
শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে ফতুল্লা রণক্ষেত্র, ওসিসহ আহত অর্ধশত
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি রফতানিমুখী গার্মেন্ট কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।ওই সময়ে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ওসি মঞ্জুর কাদেরসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে বিসিকের অন্তত ২০ থেকে ২৫টি কারখানা এবং ১০ থেকে ১৫টি যানবাহন।সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীতে ফকির অ্যাপারেল গার্মেন্টের শ্রমিক অসন্তোষে এ ঘটনা ঘটে। এতে বিসিকে অবস্থিত প্রায় তিন শতাধিক কারখানা ছুটি দিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। এসব কারখানায় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার শ্রমিক কাজ করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েক ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের সময় ইটপাটকেলের আঘাতে ফতুল্লা থানার ওসি মঞ্জুর কাদের ও ৭-৮ জন পুলিশ সদস্যসহ প্রায় অর্ধশত সাধারণ শ্রমিক আহত হয়। এ সময় পুলিশ উত্তেজিত হয়ে বহিরাগতদের লাঠিচার্জ করে। এতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।বিক্ষোভকারীরা বিসিকসহ আশপাশের ২০ থেকে ২৫টি কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। শিল্প মালিকদের কয়েকটি ব্যক্তিগত গাড়িসহ ১০ থেকে ১টি যানবাহন তারা ভাঙচুর করে। সংঘর্ষের ঘটনার কারণে বিসিক সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।
সকাল থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পর বিসিক শিল্পনগরীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।ফকির অ্যাপারেলসের শ্রমিকদের দাবি, গার্মেন্টস মালিক কোটি টাকা ব্যয়ে চায়না মেশিন আমদানি করেছে। এসব মেশিন দিয়ে একটি বিভাগে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক পোশাক তৈরি করে। মেশিনগুলো অনেক দ্রুত চলে। এতে শ্রমিকরা এক সেকেন্ডের জন্য অবসরের সময় পায় না।এ নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের দীর্ঘদিন ধরে দেনদরবার চলে আসছে। মালিকপক্ষ হয় মেশিনগুলো বন্ধ করে দেবে, আর নয়তো মজুরি বৃদ্ধি করবে। কিন্তু মালিকপক্ষ কোনো সিদ্ধান্তই মানছে না। উল্টো মালিকপক্ষের লোকজন শ্রমিকদের নির্যাতন করে। এতে শ্রমিকরা গত বুধবার থেকে ফুঁসে উঠে কর্মবিরতি শুরু করে। এর মধ্যে মালিক ও শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে পুলিশ একধিকবার বৈঠক করেও ব্যর্থ হয়।
শ্রমিক ইমন জানান, মালিক আমাদের কোনো দাবিই মেনে নেবে না। এ জন্য আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছি। কে বা কারা ভাঙচুর চালিয়েছে তা আমাদের জানা নেই।ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মঞ্জুর কাদের বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে ফকির নিটওয়্যারের মালিকপক্ষের উৎপাদন মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা ছিল। আজ শ্রমিকদের দাবি না মেনে তাদেরকে ছুটি প্রদান করায় শ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে গার্মেন্টস ভাঙচুর করে ও বিক্ষোভ মিছিল শুরু করলে পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। এতে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে আমিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদ নবী জানান, আমরা তাদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও তারা আমাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে আমরা তাদের লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেই। ক্ষয়ক্ষতি ও আহতদের সঠিক সংখ্যা পরে জানানো যাবে।বিকেএমইএ এর সাবেক সহসভাপতি ও বিসিক গার্মেন্ট মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, ঘটনাটি পরিকল্পিত। যারা বিসিক এলাকাতে প্রবেশ করতে পারেনি ওইসব শ্রমিক নেতাদের ইন্ধনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর পেছনে ভিন্ন কোনো কারণ আছে। শুধু বিসিকের শ্রমিকরা তা নয় বরং বাইরের অনেক শ্রমিক নেতারাও ছিলেন।