207715

কানাডায় পৌঁছেছে ব্ল্যাকবক্স

নেপালের কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট ‘ব্ল্যাকবক্স’ কানাডায় পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইউএস-বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম। তিনি সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘এটা উদ্ধার করতে তিন দিন সময় লাগে। সেটা হাতে পেয়ে নেপাল কর্তৃপক্ষ অলরেডি পরীক্ষার জন্য কানাডায় পাঠিয়ে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ব্লাকবক্স ও সিভিআর দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। এটা নিয়ে অলরেডি কাজ চলছে। এটার উপরেই নির্ভর করছে, দুর্ঘটনার আগে মূল ঘটনা কী ছিল।’

তিনি আরো বলেন, এটার সাথে জড়িত বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন বা বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচক, নেপাল সিভিল অ্যাভিয়েশন ও ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন। সবাই সম্মিলিতভাবে এটা নিয়ে কাজ করছে।’

এর আগে আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান বলেছিলেন, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ব্ল্যাকবক্স (বিমানে সংরক্ষিত ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার) কানাডায় পাঠাবে নেপাল। কারণ তাদের এটা পরীক্ষা করার সরঞ্জামাদি নেই। ব্ল্যাকবক্সের তদন্তের রিপোর্ট পেতে সময় বেশি লাগতে পারে।

তদন্ত প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ার কারণ হিসেবে এম নাইম হাসান বলেন, ব্ল্যাকবক্স, ককপিটের ভয়েস রেকর্ডার, ইকুইপমেন্ট টেস্টসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন উপাদান আসতে পারে। সেগুলো একত্রিত করতে দীর্ঘ সময় লাগবে।

তিনি আরো বলেন, নেপাল তদন্ত করবে। আমরা হয়তো তাদের কাজের সহযোগিতা করবো। এখন থেকে নিয়মিত তাদের এভিয়েশন অথরিটির সাথে যাতায়াত থাকবে, কাজ চলবে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। তদন্ত কি হবে না হবে এব্যাপারে বলার মতো কিছু নেই এই মুহূর্তে।

তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত শেষ করার পরে নিহতদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াটা শুরু হবে। এটা জটিল একটা প্রক্রিয়া। কেননা উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের কারণে নিহতদের অধিকাংশকে চেনার উপায় নেই। তাই তাদের আত্মীয়দের কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে জানা হচ্ছে, শরীরের কোথায় কোনো চিহ্ন বা দাগ আছে কি না। এটা জেনে নিহতদের লাশ চিহ্নিত করে হস্তান্তর করবে। তাই তারা তিন-চার দিন সময় নিয়েছেন। তবে আমরা আশা করছি, তার আগেই নিহতদের লাশগুলো ফেরত পাবো।

উল্লেখ্য, নামে ব্ল্যাক বক্স হলেও ফ্লাইট রেকর্ডার কিন্তু আসলে কালো কোনো বাক্স নয়। বরং এর রঙ অনেকটা কমলা ধরনের। এটি অত্যন্ত শক্ত ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি একটি বাক্স, যা পানি, আগুন, চাপ ও উচ্চ তাপমাত্রাতেও টিকে থাকে।

এটি মূলত দুইটি অংশের সমন্বয়ে তৈরি একটি ভয়েস রেকর্ডার। বিমান চলাচলের সময় সব ধরনের তথ্য এটি সংরক্ষণ করে রাখে।

এর মধ্যে দুই ধরনের তথ্য সংরক্ষিত থাকে। একটি হলো ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার (এফডিআর) যেটি বিমানের ওড়া, ওঠানামা, বিমানের মধ্যে তাপমাত্রা, পরিবেশ, চাপ বা তাপের পরিবর্তন, সময়, শব্দ ইত্যাদি নানা বিষয় নিজের সিস্টেমের মধ্যে রেকর্ড করে রাখে।

ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর) নামের আরেকটি অংশে ককপিটের ভিতর পাইলদের নিজেদের মধ্যেকার কথোপকথন, পাইলটদের সঙ্গে বিমানের অন্য ক্রুদের কথাবার্তা, ককপিটের সঙ্গে এয়ার কন্ট্রোল ট্রাফিক বা বিভিন্ন বিমানবন্দরের সঙ্গে রেডিওতে হওয়ায় কথোপকথন রেকর্ড হতে থাকে।

ফলে, কোনো বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে এই ব্ল্যাকবক্সটি খুঁজে বের করাই হয়ে পড়ে উদ্ধারকারীদের প্রধান লক্ষ্য। কারণ এটি পাওয়া গেলে সহজেই ওই দুর্ঘটনার কারণ বের করা সম্ভব হয়।

বাক্সটির রঙ উজ্জ্বল কমলা হওয়ায় সেটি খুঁজে পাওয়া সহজ হয়। সমুদ্রের তলদেশেও ৩০ দিন পর্যন্ত ব্ল্যাক বক্স অক্ষত থাকতে পারে।

ad

পাঠকের মতামত