিন্ন সরকার নানা সময় প্রণয়ন করেছে কিন্তু তার প্রয়োগ কোথায়? নীতি না মেনে চলতে পাড়ার মধ্যে যে একটা বীরত্ব আছে তা আমাদের দেশের মানুষের আচরন এবং কার্যপ্রণালী দেখলেই স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। আর কিছু না হোক, এদেশে রাজনৈতিক সাম্য হাসিল হয়েছে।

কৃষক-শ্রমিক থেকে শুরু করে ছাত্র, অছাত্র, ব্যবসায়ী, ডাক্তার এমনকি শিক্ষা ও ধর্মীয়
গুরুরাও রাজনৈতিক ছায়ার অন্তর্ভূক্ত। ফলে সরকারী ছোট পদের কোন কর্মচারীর আইন প্রয়োগের ক্ষমতা যেন আইন ভঙ্গকারীর চেয়ে কমেছে। কারণ অল্পতেই আমরা রাজনৈতিক পদমর্যাদার দোহাই দিয়ে থামিয়ে দিতে পারি গোবেচারা চাকুরেকে। প্রয়োজনে সংসদ সদস্য কিংবা বিশেষ মন্ত্রী মহোদয়ের ক্ষমতাকেও আমরা অপকর্মে ব্যবহার করতে পারি। চলুন আবার প্রসঙ্গে ফিরে যাই।

চকবাজার হোক কিংবা নিমতলী হোক সেখানে ভোক্তভোগী যেমন একদল মানুষ তেমনি কারণও একদল মানুষ। সরকার এসে নিজ হাতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে যায়নি। আমি জানি অনেকের আবেগ আমার যুক্তি থেকেও বেশি শক্তিশালী, আবার রাজনৈতিক দলীয়করণের কারনে আমার এ সাধারন কথাটিকেও অনেকে সাধারণ ভাবে নিতে পারবেন না জানি, তাই সকলের কাছে ক্ষমা চাইছি। চকবাজারের লাশের দৃশ্য দেখে আমারও দুচোখ বেয়ে জল এসেছে, আমিও জানি স্বজন হারানোর বেদনা কি।

শুধু জানিনা কেন আমরা একটা ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে পারিনা। কেন একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করছি বারবার। কেনইবা আমরা মানবকল্যানমূখি ভাবনায় একাত্ততা পোষণ করতে পারছি না।তবে কি অন্য সকল সাধারন চর্চার মত কারো না কারো ঘারে দায় চাপানো লাগবে বলে আমরা সরকারকে টানছি।

আচ্ছা আপনি বলুন দেখি, হাজারো চেষ্টার পর মাদকাশক্তির পথ থেকে সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ বাবা-মা কি তবে আত্মহত্যা করবে? নাকি বাকি সব সন্তানদের মঙ্গল কামনায়, তাদের ভবিষ্যৎ গড়ায় মননিবেশ করবে?

আমরা জানি, বর্তমান সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে লাখো কোটি টাকা ব্যয় করছে। তবে কিছু টাকা দেশের জনগনের মানসিকতা উন্নয়নে ব্যয়ের প্রয়োজন আছে বলে ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি। ধর্ষণ,খুন, গুম, অপমৃত্যুতে অসংখ্যবার আমরা আবেগ তাড়িত হয়েছি। কিন্তু তা জাতিগত ভাবে সকলের বিবেকে সংরক্ষন করতে পারিনি। যে কারণে, ইস্যুর পর ইস্যু আসে,ইস্যুর পাহাড় জমে।

আমরা কেবল ঘুমন্ত বিবেক নিয়ে চাঁপা পরি। অপেক্ষায় থাকি পরের বিষয়বস্তু কি? অনুরোধ করছি, ভাবুন। ভাবতে হবে। বিবেককে জাগ্রত করতে হবে।  মোঃ রিয়াজুল করিম, প্রেসিডেন্ট, এডুকেশন পার্লামেন্ট। উৎস: ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম

ad

পাঠকের মতামত