ঐক্যফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ হবে যে পদ্ধতিতে
নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ তাদের যে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিচ্ছে তাতে মূলত : নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনে জয়ী হলে তিনিই যে আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে।কিন্তু এর বিপরীত অবস্থা আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি’র ক্ষেত্রে। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন দণ্ডিত হয়ে কারাগারে এবং তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। বিএনপি আছে দুটি রাজনৈতিক জোটে। তার একটি হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং সেই জোটের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেনও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না।
ফলে প্রশ্ন উঠছে বিএনপি কিংবা ঐক্যফ্রন্ট কাকে নেতা হিসেবে সামনে রেখে নির্বাচন করছে? তারা বিজয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী হবেন কে? বিষয়টি নিয়ে অবশ্য বিএনপি’র সাধারণ কর্মীদের সাথে কথা বলে দেখা গেল, তাদের মধ্যে কোন সংশয় নেই।ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে চট্রগ্রাম থেকে আসা বেলায়েত হোসেন নামে এক কর্মী বলছিলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলেও নেতৃত্ব নিয়ে দলের নির্বাচনী কাজে কোন সংকট নেই।‘ম্যাডাম কারাগারে এবং নির্বাচন থেকে তাকে দূরে রাখা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য বড় একটা ক্ষতি। কিন্তু ম্যাডাম না থাকলেও তিনিই আমাদের মূল নেতা। কারাবরণের আগে তিনি যে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, সেভাবেই আমাদের কাজ চলছে।’
‘আমাদের নেতাদের মধ্যে কোন ফাটল ধরে নাই। কেউ সরকারের ফাঁদে পা দেয় নাই। আমরা দেখতে পাচ্ছি, নেতারা একসাথে মিলে দল চালাচ্ছেন।’ – বলছিলেন বেলায়েত।বিএনপি বলছে, খালেদা জিয়া না থাকলেও তার ইমেজকে সামনে রেখেই নির্বাচনের মাঠে থাকবে নেতা-কর্মীরা। ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরীও বলছেন, নির্বাচনে খালেদা জিয়ার কারাবরণের ইস্যুটিকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ জনগনের সহানুভূতি আদায়ের কৌশল থাকবে তাদের।‘আমরা তো মনে করি খালেদা জিয়ার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। তাকে জামিনও দেয়া হচ্ছে না, নির্বাচন থেকেও দূরে রাখা হয়েছে। বিএনপি এবং আমরা এটা নিয়ে জনগনের কাছে যাবো। জনগনের মধ্যেও এটা নিয়ে ক্ষুব্ধ মনোভাব রয়েছে। আমরা সেটা কাজে লাগাবো।’
কিন্তু বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট যদি নির্বাচনে জেতে – তাহলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী? বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে অবশ্য বোঝা যাচ্ছে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন সিদ্ধান্ত বা পরিকল্পনা এখনো ঠিক করা হয়নি জোটের পক্ষ থেকে।যদিও এক্ষেত্রে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ প্রচ্ছন্নভাবে খালেদা জিয়ার কথাই বলছেন।‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে প্যারোলে থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীত্বের শপথ নিয়েছিলেন। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর কোন কিছুই তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।’‘আমরা যদি নির্বাচনে জয়ী হতে পারি, তাহলে তখন বেগম খালেদা জিয়ার কী হবে সেটা নিয়ে কোন প্রশ্নই থাকবে না। কোন সংকট থাকবে না। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’ কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে জয়ী হলেও মিসেস জিয়ার দণ্ডাদেশ কিংবা সংসদ সদস্য পদ না থাকায় তার সামনে যে আইনী প্রতিবন্ধকতা থাকবে সেটাকেও গুরুত্ব দিতে চাননা মওদুদ।
তার মতে, রাজনীতিই সব ঠিক করে দেবে। প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনের পথও খোলা আছে। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, নির্বাচনে জয়ী হলে খালেদা জিয়াকেই প্রধানমন্ত্রী বানানোর পথ খুঁজতে চায় বিএনপি। যদিও ঐক্যফ্রন্টের নেতা সুব্রত চৌধুরী বলছেন, সবকিছু ঠিক হবে নির্বাচনের পর।চৌধুরী বলছিলেন, ‘কামাল হোসেন প্রধানমন্ত্রী হবেন নাকি খালেদা জিয়া নাকি অন্য কেউ সেটা নির্ধারণ করা হবে নির্বাচনে বিজয়ের পর। এটা নিয়ে কোন জটিলতা হবে না। আমাদের মধ্য থেকেই কেউ একজন হবেন।’‘কিন্তু তার আগে আমাদের নির্বাচনে জিততে হবে। এখন সেখানেই মনযোগ দিতে হবে।’ সূত্র: বিবিসি