শীঘ্রই আসছে পুরুষের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ জেল!
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিটা সাধারণত নারীকেই মেনে চলতে দেখা যায়। সচরাচর দেখা যায় পিল গ্রহণ করেন তারা। পুরুষের ক্ষেত্রে পিল উদ্ভাবনের চেষ্টা করা হলেও সেটা তেমন সাফল্য পায়নি। অনেকদিন ধরেই পুরুষের জন্য একটি সফল জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে। এমনই একটি পদ্ধতির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হতে যাচ্ছে ২০১৮ সালে এবং তা নিয়ে বেশ উৎসাহী হয়ে উঠেছেন বিজ্ঞানীরা।
আমেরিকার ন্যাশনার ইনস্টিটিউট অফ হেলথের গবেষকেরা ত্বকে মাখার জন্য এক জেল উদ্ভাবন করেছেন যা সাময়ীকভাবে বন্ধ করে দিতে পারে শুক্রাণুর উৎপাদন। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হয়ে চার বছরব্যাপী চলবে এই ট্রায়াল। সারা পৃথিবী থেকে ৪০০ দম্পতি এতে অংশ নেবেন।
কীভাবে কাজ করে এই জেল?
অনেকেই ইতোমধ্যে ভেবে নিয়েছেন, নিশ্চয়ই পুরুষাঙ্গে মাখতে হয় এই জেল! আসলে কিন্তু তা নয়। প্রতিদিন আধা চা চামচ পরিমাণ জেল আপনার ঘাড় এবং বাহুর উপরিভাগে মাখতে হবে। এতে আছে দুইটি হরমোন, ‘প্রজেস্টিন’ এবং ‘টেস্টোস্টেরন’। প্রজেস্টিনের কারণে টেস্টিসে যথেষ্ট টেস্টোস্টেরন উৎপন্ন হয় না ফলে শুক্রাণু উৎপাদন হয় না। আর এই জেলে থাকা টেস্টোস্টেরনের কারণে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে। গবেষকদের আশা, এই জেল ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত শুক্রাণু উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
“আমি আশাবাদী যে পুরুষরা যদি প্রতিদিন সঠিক নিয়মে এই জেল ব্যবহার করে, তা কার্যকরী হবে,” জানান গবেষক ডঃ স্টেফানি পেজ, ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের অধ্যাপক।
২০১২ সালে ছয় মাসের জন্য এমন হরমোন-ভিত্তিক কিছু জেল ব্যবহার করে ট্রায়াল করা হয়েছিল। সে সময় দেখা যায়, ওই জেল ব্যবহারে পুরুষের শুক্রাণু উৎপাদন কমে যায় ৮৯ শতাংশ, আর এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যায় সামান্য।
আবার এই বছরের শুরুর দিকে রেসাস বানরের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা যায়, একটি জন্মনিয়ন্ত্রণ জেল ১০০ ভাগ কার্যকরী হয়েছিল। তবে তা একেবারেই অন্যরকম একটি জেল ছিল যা কিনা অণ্ডকোষের শুক্রাণুবাহী নালিগুলোকে বন্ধ করে দেয়।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল যদি সফল হয়, তারপর একে বাজারজাত করার কাজটা হতে পারে শক্ত। বিভিন্ন কারণে বহু বছর ধরে পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলো আটকে আছে। একটি গবেষণায় দেখা যায়, মাত্র ২৫ শতাংশ পুরুষ এমন হরমোনাল কন্ট্রাসেপটিভ ব্যবহার করতে রাজি আছে।
আবার আরেকটি গবেষণায় ৩২০ জন পুরুষের মাঝে ২০ জনের মাঝেই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে খারাপ প্রভাব দেখা যায়, ফলে এই গবেষণা বন্ধ করে দেওয়া হয়। নারীরা যে পিল গ্রহণ করেন, তারো কিন্তু বেশ কিছু খারাপ প্রভাব আছে। যেমন ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস, ডিপ্রেশন এবং মেজাজের পরিবর্তন। গবেষকেরা আশা করছেন সহজে ব্যবহার করা যায় বলে এই জেল পরিস্থিতির পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।
সূত্র: IFLScience