
জেনে নিন বাংলা চলচ্চিত্রের চিরসবুজ নায়ক জাফর ইকবাল এর জীবন কাহিনি
বাংলা চলচ্চিত্রের স্টাইলিশ নায়কদের মধ্যে অন্যতম জাফর ইকবাল।ছিলেন বোহেমিয়ান। জাফর ইকবাল চিরসবুজ নায়ক হিসেবে পরিচিত। শহুরে রোমান্টিক ও রাগী তরুণের ভূমিকায় দারুণ মানালেও সব ধরনের চরিত্রে ছিল তাঁর সহজ বিচরণ। অভিনয়ের পাশাপাশি বাস্তব জীবনে চমৎকার গান গাইতে পারা এ অভিনেতা বেশকিছু ছবিতে গায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
চলচ্চিত্রে তাকে বলা হতো রাজপুত্তর, আবার কখনো কখনো রোমিও। তিনি একাধারে ছিলেন গায়ক, গিটারবাদক ও নায়ক।
দুই যুগ হয়ে গেল বাংলা চলচ্চিত্রের এই ফ্যাশন আইকন চলে গেছেন।তবু কি ভীষন জীবন্ত এখনো।
জাফর ইকবাল ছিলেন পরিপূর্ণ একজন নায়ক। তবে গানের চর্চাটা করতেন সেই শৈশব থেকেই। ১৯৬৬ সালে বন্ধু তোতা, মাহমুদ ও ফারুককে নিয়ে গঠন করেন ব্যান্ড গ্রুপ ‘রোলিং স্টোন’। এলভিস প্রিসলি ছিল তার প্রিয় তারকা। স্কুলে কোন ফাংশন হলে তিনি গিটার বাজিয়ে প্রিসলির গান গাইতেন। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের (বর্তমানেও ওই নাম) দর্শক-শ্রোতারা বিমোহিত হয়ে শুনত জাফর ইকবালের গান। গান গাইতে গাইতে চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি খান আতাউর রহমানের সঙ্গে পরিচয় ও চলচ্চিত্রে আসা। তবে মৃত্যু পর্যন্ত গিটার ছিল তার সর্বণের সঙ্গী।
তসলিমা নাসরিন তাঁর দ্বিখণ্ডিত নামের আত্মজীবনীগ্রন্থে বলেছিলেন যে, তরুণ বয়সে তিনি দুজন মানুষের প্রেমে পড়েছিলেন একতরফাভাবে। এদের একজন হচ্ছে টেলিভিশনের প্রিয়মুখ আফজাল হোসেন এবং অন্যজন হচ্ছেন রূপালি পর্দার সুদর্শন নায়ক জাফর ইকবাল।
শুধু তসলিমাই নন, সত্তর এবং আশির দশকের বাংলাদেশের কিশোরী এবং তরুণীদের একটা বিরাট অংশই জাফর ইকবালের প্রেমে পড়েছিল। ওই সময়ের মেয়েদের এই গণহারে প্রেমে পড়াতে অবশ্য দোষ দেওয়া যায় না তাদের। এরকম অরূপ রূপবান, কার্তিকের মত কান্তিময়, কেতাদুরস্ত, পোশাকে আশাকে সুবেশী এবং হালনাগাদ নায়ক বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আর দ্বিতীয়টি ছিল না। আমাদের চলচ্চিত্র জগতের প্রথম অত্যাধুনিক, স্মার্ট, গ্লামারাস নায়ক তিনি। শেষও তিনিই।
চলচ্চিত্র জীবনে অনেক ছবিই করেছেন তিনি, তবে তাঁর মেধা এবং সৌন্দর্যের সঠিক ব্যবহার হয় নি কোনোটাতেই। এর জন্য অবশ্য অন্যদের চেয়ে তাঁর নিজের দোষই বেশি ছিল। অত্যন্ত খামখেয়ালী প্রকৃতির মানুষ ছিলেন তিনি। পোশাকে আশাকে কেতাদুরস্ত হয়ে অত্যন্ত দুরন্ত গতিময় একটা জীবন যাপন করতেন তিনি। পেশার প্রতি একনিষ্ঠতা ছিল না তাঁর। সে কারণেই অত্যন্ত জনপ্রিয় হবার পরেও সঠিক জায়গায় পৌঁছোতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। নায়ক না হয়েও শুধু গায়ক হয়েও থাকলেও হতে পারতেন দেশের সেরা গায়ক। কিন্তু কোনোটাও পূর্ণভাবে হওয়া হয় নি তাঁর। না নায়ক, না গায়ক। অবশ্য এর জন্য কোনো আক্ষেপ তাঁর মনের মধ্যেও ছিল না বলেই মনে হয়।
চিরতরুণ নায়ক ছিলেন তিনি। অকাল মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল বিয়াল্লিশ বছর। বিয়াল্লিশ বছর বয়সেও সেই বাইশ বছরের তারুণ্য, সৌন্দর্যকে অবিকল ধরে রাখতে পেরেছিলেন তিনি।সে কারণে কিনা কে জানে, প্রকৃতি বুড়ো হবার আগেই তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছে পৃথিবী থেকে।
অনিন্দ্যসুন্দর রূপলাবন্যের কারণে তাঁকে রাজপুত্তুর বলে ডাকতো কেউ কেউ। মেয়েদের হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দিতেন বলে রোমিও বলেও ডাকতো কেউ কেউ। মৃত্যুর অনেকগুলো বছর পরে তিনি আজ ভুলে যাওয়া একজন। এমনই হয়, সময় বড় নিষ্ঠুর। পিছনের কোনো কীর্তিকে, কীর্তিমানকে কিংবা কান্তিময়কে মনে রাখতে চায় না সহজে। কলার পাতায় ভাসিয়ে দেয় বিস্মৃতির স্রোতস্বিনীর স্রোতে।
ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা বলা হয় নি। অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধও করেছেন তিনি।