179872

দুলাভাইয়ের ধর্ষণের স্বীকার সেই শ্যালিকার সন্তান পেল নতুন ঘর‍!

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ফেলে যাওয়া সেই শিশুটিকে আদালতের মাধ্যমে গ্রহণ করেছেন এক পুলিশ দম্পতি।

বুধবার (৮ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টায় চুয়াডাঙ্গার শিশু আদালতের বিচারক শাহনাজ সুলতানা দীর্ঘ শুনানির পর আব্দুল আলিম ও জান্নাতুল ফেরদৌস দম্পতিকে এই শিশুকে লালন পালনের দায়িত্ব দেন।

গত বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ওই শিশুটিকে ফেলে পালিয়ে যায় শিশুটির স্বজনরা। পরে ওই শিশুকে সমাজ সেবার তত্ত্বাবধানে রাখা হয়।

সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যা সন্তান ফেলে সটকে পড়া প্রসূতির খোঁজ খবর নিতে গিয়ে জানা যায়, টুম্পার (ছদ্মনাম) বয়স ১৪ বছর। সে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশও নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবারও সে পরীক্ষায় অংশ নেয়।

দীর্ঘদিন ধরে সে তার বান্ধবীসহ প্রতিবেশীদের বলে আসছিলো তার পেটে টিউমার রয়েছে। শরীরে জমছে পানি। এ কারণে ওই কিশোরীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়ে তেমন কেউ সন্দেহ করেননি। ওইদিনই গ্রামের সাধারণ মানুষ টুম্পার পরিচয় ফাঁস করে।

বিস্তারিত জানতে গেলে টুম্পা জানায়, তারই বড় বোনের স্বামী একই উপজেলার কলাবাড়ি রামনগর সেন্টারপাড়ার ইব্রাহিম ফুসলে তাকে সর্বনাশ করেছে।

এরই মধ্যে খুশির নানা ও নানি লিখিতভাবে চুয়াডাঙ্গা জেলা সমাজ সেবার প্রবেশন অফিসারের নিকট বলেছেন, ওই নবজাতকের ওপর আমাদের কারো কোনো দাবি নেই।

নবজাতককে কেউ কোনোদিন দাবি করা হবে না। অবশ্য নবজাতকের মা কিশোরী টুম্পা এ রকম কোনো বক্তব্য দেয়নি।

অপরদিকে ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী টুম্পাকে ফুসলে যে ভগ্নিপতি সার্টারমিস্ত্রি ইব্রাহিম সর্বনাশ করেছে তার অবশ্য প্রকাশ্যে দেখা মিলছে না।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ শামীম কবির জানান, বৃহস্পতিবার সকালে এক জেএসসি পরীক্ষার্থী নিজেকে টুম্পা নাম পরিচয় দিয়ে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ডায়রিয়া রোগী সেজে ভর্তি হয়। পরের রাত ৭টা ৩৬ মিনিটে ওই শিক্ষার্থী হাসপাতালে এক কন্যাশিশুর জন্ম দেয়।

পরদিন ভোরে টুম্পা ও তার নানী শিশু কন্যাকে হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তিন নিঃসন্তান দম্পতি শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য হাসপাতালে আবেদন করেন।

পরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ওই শিশুটিকে সমাজ সেবার তত্ত্বাবধানে তুলে দেন।

চুয়াডাঙ্গা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা বশির আহম্মেদ জানান, শিশুটিকে নিজ সন্তান হিসাবে দায়িত্ব নেবার জন্য আমাদের কাছে তিন দম্পতি আবেদন করেন। পরে বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত।

গত রোববার চুয়াডাঙ্গা শিশু আদালতে ওই শিশু কন্যাকে দত্তক নেওয়ার জন্য ওই তিন দম্পতি আবেদন করেন। আদালত তিনটি আবেদনই গ্রহণ করে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।

বুধবার নির্ধারিত ধার্য দিনে শিশু আদালতের বিজ্ঞ বিচারক শাহানাজ সুলতানা প্রায় ১ঘন্টা ধরে উভয়পক্ষের আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদনকারীদের কাগজপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন।

পরে আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, আবেদন করা তিনটি দম্পতির মধ্যে দুই দম্পতি নিঃসন্তান। এমন একটি বাস্তবতার মুখে রায়টি দিতে আমার বুকের মধ্যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে।

আদালতের এমন পর্যবেক্ষণের পর আব্দুল জব্বার-সুলতানা ও নাঈম-সীমা দম্পতি তাদের আবেদন প্রত্যাহার করে নেন। পরে আদালত আব্দুল আলিম-জান্নাতুল ফেরদৌসী দম্পতিকে ওই শিশুকে লালন পালনের দায়িত্ব দেন।

আদালত তার রায়ে উল্লেখ করেন, শিশুটিকে নিজ সন্তানের মতো লালন পালনের পাশাপাশি তার সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা বীমা, ব্যাংক ডিপোজিট ও কিছু জমিজামা তার নামে দিতে হবে। প্রতি ৬ মাস পর পর সমাজ সেবা অধিদপ্তরে ওই শিশুর সার্বিক অবস্থা জানিয়ে রিপোর্ট করতে হবে।

আদালতের রায়ে বাচ্চাটি গ্রহণের পর আব্দুল আলিম-জান্নাতুল ফেরদৌসী দম্পতি তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানান, বিয়ের ৫ বছরে অতিবাহিত হলেও তারা ছিলেন নিঃসন্তান। দেশে বিদেশে অনেক চিকিৎসা করিয়েও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।

এই অবস্থায় শিশু কন্যাকে পেয়ে খুশি তারা। আগামী কাল বৃহস্পতিবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে শিশুটিকে তার নতুন বাবা-মা আব্দুল আলিম-জান্নাতুল ফেরদৌসী দম্পতি হাতে তুলে দেওয়া হবে।

ad

পাঠকের মতামত