201219

ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত জাতি

মা, মাটি আর মাতৃভাষা- এই তিনটি আবেগময় শব্দ বাংলার মানুষের সত্তায় মিশে আছে। হয়তো এ জন্যই রক্ত দিয়ে মাতৃভাষা বাংলা রক্ষায় গর্বিত জাতি বাঙালি। ভাষার জন্য এই রক্তদান পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও। দাবি ছিল, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার। সেই দাবি এগিয়ে নিতে গিয়ে বায়ান্নয় এ দেশের দামাল ছেলেরা আত্মোৎসর্গ করে। মূলত এতেই একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জনের বীজ নিহিত ছিল।

আর তাই বায়ান্নর একুশ আমাদের অহংকার, একুশ আমাদের চেতনা। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে প্রস্তুত গোটা জাতি। জাতির সূর্য সন্তানদের বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণের অপেক্ষা।

ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে। প্রস্তুত শহীদ বেদি। শহীদদের বুকের তাজা রক্তের প্রতিচ্ছবি হিসেবে রক্তিম লাল রঙে রাঙানো হয়েছে শহীদ মিনারের পাদদেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীরা আলপনা আঁকার কাজও শেষ করেছেন।

একুশের চেতনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে শহীদ মিনার ও এর আশপাশে আঁকা হয়েছে দেয়ালচিত্র। সেখানে তুলে ধরা হয়েছে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস।

মঙ্গলবার সকালে সরজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের প্রবেশমুখসহ চারপাশ বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কেউ যেন ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। চারপাশে বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই একুশের প্রথম প্রহরে মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

এরপর স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, কূটনৈতিক কোরের সদস্যবৃন্দ, বিরোধীদলীয় নেতা পুষ্পস্তবক অর্পণের পর শহীদ মিনার চত্বর সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে।

এ সময় একে একে রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, পেশাজীবীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

অন্যদিকে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সক্রিয় রয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এবার শহীদ মিনারকে ঘিরে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। নেয়া হয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঘোষণা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাতায়াতের পথনির্দেশিকাও।

ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনকে কেন্দ্র করে শহীদ মিনার এলাকায় কোনো ধরনের নিরাপত্তা হুমকি নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

তিনি বলেন, কোনো ধরনের নাশকতা ও হামলার আশঙ্কা না থাকলেও ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনার ও এর আশপাশের এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে।

আছাদুজ্জামান মিয়া আরও বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত শহীদ মিনার ও এর আশপাশের এলাকায় কোনো যানবাহন ঢুকতে দেয়া হবে না।

তিনি বলেন, শহীদ মিনার এলাকায় ইউনিফর্ম পুলিশের পাশাপাশি আমাদের সাদা পোশাকের গোয়েন্দা বাহিনীও দায়িত্বে থাকবে। নির্দিষ্ট গেট দিয়ে তল্লাশির মধ্য দিয়ে সবাইকে প্রবেশ করতে হবে।

ভিআইপি ব্যক্তিরা মৎস্য ভবন হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীর চর্চা কেন্দ্রের সামনে গাড়ি রেখে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।

অন্যদিকে একুশে ফেব্রুয়ারিতে কোন ধরনের জঙ্গিবাদী কার্যক্রম যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে বলে জানান র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র‍্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।

তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারিতে কোনো ধরনের জঙ্গিবাদী কার্যক্রম যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে র‍্যাব যে কোনো দায়িত্ব পালন করে থাকে। তবে জঙ্গি দমনই র‍্যাবের প্রধান লক্ষ্য, যা থেকে আমরা কখনোই বিচ্যুত হব না।

বেনজীর আহমেদ বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় আমাদের কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেখান থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো এলাকা মনিটরিং করা হবে। এছাড়া বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড ও স্পেশাল ইউনিটও প্রস্তুত থাকবে।

তিনি জানান, পোশাকধারী সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও র‍্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে শহীদ মিনার এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হবে।

ad

পাঠকের মতামত