239913

গোলাগুলির পর মোহাম্মদপুরের আতঙ্ক ‘রক্তচোষা’ সাদ্দাম গ্রেপ্তার

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনার পর আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হয়েছেন মোহাম্মদপুরের আতঙ্ক ‘রক্তচোষা’ সাদ্দাম। আজ মঙ্গলবার সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সহযোগী শাওনসহ তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।এ সময় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় চাপাতি-রামদাসহ বেশ কিছু দেশীও অস্ত্র। আহত সাদ্দামকে জাতীয় অর্থোপেডিকস (পঙ্গু) হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।এ ঘটনায় আহত হয়েছেন পুলিশেরও ৩ সদস্য। তারা হলেন- মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) প্লাবন আহমেদ রাজীব ও অপূর্ব কুমার বর্মন এবং কনস্টেবল মো. মোতালেব। তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

গত ৫ অক্টোবর দৈনিক আমাদের সময়ে ‘মোহাম্মদপুরের আতঙ্ক রক্তচোষা সাদ্দাম’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন ছাপা হয়। এরপর তাকে গ্রেপ্তারে তৎপর হয়ে ওঠে পুলিশ।জানা গেছে, আগ্নেয়াস্ত্র চালাতে পারদর্শী হলেও ছুরি-চাপাতি দিয়ে মানুষ কোপানো নেশা সাদ্দামের। শুধু কুপিয়েই ক্ষান্ত হন না, পরে অস্ত্রে লেগে থাকা রক্ত খাওয়াও পরিণত হয়েছিল তার শখে। এই পৈশাচিকতার কারণে ঢাকা পড়ে গেছে তার পৈতৃক নামও। অপরাধজগতের মানুষরা সাদ্দামকে চেনে ‘রক্তচোষা’ সাদ্দাম নামে। মোহাম্মদপুরের অপরাধজগতের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড এক বড় ভাইয়ের হাত ধরে আন্ডারওয়ার্ল্ডে নাম লেখান তিনি।ছিঁচকে চোর থেকে ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাত দলের নেতা। একপর্যায়ে মোহাম্মদপুরবাসীর কাছে আতঙ্কের আরেক নাম হয়ে ওঠেন রক্তচোষা সাদ্দাম।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর এই সাদ্দামের হামলার শিকার হয়েছিলেন মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। সেদিন দুপুরে ঢাকা উদ্যান এলাকায় দুই অপহৃতকে উদ্ধার অভিযানে যান কনস্টেবল মো. আবুল খায়ের। সেখানে তাকে এলোপাতাড়ি কোপায় সাদ্দাম ও তার ক্যাডাররা। ওই হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হন এই চক্রের সদস্য মো. জাভেদ।ঘটনার দেড় মাস পর আজ ভোরে গ্রেপ্তার হন অভিযুক্ত সাদ্দাম ও শাওন। তবে এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে তাদের সহযোগী কালাম ওরফে কালা, আরমান, কবীর, সুজনসহ অচেনা ১০ থেকে ১২ সন্ত্রাসী।মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর আমাদের সময়কে জানান, মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায় একদল যুবক ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে এ সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার রাত ৩টার দিকে সেখানে অভিযানে যায় পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের উপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ডাকাতরা হামলা চালালে ৩ পুলিশ সদস্য আহত হন। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ এ সময় গুলি চালালে সাদ্দাম হোসেন পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়।

পরে অভিযান চালিয়ে সাদ্দামের সহযোগী শাওনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলেও পালিয়ে যায় তাদের অন্য সহযোগীরা। পলাতকদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।জানা গেছে, সাদ্দাম হোসেন থাকতেন মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং প্রকল্প এলাকায়। অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি ও মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণে তার রয়েছে বিশাল বাহিনী। বিশেষ করে ঢাকা উদ্যানের বেড়িবাঁধ ঢাল থেকে ঢাকা উদ্যান হাউজিং, নবীনগর হাউজিং, চন্দ্রিমা হাউজিং, নবোদয় হাউজিং, শেখেরটেক এলাকায় তৎপর তার লোকজন। রাজধানীর পার্শ্ববর্তী সাভারের হেমায়েতপুর, আমিনবাজারে কাঁচা বাজার ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন তার সহযোগীরা।

ওই সব এলাকা থেকে এসে তার চক্রের সদস্যরা দিনের বেলায় ছোট-ছোট গ্রæপে ভাগ হয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই করে। রাতের বেলা সংঘবদ্ধ হয়ে করে ডাকাতি। গত সোমবার গভীর রাতেও গ্রেপ্তারকৃতরা এসেছিলেন সাভারের হেমায়েতপুর থেকে। ছিনতাই কাজে সংঘবদ্ধ এই চক্র ব্যবহার করে মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাস। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভুয়া পরিচয় দিয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষকে তুলে নিয়ে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্বর্ণালঙ্কার, ভ্যানিটি ব্যাগ, টাকা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন দ্রব্য লুট করা ছাড়াও আদায় করে মুক্তিপণ।রাতের বেলা দুই বা ততোধিক দল একত্র হয়ে নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটে বা ফাঁকা বাড়িতে গ্রিল কেটে ও তালা ভেঙে লুটপাট চালায়। এর আগেও সাদ্দাম মোহাম্মদপুর থানাসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিকবার আটক হয়েছিলেন। কিন্তু আইনের ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে আবার জড়িয়ে পড়েন অপরাধজগতে।

ad

পাঠকের মতামত