খালাস পাবেন, খালেদাকে আইনজীবীদের আশ্বাস
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তৃতীয় দিনের যুক্তি উপস্থাপন শেষে আগামী ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য করেছে আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকার বকশিবাজারস্থ অস্থায়ী আদালতে ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এ তারিখ ঠিক করেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার আদালতের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর আইনজীবীরা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উভয় মামলায় খালাসের বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। অন্যদিকে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী আদালতের কার্যক্রমের পর প্রায় ২৫ মিনিট আদালত কক্ষে অবস্থান করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে খালেদা জিয়া ওই আদালতে উপস্থিত হন। তিনি আসার পর ১১টা ৩০ মিনিটে বিচারক এজলাসে উঠেন।মামলার কার্যক্রমের প্রথমে আসামি জিয়াউল হক মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম তদন্ত কর্মকতা হারুন অর রশিদকে জেরার বক্তব্য দিয়ে তৃতীয় দিনের যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, ১৯৯৩ সালে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠন হয়। ডা. বদরুদ্দৌজা চৌধুরি, মতিন চৌধুরি, মোস্তফিজুর রহমানসহ সাত জনে মিলে এ ট্রাস্ট গঠন করেন। এ ট্রাস্টের নামে সোনালী ব্যাংক ফকিরাপুল শাখায় একটি হিসাব খোলা হয়। যেখানে নেতা-কর্মীরা ডোনেট করতেন। বদরুদ্দৌজা চৌধুরী দল ছাড়ার পর নেত্রী ওই ট্রাস্টই নতুন করে ২০০৪ সালে রেজিস্ট্রার্ড ট্রাস্ট হিসেবে গঠন করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় শাখায় একটি একাউন্ট খোলেন। এরপর ২০০৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ফকিরাপুলের পূর্বে হিসাব থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় শাখায় টাকা আসে। এখানে অপরাধ কোথায়?’
তিনি বলেন, ‘দুদক আইন অনুযায়ী দুদকের কোন কর্মকর্তাকে কোন মামলার তদন্তের দায়িত্ব দিতে হলে তা গেজেট প্রকাশ করতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এটা করা হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তা তা আদালতে জেরায় স্বীকারও করেছেন। বিজ্ঞ আদালত হয়তো বলবেন আপনারা এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গিয়ে সফল হননি। আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গিয়ে সফল না হলেও মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মামলায় তাকে শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি এই কারণে মামলা কোয়াশ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মাননীয় আদালতকে বিষয়টি শুধু জানালাম। শরিফুল ইসলাম পচা নামে বিএনপির এক নেতা ফান্ডে ৫০ হাজার টাকা ডোনেট করেন। সেই নেতা মারা গেছেন বলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি মর্মে তদন্ত কর্মকর্তা জেরায় বলেছেন। অথচ সেই শরিফুল ইসলাম পচা আজও বেঁচে আছেন। তাহলে তিনি কি তদন্ত করলেন। ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের সরকার এই ট্রাস্টে দুর্নীতির গন্ধ না পেলেও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই দুর্নীতির গন্ধ পেলেন।’
আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘চার্জশিটে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা দুর্নীতির অভিযোগ করলেন। কিন্তু টাকাটা কোথা থেকে এলো তারা তার উৎস খুজে পেলেন না। উৎস যদি না দেখাতে পারেন তবে অপরাধ কিভাবে হবে। কেউ অভিযোগ করলেন না, যে তাদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আনা হয়েছে। হাওয়ার উপর মামলা ও চার্জশিট দাখিল করে দিলেন। আবার আমরা যখন ডকুমেন্ট দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি যে, এগুলো পার্টি ফান্ডের টাকা তাও গ্রহণ করবেন না।’
তিনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত প্রসিকিউশন বুধবার অভিযোগ করেছেন, আমি নিজের আসামির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন না করে খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করি। আমার আসামি তার অধীনে চাকুরি করেছেন। তাই তিনি খালাস পেলেই আমার আসামির বড় প্রাপ্তি হবে।’
আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘মাননীয় আদালত ক্রিমিনাল মামলায় আসামীর কোন দায় নেই। সব কিছু প্রমাণ করতে হবে প্রসিকিউশনকে। এখানে অনুমানের ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে না। আদালতে প্রসিকিউশন কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি। তাই আশা করি আসামিরা খালাস পাবেন।’ এরপর বেলা দেড়টার দিকে আইনজীবী আমিনুল দুপুরে লাঞ্চেরের জন্য রিবতি চান।
ওই সময় দুদকের প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে তাই আজকের (বৃহস্পতিবার) মতো থাক।’ এরপর বিচারক বলেন, ‘আজ আর শুনব না। পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপন আগামী ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বলেন এজলাস ছেড়ে যান।’
বিচারক এজলাস ছাড়ার পর খালেদা জিয়া আদালতে প্রায় ২৫ মিনিট অবস্থান করেন। ওই সময় আদালতে উপস্থিত বিএনপি পন্থী আইনজীবী ও নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। নেতাদের মধ্যে ছিলেন দলটির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও মোয়াজ্জোম হোসেন আলাল ও আফরোজা আব্বাস। আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন, রেজ্জাক খান, সাবেক এটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মাদ আলী, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, শাহজাহান ওমর, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আমিনুল ইসলাম, জাকির হোসেন ভুইয়া, জয়নাল আবেদীন মেজবাহ, তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ প্রমুখ। এসময় আইনজীবীরা খালেদা জিয়াকে উভয় মামলায় খালাস পাবেন বলে জানান।
এর আগে বুধবার দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর কাজল দুই ঘন্টায় যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন। এরপর আইনজীবী আমিনুল আসামি জিয়াউল হক মুন্নার পক্ষে শুরু উপস্থাপন শুরু করেন।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। এ মামলায় ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়। মামলাটিতে বিএনপি নেতা সচিব হারিছ চৌধুরী এবং তার তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিুউটিএ এর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান আসামি।
সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়