234961

লাপাত্তা হাওলাদার, রাঙ্গার গলায় ফুলের মালা

ফুল ছিটিয়ে নতুন মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাকে বরণ করে নিয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার প্রথম দিনেই নেতাকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিসিক্ত হলেন জাপার এই নতুন মহাসচিব।শুভেচ্ছা স্বাগতমে নতুন মহাসচিব রাঙ্গাকে স্বাগত জানানো হলেও এতদিনের প্রভাবশালী মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের কোন হদিস নেই। গুলশানের বাসায় গিয়েও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। গেটে বলা হয়েছে তিনি বাসায় নেই, কোথায় গেছেন তাও জানেন না এখানকার কর্মচারিরা। সকালে মোবাইল ফোন খোলা থাকলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বিকাল থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ। তার পিএস জসিম ও সোহেল কেউ ফোন ধরছেন না।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, জাপা মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর সারাদিন অনেক সাংবাদিক হাওলাদারের সঙ্গে দেখা করতে গুলশানের বাসায় যান। কিন্তু গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। কথা বলতে হবে এ ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি। তার বাসায় সুনসান নীরবতা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তার বাসায় যেখানে রাতদিন নেতাকর্মী গম গম করতো সেখানে নেতাকর্মীর কোন পদচারণা নেই। সমবেদনা জানাতেও কাউকে আসতে দেখা যায়নি। তার বাসা সংলগ্ন নিজের অফিসটিও ছিল সারাদিন তালামারা।জানা গেছে, মহাসচিবের পদ থেকে হঠাৎ অপসারিত হওয়ায় এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার নিজেই হতবাক। ভৃত্যের মতো যিনি এরশাদের আস্থাভাজন ছিলেন সেই এরশাদই তাকে না জানিয়ে কি করে এভাবে ছিটকে ফেললেন তা নিজেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। পার্টির চেয়ারম্যানের পর নিজেকেই জাতীয় পার্টির হর্তাকর্তা মনে করতেন হাওলাদার। এত প্রভাবশালী হওয়া সত্বেও তাকে মহাসচিব থেকে সরিয়ে দেন এরশাদ। আবারো পদ হারিয়ে চরম অপমানিত বোধ করছেন হাওলাদার। অপমানে হতাশায় মোবাইল বন্ধ করে গোপনে গুলশানের বাসায় চুপ করে আছেন তিনি, এমনটাই জানিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, মনোনয়ণ বাণিজ্য করে, যখন তখন যাকে ইচ্ছা বহিস্কার, আবিস্কার করে হাওলাদার যেভাবে অপকর্ম করেছেন নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের সামনে কোন সাহসে তিনি মুখ দেখাবেন। তিনি কোথাও যাননি, মোবাইল বন্ধ করে বাসায় আছেন। ইচ্ছা করে কারো সামনে ধরা দিচ্ছেন না। তাছাড়া বাইরে বেরুলে নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়বেন।এদিকে মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়ার পর সোমবার সকালে মশিউর রহমান রাঙ্গা প্রথমে দেখা করেন বিরোধীনেতা ও দলের জ্যেষ্ঠ কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের সঙ্গে। তাকে সালাম করে দোয়া নিয়ে বিকাল ৩টায় চলে আসেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বনানী কার্যালয়ে। এসময় তাকে নেতাকর্মীরা তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে বুকে বুক মেলান রাঙ্গা। দায়িত্ব পালনে নেতাকর্মীদের আন্তরিকতা পাশাপাশি সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

এসময় উপস্থিত ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. হাফিজ উদ্দিন, সুনীল শুভরায়, আজম খান, এটিইউ তাজ রহমান, মেজর (অব.) মো. খালেদ আখতার, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, একেএম মোস্তাফিজুর রহমান, মো. নোমান, সোমনাথ দে, মোর্শেদ মুরাদ ইব্রাহিম, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, ভাইসচেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, জহিরুল ইসলাম জহির, আলমগীর সিকদার লোটন, যুগ্ম মহাসচিব- গোলাম মোহাম্মদ রাজু, জহিরুল আলম রুবেল, দিদারুল কবির দিদারসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।পরে মশিউর রহমান রাঙ্গা সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখান থেকে আবার দেখা করতে যান বিরোধীনেতার বাসায়। রাতে কাকরাইলের দলীয় কার্যালয়ে আসার কথা থাকলেও রাঙ্গা আর আসেননি। নতুন মহাসচিব আসবেন মনে করে বিকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে মুখরিত ছিল দলের কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

হাওলাদারের অপসারণের ঘটনা ছিল সোমবার কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু। দলের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে মনোনয়ন বাণিজ্য, টাকার বিনিময়ে জেলা উপজেলা কমিটি দেওয়া, ত্যাগী নেতাদের বিভিন্ন সময়ে বহিস্কার, নিজের অনুগতদের পদায়ন ইত্যাদি হাওলাদারের অপকর্ম এর সমলোচনায় মুখর ছিলেন নেতাকর্মীরা। মহাসচিবের পদ থেকে অপসারণে খুশি অধিকাংশ নেতাকর্মী। নেতাদের অনেকেই উল্লাস প্রকাশ করেছেন। হাওলাদার অনুগত দলের যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক রাজ্জাক খানকে সারাদিন কাকরাইলের অফিসে দেখা যায়নি। মহাসচিবের নিজস্ব মানুষ হিসেবে নেতাকর্মীদের রোষানলের ভয়ে তিনি অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

তবে প্রতিদিনের মতো কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আড্ডা মারতে দেখো গেছে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন রাজু, সরদার শাহাজান, জহিরুল ইসলাম জহির, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, জহিরুল আলম রুবেল, মোস্তাকুর রহমান, হারুনুর রশিদ, দপ্তর সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, মহিলা পার্টির মনোয়ারা তাহের মানু, যুবসংহতির মোহাম্মদ আলমগীর, দ্বীন মোহাম্মদসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে।সন্ধ্যায় নতুন মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গার নেতৃত্বে দলকে শক্তিশালী করার জন্য তাৎক্ষনিক মতবিনিময় সভা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি জহিরুল আলম রুবেল। মহানগরীর বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ড ইউনিটের এর নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে এসময় রুবেল বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে অলি গলিতে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। যখন যেখানে প্রয়োজন দলের জন্য আমরা ছুটে যাবো। নতুন মহাসচিবের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর দক্ষিণকে এরশাদের দূর্গে পরিণত করতে হবে।এসময় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরীর নেতা আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু, জাহাঙ্গীর আলম, মাহবুবুর রহমান খসরু, মিনি খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ad

পাঠকের মতামত