
নম্বর কম মিলে কোচিং না করলেই!
নিউজ ডেস্ক।। অরিত্রি অধিকারীর আত্মহননের পর রাজধানীর নামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ প্রকাশ পেয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষকদের কাছে কোচিংয়ে না পড়লে পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়ার হুমকি, অভিভাবকদের সঙ্গে অসদাচরণ, প্রতিবছর লাখ লাখ টাকার ভর্তি বাণিজ্যের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। এ রকম নানা অভিযোগ পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম দুর্নীতির মূলোৎপাটনে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অরিত্রির আত্মহত্যার পর গত মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে গেলে তার কাছে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা নানা অভিযোগ জানান। পাশাপাশি তারা বলেন, ভিকারুননিসার শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও অভিভাবকদের প্রতি অসদাচরণ করেন। ফলে প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম নিয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। গত কয়েকদিনে টেলিফোনেও অনেকে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানান।
গতকাল মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ভিকারুননিসায় নিয়মের বাইরেও শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। এখানে নির্দিষ্ট সংখ্যক সিট আছে। সেটা না মেনে তারা অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে। আমরা জেনেছি, আগে সেখানে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে ১০ লাখ টাকাও নেওয়া হতো। তারা যে সংখ্যক ভর্তির অনুমোদন পায় তার চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করে। তিনি আরও বলেন, আমরা শাখা খোলার অনুমোদন দেই না অথচ তারা শাখা খুলে ফেলে। এই তথ্যগুলো কেউ বলে না। মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা অনেক তথ্য পাই কিন্তু কোনো গার্ডিয়ান বা শিক্ষার্থী অভিযোগ করতে চান না, তারা ভয় পান। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আমরা অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পেয়েছি।
মন্ত্রী বলেন, ঘটনার পর থেকে আমি অসংখ্য টেলিফোন পাচ্ছি, তারা (অভিভাবক) তাদের ক্ষোভের কথা জানাচ্ছেন। অনেকে ক্ষমতাবান ব্যক্তি অথচ তারা আগে বলেননি। তারা বলেছে, আমরা সাহস পাইনি, কারণ বললে আমাদের মেয়েকে শাসাতে পারে। গতকাল বেইলি রোডে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শাখার এক নম্বর ফটকের সামনে বিকালে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশে একাধিক অভিভাবক জানান, প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের পরিচালিত কোচিংয়ে মেয়েরা না পড়লে ক্লাসের পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়া হয়। কোচিংবাজ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্পর্কে অভিভাবকরা জানান, এসব লোক দেখানো। কয়েকদিন বন্ধ থাকে, ফের সব কিছু স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকে। শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও টিউশন ফি বছর বছর বৃদ্ধিরও অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা।
প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী জানান, আমরা নতুন ঘটনার জন্য শুধু তিন দায়ী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছি তা নয়, বরং আমরা সেই সঙ্গে অনেক অনিয়ম এবং অসঙ্গতি চিহ্নিত করছি। যে বিষয়গুলো অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পেয়েছি। ওখানে বহুদিন ধরে অধ্যক্ষ নেই, একজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও তারা অধ্যক্ষ নিয়োগের ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে এটাও একটি বড় ধরনের অনিয়ম। এখানকার অনিয়ম দুর্নীতির মূলোৎপাটন করবে প্রশাসন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তালিকা অনুযায়ী কোচিং-বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ফেব্রুয়ারিতে ভিকারুননিসার ৭ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। উৎস: দৈনিক আমাদের সময়।