190803

‘যা হওয়ার হোক, আমি নীলকে দেব না’

মায়ের কাছে ফেরত না দেয়া ২২ মাসের শিশু মৌসুম গাইন নীলকে আজ হাজির করা হয়নি হাইকোর্টে। আদালত এ সংক্রান্ত আদেশ এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি (স্ট্যান্ড ওভার) করেছেন। একই সঙ্গে নীলকে হাজিরের জন্য হাইকোর্টের আদেশ যথাযথ ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছেছে কিনা তা জানাতে বলেছেন। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেন।

আদালতে নীলের মায়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা।গত ২০ ডিসেম্বর হাইকোর্টের অবকাশকালীন একটি বেঞ্চ শিশু নীলকে ৭ জানুয়ারি হাইকোর্টে হাজির করতে আদেশ দিয়েছিলেন।

নির্ধারিত দিনে আদালত আইনজীবীকে বলেন, শিশুটিকে হাজির করা হয়েছে কি না?-জবাবে ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, না। আদালত বলেন, বাবা কোথায়? আইনজীবী বলেন, বাবার কোনো ট্রেস (সন্ধান) নেই। সম্ভবত শিশুটিকে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিশুর দাদি বলেছেন-‘আমি শিশুকে (নীলকে) দেব না, যা হওয়ার তাই হোক’।

আদালত ফের জানতে চান বাবা মায়ের কাছ থেকে ২২ মাসের শিশুকে কীভাবে নিল? জবাবে আইনজীবী বলেন, বাড়ি হচ্ছে খুলনায়। কিন্তু নীলের বাবা ডেমরায় চাকরি করতো এনজিও ব্র্যাকে। নীল জন্ম নেওয়ার পর প্রায়ই তার চাচা ও দাদি বিভিন্ন সময় দেখার কথা বলে নিয়ে যেতো। এ সুযোগে গত বছরের এপ্রিলে তাকে নিয়ে আর ফেরত দেননি। এরপর শিশুটির বাবারও খবর পাওয়া যায়নি। চাকরিও করছে না। এরপর আদালত বলেন, হাজিরের আদেশ পৌঁছেছে কি না-এটা জানাতে হবে। আগামী রোববার পর্যন্ত রাখা হলো।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, নীলের মাকে ফোনে নীলের দাদি বলেছেন-‘আমি শিশুকে দেব না, যা হওয়ার তাই হোক।’ নীলের মা এটাও শুনেছে যে তাকে সম্ভবত ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায়, ইসলাম ধর্মাবলম্বী ফরিদা ইয়াসমিন মনি’র সঙ্গে বিয়ে হয় সনাতন ধর্মাবলম্বী নিউটন গাইনের। কিন্তু বিয়ের পর ধর্মান্তরিত হয়ে স্ত্রীর ধর্ম গ্রহণ করে নিউটন গাইন। তার নতুন নাম হয় লিটন হোসেন। তবে এই বিয়ে মেনে নেয় না লিটন হোসেনের পরিবার।

এর মধ্যেই ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এই দম্পতির কোল জুড়ে আসে একটি ছেলে সন্তান। যার নাম রাখা হয় মৌসুম গাইন নীল।

একমাত্র ছেলে নীলকে একসময় প্রায়ই তার দাদির বাড়িতে নিয়ে যেত লিটন হোসেন। কিন্তু একপর্যায়ে দাদি বাড়ি নেওয়ার পর নীলকে আর তার মা ফরিদা ইয়াসমিন মনি’র কাছে ফেরত দেয়নি লিটন। এমনকি স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন মনি’র সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সে।

একপর্যায়ে ছেলেকে ফিরে পেতে থানায় মামলা করেন মনি। পরবর্তীতে হাইকোর্ট রিট করেন। সে রিটের শুনানি নিয়ে গত ২০ ডিসেম্বর হাইকোর্টের অবকাশকালীন একটি বেঞ্চ শিশু নীলকে ৭ জানুয়ারি হাইকোর্টে হাজির করতে নীলের চাচা ও দাদির প্রতি আদেশ দেন।

অবকাশকালীন বেঞ্চ না থাকায় নীলের বিষয়টি রোববার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর ও বিচারপিতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে আসে। এসময় আদালত এক সপ্তাহের জন্য আদেশের বিষয়টি মুলতবি করেন।

ad

পাঠকের মতামত