207709

যেভাবে নৃশংষতার পথ বেছে নিল ফয়জুর : বাবার স্বীকারোক্তি

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড: মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ফয়জুর রহমান ওরফে ফয়জুল হাসানের বাবা হাফিজ আতিকুর রহমান ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আদালতে। ফয়জুরের মামা সুনামগঞ্জ জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলুর রহমানকে রিমান্ড শেষে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে মহানগর হাকিম তৃতীয় আদালতে ফজলুর রহমানকে হাজির করা হলে বিচারক হরিদাস কুমার তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এসময় ফয়জুরের বাবা হাফিজ আতিকুর রহমান আগ্রহ প্রকাশ করলে ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন ওই বিচারক।

সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে ফয়জুরের বাবা আতিকুর রহমান আদালতকে বলেন, গত ৩-৪ বছর ধরে ফয়জুরের আচরণে পরিবর্তন আসে। একসময় সে সুন্নী মতাদর্শে বিশ্বাসী হলেও ওই সময় থেকে সে তা থেকে দূরে সরে যায়। ‘লা মাযহাবী’ মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে সে। তবে, তার সাথে কোন জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা আছে এমন কোন তথ্য তাদের কাছে নেই বলে আদালতকে অবগত করেন ফয়জুরের বাবা।

এর আগে গত রোববার একই আদালতে ফয়জুরের মা, বাবা ও মামাকে হাজির করে তদন্তকারী কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার ওসি শফিকুল ইসলাম প্রত্যেকের ১০ দিনের করে রিমান্ডের আবেদন জানান। শুনানি শেষে আদালত বাবা ও মামার পাঁচদিন ও মা মিনারা বেগমের দুইদিনের করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে গত মঙ্গলবার মিনারা বেগমকে কারাগারে পাঠানো হয়। ফয়জুরের মা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বলেও জানান ওসি শফিকুল ইসলাম। এর আগে গত ৮ মার্চ হামলাকারী ফয়জুরের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। হেফাজতে নিয়ে পুলিশ এখনো তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

উল্লেখ্য, গত ৩ মার্চ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে একটি অনুষ্ঠান চলাকালে ফয়জুর রহমান ওরফে ফয়জুল হাসান অধ্যাপক ড: মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপর ছোরা নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় গুরুতর আহত জাফর ইকবালকে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার মাথা, ঘাড় ও হাতে অস্ত্রোপচারের পর ওই রাতেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যোগে তাকে ঢাকা সিএমএইচে পাঠানো হয়।

ঢাকা ফিরে গেলেন জাফর ইকবাল
প্রিয় ক্যাম্পাসে সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করে ঢাকায় ফিরে গেছেন অধ্যাপক ড: জাফর ইকবাল। বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া একটায় বেসরকারী একটি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে তিনি সিলেট ত্যাগ করেন। এর আগে ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১১ দিন চিকিৎসা নিয়ে বুধবার দুপুরে তিনি সিলেট যান। বিকেল ৪টায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের যে মুক্তমঞ্চে তার উপর হামলা হয়েছিল সেই মঞ্চে বক্তব্য রাখেন। সন্ধ্যায়ও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্যাম্পাস ত্যাগের আগে জাফর ইকবাল আবারো কৃতজ্ঞতা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। হামলার পর তার প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার যে ভালোবাসা দেখিয়েছে তা কখনো ভুলার নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জাফর ইকবাল বলেন, ‘যেভাবে আমার উপর হামলা হয়েছে তাতে খুব সহজে বেঁচে আসার কথা ছিল না। অসংখ্য মানুষের দোয়ার কারণেই আমি বেঁচে ফিরেছি। ক্যাম্পাসে ফেরার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েরা আমাকে অনেক চিঠি দিয়েছে। আমি সেগুলো পড়েছি। তাদের সেই ভালোবাসার প্রতিদান দেয়া আমার পক্ষে কোনদিনও সম্ভব হবে না। যেহেতু আমি নতুন জীবন পেয়েছি, তাই জীবনের বাকি সময়ে আমি যাতে ছেলে-মেয়েদের জন্য ভালো কিছু একটা করতে পারি সে শক্তি ও সুযোগ যেন আল্লাহ আমাকে দেন।’

নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাফর ইকবাল বলেন, এ দেশের জন্য অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছে। আমাদের দেশটা খুব সুন্দর। ওরা (নতুন প্রজন্ম) দেশটাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসুক, দেখবে দেশও ওদেরকে ভালবাসবে।’

ad

পাঠকের মতামত