195033

‘১০জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম জানাতে পারলে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবো’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘আমি চার বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছি। আমার দায়িত্ব পালনকালে অনিয়মের মাধ্যমে কোনো অ-মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা বানানো হয়েছে এমন ১০ জনের নাম বলতে পারলে নাকে খত দিয়ে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবো।

‘অসংখ্য রাজাকারকে ২ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের’ অভিযোগের প্রেক্ষিতে মন্ত্রী একথা বলেন।

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা’ নামের একটি সংগঠনের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ কথা বলেছেন মন্ত্রী।

তার ভাষ্য, ‘আমি মন্ত্রী হওয়ার আগে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তখন কী ঘটেছে জানি না। তবে আমি এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া মাত্রই যাচাই-বাছাই করে তা বাদ দিয়েছি। কেউ বলতে পারবে না আমি বা আমার মন্ত্রণালয়ের কেউ এমন কোনও কাজের সঙ্গে জড়িত।’

‘একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা’ সংগঠনের আহ্বায়ক আবীর আহাদের অভিযোগ, ২০১৭ সালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) এক নির্দেশিকায় বলা হয়- ভারতীয় ও লাল মুক্তিবার্তার মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে যে কোনও ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেওয়া যাবে। এমন একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের ফর্মুলা নির্দেশিকায় জুড়ে দেওয়ার কারণে যাচাই-বাছাই কমিটির বেশিরভাগ সভাপতি, সদস্য ও সুযোগসন্ধানীরা তা কাজে লাগিয়েছে। তারা পুরো যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াকে বানিয়ে ফেলে বাণিজ্যিক হাতিয়ার। তাই ওই অপরিণামদর্শী দুর্বল ফর্মুলার সুবাদে ২ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে সারাদেশের লাখ লাখ অ-মুক্তিযোদ্ধা ও হাজার হাজার রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দেওয়া হয়। এখানে হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে।’

সংগঠনটির অভিযোগ, মুক্তিযোদ্ধা বানানোর নামে বাণিজ্যের ভাগ পেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা), মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডারসহ ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য ও নেতা কিংবা পাতিনেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ‘একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা’র আহ্বায়ক আবীর আহাদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারী সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কোনও অবস্থায় দেড় লাখের বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজারেরও বেশি।’

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদার সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান ও মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দেওয়ার দাবিতে দেশব্যাপী সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা’ সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করেছে।

শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনটির ৭১ সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তারা সরকারের কাছে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ও ‘মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দ দুটির সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবি করেছেন।

আবীর আহাদের কথায়, ‘জামুকা কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বাতিল ও মুক্তিযোদ্ধা লাল মুক্তিবার্তা, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের গেজেট ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তালিকার সব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে বাদ দিতে হবে।’

ad

পাঠকের মতামত