মায়ের কোল থেকে ছিটকে চাকার নিচে
বাবা আলফাজ উদ্দীন মোটর সাইকেল চালাচ্ছিলেন। পেছনে মা তামান্না খাতুনের কোলে ছিলেন ১৯ মাস বয়সী তামিম হোসেন।
কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর এলাকায় ট্রাফিক কার্যালয়ের সামনে পৌঁছার পর ঝাঁকুনিতে মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে যায় তামিম। এ সময় একটি কাভার্ড ভ্যানের চাকার নিচে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে।
চোখের সামনে একমাত্র ছেলের করুণ মৃত্যু দেখে অচেতন হয়ে পড়েন বাবা-মা। সন্তানের লাশের সঙ্গে বাবা-মাকেও নেওয়া হয় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে। আজ সোমবার বেলা তিনটার দিকে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেলা তিনটার দিকে মেহেরপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আলফাজ উদ্দীন তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে কুমারখালীর দিকে যাচ্ছিলেন।
মহাসড়কে খানাখন্দ থাকায় যানবাহন চলছিল ধীর গতিতে। কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর ট্রাফিক কার্যালয়ের কাছে পৌঁছানোর পর গর্তে পড়ে প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে মোটর সাইকেলটি থেকে হঠাৎ ছিটকে পড়েন ওই দম্পতি।
আলফাজ ও তাঁর স্ত্রী ছিটকে রাস্তার এক পাশে পড়ে যান। অপর পাশে যায় মায়ের কোলে থাকা তামিম। এ সময় একটি কাভার্ড ভ্যান শিশুটিকে চাপা দেয়। মা-বাবা বাঁচলেও চোখের সামনে প্রিয় সন্তানের করুণ মৃত্যু দেখে দুজনই অচেতন হয়ে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শী টিটু রহমান বলেন, বেহাল সড়কের খানাখন্দে পড়ে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। শিশুটির নানি বেবী খাতুন বলেন, তামিম কয়েক দিন ধরেই অসুস্থ ছিল।
তামিমের বাবা মেহেরপুরে একটি এনজিওতে চাকরি করেন। তামিমের চিকিৎসার জন্য মেহেরপুর থেকে দুপুরে তাঁরা রওনা হন। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে অসুস্থ মা-বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কাভার্ড ভ্যানের চালক নিজাম উদ্দীন দাবি করেন, তাঁর গাড়িটি খুবই ধীর গতিতে ট্রাফিক কার্যালয় অতিক্রম করছিল। এ সময় হঠাৎ করে পাশে থাকা একটি মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে গাড়ির চাকার নিচে পড়ে যায় শিশুটি। এতে তাঁর কিছুই করার ছিল না। চালকের সহকারী জাহিদুলও একই দাবি করেন।
ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মেহেদী হাসান জানান, কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দুর্ঘটনাটি বেহাল সড়কের কারণেই ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) লিপন সরকার বলেন, কাভার্ড ভ্যানটি জব্দ এবং চালক ও তাঁর সহকারীকে আটক করে পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়েছে। শিশুটির লাশ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তামিমদের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের শ্রীখল গ্রামে।
সূত্র: প্রথম আলো