182828

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সৌদি আরবের সন্ত্রাসী আইন প্রত্যাখান করল

সৌদি আরবের বাদশা’র কোনো সমালোচনা করলেই তা সন্ত্রাসী আইনের পর্যায়ে পড়বে এ বিষয়টিকে হাস্যকর হিসেবে অভিহিত করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, দেশটির নতুন এ আইন ধর্ম ও ন্যায়বিচারকে দুর্নীতিপরায়ণ করে তোলে।গত মাসে প্রণীত সৌদি আরবের নতুন এ আইনে বলা হয়েছে, কেউ যদি সৌদি বাদশাহ বা ক্রাউন প্রিন্সের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমালোচনা করে তাহলে তার ১০ বছর কারাদ- দেওয়া হবে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, এধরনের আচরণ বা শান্তিপূর্ণ কর্মকা-কে অপরাধী করে তোলে যা সন্ত্রাসের সাথে কোনো সম্পর্কের জন্ম দেয় না।

এক বিবৃতিতে ইিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, নতুন এই তথাকথিত সন্ত্রাসী আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা ২০১৪ সালে প্রণীত করা হয় এবং তখনো এতে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক পরিচালক সারাহ লিহা হুইটসন বলেন, শান্তিপূর্ণ সমালোচকদের বিরুদ্ধে সৌদি আরব ইতিমধ্যে অবৈধভাবে চরম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। অবমানরাকর আইন সংস্কারের পরিবর্তে সৌদি সরকার হতাশাজনক প্রস্তাবের সাথে বাদশাহ ও ক্রাউন প্রিন্সের সমালোচকদের সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে তুলনা করছে।

নতুন এই সন্ত্রাস আইনে সমালোচকদের সন্ত্রাসী হিসেবে তুলনা করে এর সংজ্ঞায় বলা হচ্ছে জনগণের প্রতি দেওয়া আদেশ লঙ্ঘন, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট, মানুষের নিরাপত্তায় অচলাবস্থা সৃষ্টি করা হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া সৌদি শাসকদের সমালোচনাকে জাতীয় ঐক্যকে বিপদের মধ্যে ফেলার তুলনা করে শাসনের মৌলিক আইনগুলোকে স্থগিত করার কথা বলা হয়েছে। এবং এসব সংজ্ঞায়িত বিষয়গুলো অস্পষ্ট ও সৌদি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শাস্তি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সমালোচনা করার দায়ে প্রখ্যাত মানবাধিকার কর্মী আব্দুল্লাহ আল-হামিদ এবং মোহাম্মদ আল-কাতানিকে যথাক্রমে ১১ ও ১০ বছর কারাদ- দেয়া হয়েছে। আরেক মানবাধিকার কর্মী এসাম কোশাকের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মানবাধিকার ও সন্ত্রাস বিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র‌্যাপোটিয়ার গত মে মাসে সৌদি আরব সফর শেষে জাতিসংঘের বিশেষ অধিবেশনে বলেন, দেশটিতে সন্ত্রাসবাদের এধরনের বিস্তৃত সংজ্ঞার মধ্যে মানবাধিকার রক্ষাকর্মী, ব্লগার, সাংবাদিক ও অন্যান্য শান্তিপূর্ণ সমালোচকদের ফেলা হচ্ছে। ২০১৪ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও অন্যান্য জাতীয় নিরাপত্তা বিধানের ধারাবাহিকতায় এধরনের চরম শাস্তিমূলক বিধান করা হয়েছে যা আগেও সমালোচিত হয়েছে।

সন্ত্রাসবাদের এধরনের অস্পষ্ট সংজ্ঞা ব্যবহার করে গত বছর শিয়া সংখ্যালঘু নেতা নিমর বাকির আল-নিমরকে ফাঁসি দেয়া হয় যিনি রাজতন্ত্রের পরিবর্তে নির্বাচন দাবি করেছিলেন। অনেক দেশের সরকার ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়। গত জুন মাসে মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে ঘোষণার পর সৌদি আরব একটি বাঁকে উপনীত হয়েছে। পশ্চিম এশিয়ায় সৌদি আরবের কৌশলগত ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সর্বশেষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণার পর যা করা হচ্ছে তার সবই রাজনৈতিক বিশুদ্ধতা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। ক্রাউন প্রিন্স তার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিরপেক্ষ করার জন্যে এসব করছেন। একই সঙ্গে ক্রাউন প্রিন্সের ইয়েমেনে যুদ্ধ পরিচালনা ও কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাথে ইরানের সাথে নতুন এক বিরোধপূর্ণ ফ্রন্ট উম্মোচন করা হয়েছে।

সংস্কারের কথা বলেও মোহাম্মদ বিন সালমান শান্তিপূর্ণ সমালোচকদের সন্ত্রাসী হিসেবে ব্যাখ্যা দিয়ে সন্ত্রাসের অভিযোগ আনছেন যা এর আগেও সৌদি শাসকরা ধারাবাহিকভাবে করে আসছেন। নতুন এ সন্ত্রাসী আইনের মাধ্যমে সৌদি শাসকরা দিনের পর দিন শান্তিপূর্ণ সমালোচকদের দমন করতে পারবেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, সৌদি সন্ত্রাসী আইনের ৩৪ ধারা অনুযায়ী সমালোচনাকে (সৌদি শাসকদের ভাষায় সন্ত্রাস) সমর্থন, প্রচার, সহানুভূতি দেয়া বা উত্তেজিত করে এমন ব্যক্তিদের ৩ থেকে ৮ বছরের কারাদ-ের বিধি রয়েছে। একই আইনের ৩৫ ধারা অনুযায়ী কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা এ্যাকাডেমিক স্ট্যাটাস দিলে বা মিডিয়াকে প্রভাবিত করলে কমপক্ষে ১৫ বছরের কারাদ- হবে। নতুন আইনে অভিযুক্তদের বিচারের নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সংশোধন করে বিচার ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করার কথা বলা হলেও যে কোনো ব্যক্তিকে আটকের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। অভিযোগ আনার পর যে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে তার আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে খোঁজ, সম্পত্তি জব্দ করার বিধান রয়েছে কোনো বিচার ছাড়াই। কোনো নোটিশ ছাড়াই যে কোনো সন্দেহভাজকে নিষিদ্ধ বা বল প্রয়োগের বিধি রয়েছে।

সন্ত্রাসী আইনের ২৬ ধারায় সন্দেহভাজনদের আইনজীবীর অধিকারকে নিয়ন্ত্রণ ও ২৭ ধারায় প্রতিবাদকারী বা তার আইনজীবীর উপস্থিেিততে সাক্ষী বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নেওয়ার ক্ষেত্রে অধিকার হরণ করা হয়েছে। আইইউভিএম প্রেস

ad

পাঠকের মতামত