
কেয়ামতের আগে সামাজিক অবক্ষয় চিত্র
নিউজ ডেস্ক : কেয়ামত অবধারিত বিষয় পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে, একদিন ধ্বংস হবে। মহান আল্লাহ তায়ালার এই ঘোষণা চিরন্তন। হাদিসে এই দিনটি আসার বেশ কিছু আলামত বা নিদর্শন বর্ণনা করা হয়েছে। সেই নিদর্শগুলোর মধ্যে কিছু রয়েছে ছোট নিদর্শন আর কিছু বড় নিদর্শন। ছোট নিদর্শনগুলো কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার অনেক আগেই প্রকাশিত হবে। এর মধ্যে কিছু নিদর্শন প্রকাশিত হয়েও গেছে, অব্যাহতভাবে আরও প্রকাশিত হচ্ছে। আর কিছু নিদর্শন এখনো প্রকাশ পায়নি। কিন্তু অচিরেই সেগুলো প্রকাশ পাবে, যেমনটা বিভিন্ন হাদিসে এসেছে। কেয়ামতের কিছু ছোট নিদর্শন: ১. হত্যা ও মারামারি বৃদ্ধি পাওয়া : নবীজি (সা.) বলেন, ‘হরজ বৃদ্ধি না পাওয়া পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না। সাহাবিগণ জিঙ্গেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! ‘হরজ’ কি? তিনি উত্তরে বললেন, ‘হত্যা’ (বুখারি.১০৩৬) ২. সুদ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়া : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে, সুদ ছড়িয়ে পড়া।’ (বুখারি) ৩. মদপানের প্রবণতা বেড়ে যাওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে মদপান বেড়ে যাওয়া।’ (মুসলিম: ৪৮৩১) ৪. জিনা-ব্যভিচার বেড়ে যাওয়া: নবীজি (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে, ইলম উঠিয়ে নেওয়া। মানুষের মধ্যে অজ্ঞতা এবং মদপান ছড়িয়ে পড়া।
জিনা-ব্যভিচার ব্যাপকভাবে প্রকাশ পাওয়া।’ (মুসলিম: ৪৮৩১) ৫. পিতা-মাতার অবাধ্যতা: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘সন্তানের মধ্যে পিতা-মাতার অবাধ্যতা ব্যাপকভাবে দেখা দেবে। সন্তান তার মায়ের সঙ্গে এমন অবমাননাকর ও অসম্মানজনক আচরণ করবে, যা একজন মনিব তার দাসীর সঙ্গে করে থাকে।’ (বুখারি:৫০) ৬. জ্ঞান উঠে যাওয়া ও ভূমিকম্প হওয়া: রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না ইলম (জ্ঞান) উঠে যাবে, ভূমিকম্প বেড়ে যাবে, সময়ের বরকত উঠে যাবে, ফিতনা-ফাসাদ চরম আকার ধারণ করবে আর অন্যায় হত্যাকা- বেড়ে যাবে এবং প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ বেড়ে যাবে। (বুখারি: ১০৩৬) ৭. হত্যাকারী নিজেও জানবে না কেন সে হত্যা করল।
এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, ততক্ষণ পর্যন্ত পৃথিবী ধ্বংস হবে না, যতক্ষণ না এমন পরিস্থিতি হবে যে, হত্যাকারী নিজেও জানবে না, কেন সে লোকটিকে হত্যা করল আর নিহত ব্যক্তিও জানবে না যে তাকে কেন হত্যা করা হলো।’ (মুসলিম: ২৯০৮) ৮. আমানতের খেয়ানত: রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেন, ‘যখন আমানতদারি উঠে যাবে, তখন তোমরা কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার অপেক্ষা কর। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমানতদারি কিভাবে উঠে যাবে?’ আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমানতদারি উঠে যাওয়ার একটি উদাহরণ হচ্ছে, ‘যে ব্যক্তি যে দায়িত্ব পালনের যোগ্য নয়, তাকে সে দায়িত্ব দেওয়া হবে।’ (বুখারি: ৬৪৯৬) নিচের এ হাদিসে কেয়ামতের আগে সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন লোকেরা গণিমতের মালকে নিজের সম্পত্তি বুঝবে, গচ্ছিত আমানতকে নিজের সম্পদ মনে করবে, জাকাত দেওয়াকে অত্যন্ত ভারী বোধ করবে, দীনের ইলন ছেড়ে অন্য জ্ঞান চর্চা করবে, পুরুষ স্ত্রীর তাবেদারি করবে, সন্তানরা নিজ মায়ের নাফরমানি করবে, বন্ধুবান্ধবকে নিকট আত্মীয় বলে ধারণা করবে আর নিজ পিতাকে দূরবর্তী লোক বলে বুঝবে, মসজিদে উচ্চস্বরে দুনিয়াবি কথাবার্তা হবে, অপরাধী লোক সমাজের সর্দার হবে, সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট লোক সমাজের কার্যভারপ্রাপ্ত হবে, জালিমকে তার জুলুমের ভয়ে লোকজন সম্মান করবে, গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্র প্রচুর পরিমাণে বিস্তার লাভ করবে, প্রচুর পরিমানে মদপান করা হবে, পরবর্তী লোকের পূর্বপুরুষদের মন্দ বলবে, তখন তোমরা এরূপ বিপদের অপেক্ষা করতে থাকবে, লাল বর্ণের প্রচ- বায়ু অথবা ভূমিকম্প হবে, জমিন দেবে যাবে, লোকের রূপান্তর হওয়া, পাথর বর্ষিত হওয়া ইত্যাদি দেখা যাবে, আরো অনেক বিপদ-আপদ এমনভাবে উপর্যুপরি আসতে থাকবে, যেমন মণিমুক্তার মালা ছিঁড়ে গেলে দানাগুলো ধারাবাহিকভাবে খসে পড়তে থাকে।’ (তিরমিজি: ২২১০, ২২১১; বুখারি: ৮১) এছাড়া বিভিন্ন হাদিসে কেয়ামতের আগে মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অবক্ষয়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।