193623

পুলিশের ফোনে স্কুলে ভর্তি প্রতিবন্ধী লতা

শামসুন্নাহার লতা। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী এলাকায় বাসিন্দা মেয়েটি। তার বাবা মো. আবদুল হালিম পেশায় রিকশাচালক ও মা গৃহিণী। দশ ভাই-বোনের মধ্যে লতা নবম। অন্য ভাই-বোনেরা শারীরিকভাবে স্বাভাবিক হলেও কথা বলতে ও কানে শুনতে পায় না সে।

জন্মগত এই সমস্য লতাকে শারীরিকভাবে থামাতে পারলেও, দমাতে পারেনি তার পড়ালেখা করার অদম্য ইচ্ছা। আর দশজনের মতোই লেখাপড়া করে সব সময়ই ভালো ফল এনে দিয়েছে সে।

লতার শিক্ষাজীবন শুরু আদমজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রতিবন্ধী হয়েও প্রতিটি ক্লাসেই সে খুব ভালোভাবেই কৃতকার্য হয়েছে। শিক্ষকরাও লতাকে খুব ভালোবাসেন। কিন্তু তার শিক্ষাজীবনে প্রথম ধাক্কাটি আসে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার পর।

২০১৫ সালে আদমজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৯২ নিয়ে কৃতকার্য হয় লতা। এই সফলতার পরও আদমজী সরকারি এমডব্লিউ উচ্চ বিদ্যালয়ে তাকে ভর্তি করেনি স্কুলটির প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম। ২০১৬-১৭ দুবছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো লাভ হয়নি।

এ বিষয়ে লতার বোন দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের ইসলামী ইতিহাসে চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী মুক্তা আমাদের সময়কে বলেন, “২০১৫ সালে আমার বোন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। পরে আমরা তাকে এমডব্লিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করতে নিয়ে গেলে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক আমাদের বলেন, ‘এটা প্রতিবন্ধীদের স্কুল নয়। ওকে প্রতিবন্ধীদের স্কুলে নিয়ে যাও।’ আমরা আমার বোনকে মিরপুরের একটি প্রতিবন্ধী স্কুলে নিয়ে যাই। সেখানে আমাদের ২০১৭ সালের নভেম্বরে যোগাযোগ করার কথা বলে। আমরা সময়মতো ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, ওর বয়স বেশী হয়ে গেছে। এখন আর ভর্তি করানো সম্ভব নয়।”

মুক্তা আরও বলেন, “পরে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আমরা আবারও এমডব্লিউ স্কুলে যোগযোগ করি। কিন্তু কিছুতেই আমার বোনকে ওই স্কুলে ভর্তি করানো যাচ্ছিল না। আমরা অনেক অনুনয়-বিনয় করেও প্রধান শিক্ষকের মন গলাতে পারিনি। তিনি আমাদের বলেছেন, ‘তোমার বোন প্রতিবন্ধী। স্কুলে মারামারি বা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করতে পারে। যার কারণে তাকে এই স্কুলে ভর্তি করানো যাবে না।’”

লতার বোন বলেন, ‘লতা পাঁচ বছর এই স্কুলের পাশেই আদমজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছে এবং খুব শান্ত প্রকৃতির। কখনো কোনো অভিযোগ তার বিরুদ্ধে ছিল না। তাও প্রধান শিক্ষক আমার বোনকে এই বিদ্যালয়ে ভর্তি করেননি। পরে উপায় খুজে না পেয়ে ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারির সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় যাই। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলামকে বিস্তারিত বলি। তখন তিনি সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সুমন সরকারকে দিয়ে আমাদের স্কুলে পাঠান। এএসআই সুমন স্কুলে গিয়ে প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলেন।’

এ বিষয়ে এএসআই সুমন বলেন, ‘নজরুল স্যারের নির্দেশে আমি লতা ও তার বোনকে নিয়ে এমডব্লিউ স্কুলে যাই। এ সময় প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম আমাকে বলেন, এটা প্রতিবন্ধীদের স্কুল নয়। ওকে প্রতিবন্ধীদের স্কুলে ভর্তি করাতে বলেছি। তখন আমি প্রধান শিক্ষককে বলি, ও প্রতিবন্ধী হয়েও আপনার পাশেই আদমজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে পিএসসিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। তখন প্রিন্সিপাল আমাকে বলে, লতার দুই বছর গ্যাপ হয়েছে।’

সুমন আরও বলেন, ‘পরে আমি ওসি নজরুল স্যারকে ফোন দেই। স্যার প্রিন্সিপালের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তখন প্রিন্সিপাল স্যার লতাকে ভর্তি করাতে রাজী হয়।

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একটা মেয়ে, যে স্কুলে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়ে ভাল রেজাল্ট করলো, সে কেন একই স্কুলে পরবর্তী ক্লাসে ভর্তি হতে পারবে না? তাই আমি প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করেছি যদি নীতিমালায় কোন ঝামেলা না থাকে, তবে যেন ভর্তি করা হয়।’ উৎস: দৈনিক আমাদের সময়।

ad

পাঠকের মতামত