
যদিও আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান,তবু কোটা সংস্কার আমিও চাই
জাফরিনা ইসলাম তুলি;
যদিও আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান,তবু কোটা সংস্কার আমিও চাই। এবার আন্দোলনের পূর্বেও এটা নিয়ে আন্দোলন হয়েছে।
আগে ছিল কোটা বিরোধী আর এখন সংস্কার।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী লাভবান হচ্ছে কি? ভেবে দেখবেন….
‘কোটা প্রথা বিরোধী আন্দোলন’ আর ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ এই দু’য়ের ভিতর পার্থক্য কি স্পষ্ট নয়? যাদের অবস্থান সরাসরি ‘কোটা বিরোধী’র কাতারে, তারা কিন্তু সরাসরি সংবিধান লঙ্ঘন করছেন। কেননা, সংবিধানের ২৯(৩) অনুচ্ছেদে সমাজের অনগ্রসর বা পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য (চাকরির ক্ষেত্রে) কোটা প্রথা প্রবর্তনের কথা উল্লেখ আছে।
আর যারা কোটা সংস্কারের কথা বলছেন, তাদের ভিতর অনেকেই ইনিয়ে বিনিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের মনোভাব পোষণ করছেন! এটি খুবই দুঃখজনক।
১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটা কি কার্যকর ছিল? ২১ বছর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার সবদিক থেকে বঞ্চিত ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের বা তাদের বংশধরদের এই সুযোগটুকু দিতে হবে।
অনগ্রসর জেলা বা অগ্রসর জেলার পার্থক্য যেখানে এখনও স্পষ্ট; সেখানে জেলা কোটা রহিতও বাঞ্ছনীয় নয়। ঠিক তেমনিভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। সরকার স্পষ্ট করেই বলেছে, ‘কোটা পূরণ না হলে শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া হবে মেধা তালিকা থেকে। এর পরেও আপত্তি কিসের?
লিখিত পরীক্ষায় যিনি পাশ করেন, আপনি তাকে মেধাবী বলবেন না? তারা কি অমেধাবী? প্রিলিমিনারী বা লিখিত পরীক্ষা পর্যন্ত কি কোটা প্রথা আরোপ করা হয়? লিখিত পরীক্ষা পর্যন্ত কিন্তু সবাই সমান সুযোগ পাচ্ছে, নাকি? তাহলে যারা প্রিলি, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হচ্ছেন- তারা কি মেধাবী নয়?
এই আন্দোলনের কিছু দিক ভাল করে খেয়াল করে যা পেলাম—
(১) সাধারণ ছাত্রছাত্রী অনেকে স্বেচ্ছায় আন্দোলনে নেমেছে।এটা আশা জাগানোর খবর।
(০২)স্বাধীনতার পক্ষের ,বিপক্ষের,ছাত্রলীগ, বাম,জামাত-শিবির করা ছেলে মেয়ে,ছাত্রদল বা অন্যান্য যারা আছে সবাই বঙ্গবন্ধুর আর শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ব্যানারে এক হয়েছে!
(০৩)জয় বাংলা স্লোগান এখন সবার, শুধু আওয়ামীলীগ বা তার অঙ্গসংগঠনের নয়,এখানে শিবির ছাত্রদল করা ছেলেটাও জয় বাংলা স্লোগান দিচ্ছে! এটাও একটু ভাবালো আমায়।
(০৪)উপরের তিনটা দিক মিলে হচ্ছে একটা টেকনিক। পিকে মুভির মত। আমির খান থাপ্পর খাওয়া থেকে বাচার জন্য যেমন দেবতাদের ছবি গালে লাগিয়ে ছিল,তেমনি জামাত বিএনপি ছাত্রদল শিবির করা ছেলে মেয়েটাও আজ জয় বাংলা স্লোগান দিচ্ছে,সাথে বঙ্গবন্ধুর ছবিও শোভা পাচ্ছে তাদের হাতে।
(০৫)কোটা সংস্কার বলতে এরা শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটার সংস্কার চায়! অথচ আরও অনেক কোটা রয়েছে অগুলো নিয়ে আওয়াজ তাদের কম।
(০৬)এই আন্দোলনটা শুরু হয় নির্বাচনের বছর।আগেরটাও এমন নির্বাচনের পূর্বে হয়ছিল। কিন্ত সরকারের মাঝখানের বছরগুলোতে কেন করা হলনা?
কোটা- সংস্কারের দাবী আপনি করতেই পারেন। এ দাবি আমি অযৌক্তিক মনে করছি না। সময় নির্ধারণ করে দিবে কখন কোটার সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নামে “ঘোলা পানিতে মাছ শিকার” করতে আসছেন কিনা- ভেবে দেখবেন। কেননা এই আন্দোলনের ইতিবাচক লোকের পাশাপাশি প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের উপস্থিতিও দৃশ্যমান। আপনি নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না যে, এখানে সবাই প্রগতিশীল ঘরানার।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যারা বাংলাদেশকে পিছিয়ে নিতে চায়- তারা কোনোভাবে এখন আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। নির্বাচনের বছরে ‘কোটা বিরোধী আন্দোলন’ বা ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’কে ছাতা হিসেবে ব্যবহার করছে না তো সেই প্রতিক্রিয়াশীলগোষ্ঠী?
(০৭)সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ব্যানারে একটা নির্দীষ্ট দলের কেন ছবি বা স্লোগান?
নিরপেক্ষ ভাবে কেন করা হলনা।
(০৮)এটা নিয়ে কি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করা হচ্ছে। কারন বিগত কয়েকদিন আগেই যেখানে বলা হয়েছে মেধাবীদের দিয়ে শুন্য পদগুলো পূরণ করা হবে।তবে আর সমস্যা কোথায়!
আমিও চাই কোটা পদ্ধতি কিছুটা শীতিল করা হোক।চাকরি ক্ষেত্রে বয়স ৩২ করা হোক। কিন্ত এটা নিয়ে যেন কেউ অন্যকোন উদ্দেশ্য হাসিল করতে না পারে সেদিকেও সজাগ থাকা দরকার।
শুভ কামনা আপনাদের জন্য।
[বি:দ্র:সকল মতামত লেখকের একান্ত নিজস্ব ,এর জন্য বাংলালাইন২৪ দায়ী থাকবে না।]