197326

৮-এ ধর্ষণ, ১০-এ গর্ভবতী, ১১-তে বিয়ে, অতঃপর…

ফ্লোরিডার এক কালো চামড়ার নারীর কথা। তিনি সেই শিশু বয়সে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। থেকে বড় হয়েছেন দুর্বিষহ জীবন নিয়ে। গোটা জীবনজুড়ে তাকে নিয়ে ছিল মানুষের বিতর্ক আর অপবাদ।

দুটো বাক্যে তার সেই হৃদয়বিদারক জীবনের চিত্রটা তুলে ধরা যায়। মাত্র ৮ বছর বয়সে ধর্ষণের শিকার শিশুটি পরে মাত্র ১০ বছর বয়সেই গর্ভবতী হয়ে পড়ে। স্কুলজীবন শেষ হয়ে যায় তার। পরে বয়স যখন ১১, তখন জোরপূর্বক সেই ধর্ষকের সঙ্গেই বিয়ে দেওয়া হয় তাকে।

এরপর বছরের পর বছর কেটেছে। তিনি জড় পদার্থের মতো নিশ্চুপ জীবন কাটিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ সংগ্রামের পর তার এখন সময় এসেছে শেরি জনসনের। তার কণ্ঠ এখন প্রকম্পিত হয় আদালতের দেয়ালে। বাল্যবিবাহ রোধের তার কণ্ঠ ধ্বনিত হচ্ছে সেই আমেরিকায়।

পাতলা, শক্ত কোঁকড়ানো চুলে ঢাকা ৫৮ বছর বয়সী পোড় খাওয়া নারীর। তিনি ক্যাপিটল ভবনের করিডোর ধরে হেঁটে যান আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে, তার দু চোখ উপচে পড়ে ক্ষোভ আর প্রতিজ্ঞা।

২০১৮ সালের মার্কিন আইনসভার সেশনে এক শীতের সকালের শেরিল দেখা করলেন স্টেট সিনেটর লরেন বুকের সঙ্গে। এই সিনেটর বাল্যবিবাহ বাতিল বিলের একজন পৃষ্ঠপোষক। তার সঙ্গেই একই কাজে এগোবেন শেরিল।

নিজের শৈশবে যে অত্যাচার ও দুঃস্বপ্ন তাকে বয়ে চলতে হয়েছে তা যেন আর কোনো শিশুর ভাগ্যে না আসে তার জন্যে বিগত ৫ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন শেরিল। তিনি মার্কিন মুলুকের আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে কাজ করছেন। ২০১৪ সালে একবার ১৬ বছরের কম বয়সীদের বিয়ের প্রতিরোধে একটি বিল উঠেছিল ফ্লোরিডা হাউজে। কিন্তু পরে এটা সিনেটের কোথাও পৌঁছেনি। কিন্তু শেরিলের কণ্ঠ এখন বধিরের কান অবধি পৌঁছেছে। এর আগ পর্যন্ত তার জন্যে সমস্ত দরজাই বন্ধ ছিল।

শুনতে অবাক লাগলেও এটই সত্যি যে, ফ্লোরিডা আমেরিকার প্রথম অঙ্গরাজ্য যেটা বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। তাদের হাতে ধরে দাঁড় করিয়েছেন শেরিল। সেখানে আইন সবার জন্যে প্রযোজ্য করা হয়েছে। বিশেষ গোত্রের জন্যেও এর ব্যত্যয় ঘটবে না। গত বছর তার দেখানো পথে হাঁটতে শুরু করেছে টেক্সাস এবং ভার্জিনিয়া। নতুন আইনে তারা আর ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবে না।

কাজ করে যাচ্ছে শেরিল। এখন তার কাজের কোনো সীমা নাই। ব্যস্ততাও কখনও শেষ হবে না। বিশ্বজুড়ে শিশুদের যৌন নির্যাতন আর বিয়ে প্রতিরোধে তিনি কাজ করে যাবেন। সিনেট অফিস ভবনের ২০২ নম্বর স্যুইট থেকে যেদিন শেরিল বেরিয়ে আসছিলেন, সেদিন তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন লরেন। সাইথ ফ্লোরিডার এই ৩৩ বছর বয়সী সিনেটর বুঝতে পারছিলেন, কালো চামড়ার নির্যাতিত সেই শিশুটি আজ হয়তো মার্কিন মুলুকের ভবিষ্যত প্রজন্মের জীবন বাঁচিয়ে দিলেন।

ad

পাঠকের মতামত