
শফিকুলকে রশি দিয়ে বেঁধে বাঁশে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়
চুরির অপবাদে নওগাঁর পত্নীতলায় এক যুবককে পায়ে রশি দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে বেধড়ক পেটানোর কথা স্বীকার করেছে নির্যাতনকারীদের দুজন।
সোমবার বিকেল পৌনে চারটায় নওগাঁ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির মাধ্যমে তারা ঘটনা স্বীকার করে নেন।নির্যাতনের শিকার যুবকের নাম শফিকুল ইসলাম (৩৫)।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা নির্যাতনের ঘটনা স্বীকার করায় সোমবার আদালতে পাঠানো হয়।পত্নীতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
নির্যাতনকারীরা হলেন ভগবানপুর গ্রামের এজাবুল হোসেনের ছেলে ও উপজেলার আকবরপুর ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবাকেন্দ্রের উদ্যোক্তা নুরুন্নবী এবং উপজেলার গোয়াল গ্রামের অছিম উদ্দীনের ছেলে এবং ওই ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ সদস্য মোজাফফর হোসেন।
রোববার বিকেলে ও রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেও নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেন তারা। জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ওসি বলেন, চোর সন্দেহে বাজারের মধ্য থেকে ধরে এনে দড়ি দিয়ে শফিকুলের দুই পা বাঁধে আকবরপুর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ মোজাফফর হোসেন। এরপর বাঁশে উল্টো করে ঝুলিয়ে লাঠি দিয়ে উপর্যুপরি মারপিট করে ওই ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা নূরন্নবী।
রোববার বিকেলে নুরুন্নবী ও মোজাফফর হোসেনকে আটকের পর রাতে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা উভয়ে শফিকুল ইসলামকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছেন।
ওসি জানান, নির্যাতিত শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে রাতেই নূরন্নবী ও মোজাফফরসহ চারজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন।
শফিকুল ইসলামকে চিকিৎসার জন্য রাতেই পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
বাকীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
নির্যাতিত শফিকুল ইসলামের চাচাতো ভাই জহুরুল ইসলাম বলেন, গেলো শুক্রবার রাত আটটার দিকে শফিকুল গুরুতর আহত অবস্থায় বাড়ি ফিরেন। তার সমস্ত শরীরে নির্যাতনের দাগ ছিল। কি হয়েছে বারবার জিজ্ঞেস করলেও সে কিছু বলেনি। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার কথা বলা হলেও সে হাসপাতালে যেতে রাজি হয়নি। অবশেষে গতকাল রোববার বিকেলে পুলিশ বাড়িতে এলে প্রকৃত ঘটনা জানতে পারি।
প্রসঙ্গত, গেলো শুক্রবার উপজেলার আকবরপুর ইউনিয়নের মধইল হাটের দিন ছিল। সেখানে শফিকুল একজনের পকেট মারে এ সন্দেহে সেখানকার স্থানীয়রা তাকে উত্তম মধ্যম দিয়ে প্রথমে ছেড়ে দেয়।
পরবর্তীতে আবারো শফিকুল ইসলামকে নুরুন্নবী ও মোজাফফরসহ কয়েকজন মিলে ডেকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে উল্টো করে বাঁশে ঝুলিয়ে অমানুষিকভাবে নির্যাতন চালায়।
এরপর আদনান রহমান নামে এক ব্যক্তি সেটির ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করে। আদনান রহমান তার আইডিতে ক্যাপশনে লেখেন- ‘নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার আকবরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এভাবেই বেধড়কভাবে পেটানো হয় পকেটমারকে।
আইনের হাতে তুলে না দিয়ে এভাবে অমানুষের মতো পেটানো কখনই যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না।’
ভিডিও আপলোডের পরপরই ঘটনাটি নিয়ে পুরো জেলায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে রোববার দুপুরে পুলিশ প্রশাসন মাঠে নামে।
অবশেষে বিকেল চারটার দিকে ওই ঘটনার মূলহোতা অভিযুক্ত নুরুন্নবী নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে এবং রাতে আটক করে গ্রাম পুলিশ সদস্য মোজাফফর হোসেনকে।
এদিকে ভিডিওতে দেখা যায়, শফিকুল ইসলামের দুই পা প্রথমে বাঁধেন এক ব্যক্তি। তারপর দুই পায়ের মাঝ দিয়ে বাঁশ ঢুকিয়ে দুজনে কাঁধে নিয়ে উল্টো করে উঁচু করে ঝুঁলিয়ে রাখা হয় তাকে।
কালো গেঞ্জি পরিহিত নুরুন্নবী লাঠি দিয়ে শফিকুলের পায়ের তালুতে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। একপর্যায়ে শফিকুল লাঠির আঘাতের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নির্যাতনকারী নুরুন্নবীর পা জড়িয়ে ধরে আকুতি মিনতি করেন। এরপরও নুরুন্নবী তাকে পেটাতে থাকেন এবং লাথি মারতে থাকেন।