‘একদিন এই ১ টাকার জন্যই কাঁদতে হবে’
এক টাকায় বাবর বিস্কুট ২০ খানা। কাগজে মোড়ানো বিস্কুট হাত, পেট ও চোখ সবই ভরে যেতো। এক টাকায় মিলতো তিন রঙের সন্দেশ। প্রথম ঘিয়ে তারপর গোলাপি ও শেষটা সবুজ। এক টাকায় চারটে তিতাশ চকলেট। এক টাকায় স্কুল গেটে টক বেশি দিয়ে চটপটি। এক টাকার বহুদিনের রাজত্ব শেষে জীবনে এলো দেড় টাকা। ক্রিম রোল অথবা বাটার বান।
তবে খুব বেশিদিন টেকেনি। টপকে এসেছিলো ২ টাকায়। এরপর এলো তিন টাকায় ঝাল স্বাদের পেটিস আর মিষ্টি স্বাদে ড্যানিস।
ওই তিন টাকাতেই এলো আর এক বিস্ময় রিং টিপস্ । ৫ টাকায় এলো পোলার কাপ আইসক্রিম আর চকবার। এই ফাঁকে সাড়ে তিন টাকায় এসে গেছে বাংলা ফাইভ। গ্যারিসনে ১২ টাকায় এক টিকিটে দুই সিনামা। স্কুল পালিয়ে বড়দের ছবি দেখতে গিয়ে একদিন চরম মারও খেলাম।
কিন্তু খরচ কমলো না। কেবলই বাড়তে লাগলো। এলো ১৮ টাকায় মরিচা, ৪০ টাকায় পাইপ গান। ৪০ টাকায় এলো আরো এক মহা বিস্ময় ফ্যামেলি এ্যালবাম। এটি এক ধরনের চাবির রিং। প্লাস্টিকের কয়েকটি কার্ড ঝোলানো থাকতো তাতে। কার্ডের ভেতর দিকটায় ছিলো বিদেশি নগ্ন মেয়েদের ছবি। বন্ধুদের সাথে শুধু চাঁদা তুলে কিনলেই হতো না, সবচেয়ে বড় বিষয় ছিলো গোপনে সংরক্ষণ করতে পারা।
একদিন এলো ১’শ ২০ টাকায় সুইস গ্যায়ার। বোতাাম টিপ দিলেই চকচকে ছুরি বের হয়। সামনের মানুষটাকে অনায়েসেই ঘাবড়ে দেয়া যেতো। ধিরে ধীরে এলো টু টু এবং এবং থ্রি টু । ঠিক এই সময়ে এলেন আমার গুরু তাপস দা। বললেন এসব বাদ দে। পত্রিকায় লেখ প্রতি লেখা ২ থেকে ৩শ’ টাকা পাবি। ভাবলাম বলে কি! ঝাঁপিয়ে পড়লাম।
লিখতে গিয়ে দেখলাম এর চেয়েও সহজ উপায় আছে। ১২/ ১৪ লাইনের গান লিখলে ২ হাজার পাওয়া যায়। দুই এক গান মানুষের কানে লাগার পর দেখলাম সবাই তিন হাজার করে দেয়া শুরু করলেন। আসিফ ভাই আবার খুশি হয়ে ৫ হাজার করে দেয়া শুরু করলেন। বাহ্ ভালোই তো। ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম দেশের তিন বেসরকারি টেলিভিশনে কথা বললেই টাকা দেয়, লেখাও তেমন লাগছে না।
বাবা মা আর গুরুর দোয়ায় চাকরি জুটে গেলো চ্যানেল আইতে। সেই থেকেই আছি। খুব বেশি চাওয়া আমার নেই। রিজিকে যা দেন রাজ্জাকু তাতেই আমি মহা খুশি। আমার দুই ছেলে মেয়ে আর বৌ এর চাহিদা আরো কম। যা পাই তাতেই সন্তুষ্ট। কিন্তু প্রতি বছরে একটু একটু করে খাবারের স্বাদ কমে যাচ্ছে। ২০১৭ চলে যাচ্ছে।
খাবারের স্বাদ আরো কমে যাচ্ছে। আমার খালি এক টাকায় বাবর বিস্কুট খেতে মন চায়। মনে হয় চকচকে হরিণ মার্কা এক টাকা নিয়ে দৌরে সামনে গ্লাস দেয়া টিনের বাক্সে রাখা বাবর বিস্কুটা খেতে পারলে পরাণটা শান্ত হতো। জিহবা স্বাদ পেতো। আমি কি আর সত্যিই কোনওদিন এক টাকার রাজা হতে পারবো না! বুঝিনি যে এক টাকা খুশি মনে ছেড়ে হাজার টাকার নোট ধরেছিলাম, একদিন সেই এক টাকার জন্যই কাঁদতে হবে। বিদায় 2017।