207463

‘মা কই, আমি মায়ের কাছে যাব’

‘আমি মায়ের কাছে যাব, মা কই’ এই বলে বারবার কেঁদে উঠছে নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তা উম্মে সালমার আড়াই বছরের মেয়ে সামারা বিনতে মাসুদ। মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার বেইলি রোডের বেইলি স্কয়ারে গিয়ে দেখা যায় ছোট্ট শিশুটি তার মাকে এভাবে খোঁজ করছে।

বাসার পরিবারের অন্যরাও শুধু মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বলছেন, আম্মু আসছে তো। আর কান্নাকাটি করো না। কিন্তু তখন পর্যন্ত এ অবোধ শিশুটি জানে না তার মা দুনিয়াতে নেই। আর কখনো তাকে আদর করে চুমু খাবে না। ডে-কেয়ার সেন্টারে এসে বারবার খাওয়াবে না।

নিহত উম্মে সালমা বেইলি স্কয়ারের একটি সরকারি কোয়ার্টারের তিন তলায় থাকেন। তার সঙ্গে বৃদ্ধ শাশুড়ি, ননদসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন থাকতেন। বিয়ের ৭ বছর পর অনেক চেষ্টার মাধ্যমে পৃথিবীতে আসে সামারা। এ মেয়েকে ঘিরেই ছিল তার সব স্বপ্ন। তাছাড়া শ্বশুরবাড়ির সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিলেমিশেই থাকতেন।

তার ননদ সামিনা আকতার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ভাবি আমাদের অনেক আদর করতেন। সর্বশেষ সোমবার দুপুর ১২টা ৩ মিনিটে আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, একটু পরেই প্লেন ছেড়ে দেবে। দোয়া করো। যাওয়ার আগের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে থাকা ভাসুরের মেয়ে প্রিয়াকে ফোন করে বলেছিলেন, আমি নেপাল যাচ্ছি, তুমি এ ক’দিন মেয়েটাকে একটু দেখে রেখ। হল থেকে বাসায় চলে এসো। মঙ্গলবার প্রিয়ার কোলেই ছিল সামারা। তার সঙ্গে কাঁদছেন তিনিও। কিন্তু সামারার আম্মু কই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেন না।

উম্মে সালমা ১৯৭৯ সালের ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৫ সালে এসএসসি, ১৯৯৭ সালে এইচএসসি এবং ২০০৪ সালে বুয়েট থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি সাধারণ অর্থনীতি বিভাগে সহকারী প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার স্বামী মোহাম্মদ মাসুদ উদ্দিন ভূঁইয়া মঙ্গলবারই নেপালে গেছেন।

সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, ‘উম্মে সালমা ইঞ্জিনিয়ার হলেও এত মেধাবী ছিলেন যে তাকে দিয়ে আমি অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অনেক কিছুই লেখাতাম। একটু বুঝিয়ে দিলেই সব বুঝে যেত।’

তার মৃত্যুতে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এ কর্মকর্তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

ad

পাঠকের মতামত