জানেন কি? শীতকালের ঠাণ্ডা শরীরের উপকারে লাগে!
শীতকালে আমাদের শরীর খারাপ হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে। কারণ বছরের এই সময়ই আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটু দুর্বল হয়ে পরে।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে নানাবিধ জীবাণুর আক্রমণ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ঠাণ্ডার উপদ্রোপ তো আছেই। কিন্তু একথাও ঠিত যে নানভাবে শীতের ঠাণ্ডা আমাদের শরীরের উপকারেও লেগে থাকে।
আজ এই প্রতিবেদনে শীতকালের উপকারিতা পড়তে পড়তে যারপরনাই অবাক হয়ে যাবেন!
ঘুমের ঘাটতি দূর করে
কাজের চাপ হোক কিংবা স্ট্রেস, নানা কারণে আজকের যুব সমাজের চোখে একেবারেই ঘুম নেই। ফলে শরীর এবং মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত পরিমাণে রেস্ট না পাওয়ার কারণে বাড়ছে নানাবিধ রোগের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। সেই সঙ্গে বাড়ছে ইনসমনিয়ার মতো সমস্যাও। এমন পরিস্থিতিতে শীতকাল অনেকটা আশীর্বাদের সমান। কারণ ঠাণ্ডার কারণে শরীরের অন্দরে তাপমাত্র কমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ঘুম আসতে সময় লাগে না।
সম্প্রতি হওয়া একটি গবেষণায় দেখা গেছে ঘুমানোর সময় ঘরের তাপমাত্র যদি ১৫.৫-১৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকে, তাহলে সবচেয়ে ভালো ঘুম হয়। এবার বুঝেছেন তো শীতকাল, অনিদ্রায় ভুগতে থাকা রোগীদের জন্য কতটা উপকারী মৌসুম!
ক্ষুধা বাড়ে
ইউরোপিয়ান জার্নাল অব ক্লিনিকাল নিউট্রিশমে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুসারে শীতকালে আমাদের ক্ষুধা বেড়ে যায়। ফলে ভালো-মন্দ খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। আর একথা তো সবাই জানেন যে ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করলে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়। ফলে ভিতর থেকে শরীর শক্তিশালী হয়ে ওঠে, সেই সঙ্গে রোগভোগের আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
ওজন হ্রাস পায়
অতিরিক্ত ওজনের কারণে যদি চিন্তায় থাকেন, তাহলে সেই চিন্তা দূর হওয়ার সময় এসে গেছে। আর একথা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে যে ঠাণ্ডার সময় শরীর প্রতি মুহূর্তে নিজেকে গরম রাখার চেষ্টা চালিয়ে যায়। আর এই কাজটা শরীর করে থাকে চর্বি গলানোর মধ্যে দিয়ে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত মেদ বার্ন হতে শুরু করায় ওজন কমতে শুরু করে। জার্নাল অব ক্লিনিকাল ইনভেস্টিগেশনে প্রকাশিত একটি স্টাডি অনুসারে শীতকালে আমাদের শরীরে জমতে থাকা খারাপ ফ্যাট বা ব্রাউন ফ্যাট গলতে শুরু করে। ফলে ওজন কমতে একেবারেই সময় লাগে না। শীতকালে আরেকভাবে ওজন কমে থাকে। পৃথক এক গবেষণায় দেখা গেছে ঠাণ্ডার সময় আমাদের কাঁপুনি হয়েই থাকে। এমনটা হওয়ার সময় প্রচুর পরিমাণে চর্বি ঝরতে শুরু করে। একটি রিপোর্টে এমনটাও দাবি করা হয়েছে যে প্রায় ১ ঘণ্টা শরীরচর্চা করলে যে পরিমাণ চর্বি ঝরে, সেই একই পরিমাণ ঝরে প্রায় ১৫ মিনিট কাঁপুনি হলেও।
শরীরের প্রদাহ কমে
শীতকাল আরেকভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ঠাণ্ডার মৌসুমে শরীরের অন্দরে প্রদাহ বা ইনফ্লেমশন কমতে থাকে। ফলে যে কোনও ধরনের যন্ত্রণা কমতে একেবারেই সময়ই লাগে না। অর্থাৎ শীতকালে যেমন ব্যথা লাগার আশঙ্কা বাড়ে, তেমনি যন্ত্রণাও কমে খুব তাড়াতাড়ি।
মানসিক অবসাদ দূর হয়
নিউক্যাসেল ইউনিভার্সিটির গবেষকদের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে ঠান্ডার সময় আমরা সহজে বাড়ি থেকে বেরতে চাই না। ফলে অনেকটা সময় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাটানোর সুযোগ মেলে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্ট্রেস কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ব্রেন পাওয়ারও বৃদ্ধি পায়।
মশাবাহীত রোগের প্রকোপ কমে
ঠাণ্ডায় মশারা এত মাত্রায় কাবু হয়ে পরে যে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং ম্যালেরিয়ার প্রকোপ স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। আর এবছর যেহারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে, তাতে যে শীতকাল একটু শান্তিতে কাটবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে
শীতকাল মানেই আমাদের ত্বকের বারোটা বেজে যাওয়া। কিন্তু বাস্তবে কিন্তু ঠান্ডার সময় ত্বকের নানা ভাবে উপকার হয়। যেমন ধরুন শীতকালে ত্বকের অন্দরে থাকা শীরা-ধমনীতে রক্তের সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যাওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই স্কিনের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে শুরু করে। তাই ত্বকের আদ্রতা হারানো ছাড়া আর কোনও স্কিনের সমস্যা কিন্তু শীতকালে হয় না!
সূত্র: কালের কন্ঠ