179009

নবজাতককে রেখে স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে গেলেন মা!

ঠাকুরগাঁওয়ে এক নবজাতককে রেখে স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে গেলেন এক মা। ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, দেড় বছর আগে উক্ত গ্রামের নুরুল হকের ছেলে আলমের সাথে পাশের চাড়োল ইউনিয়নের কাঁচনা মুধুপুর এলাকার আলী মউদ্দিনের মেয়ে মরিয়মের বিয়ে হয়।

সুখের সংসারে যথারীতি মরিয়মের গর্ভে সন্তান আসে। হঠাৎ মরিয়মের সাথে পরিবারের মনমালিন্য দেখা দেয়। বিরোধ সৃষ্টি হতে শুরু করে। গর্ভে সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়ে মরিয়ম।

এরই মাঝে মরিয়ম আলমের সঙ্গে সংসার করবে না জানিয়ে দিয়ে বাবার বাড়ি চলে যায়। আলম মরিয়মের গর্ভের সন্তানের কথা চিন্তা করে বিবাহ বিচ্ছেদ না করার জন্য শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে অনুরোধ করেন। কিন্তু সন্তান জন্ম লাভের আগেই মরিয়ম তার পরিবারকে বুঝিয়ে আলমের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ (তালাক) করিয়ে নেয়।

গত ১০দিন আগে মরিয়মের গর্ভে কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। মরিয়ম ওই দিনের নবজাতক সন্তানকে তালাককৃত স্বামী আলমের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। ফলে নবজাতক সন্তান নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে আলম ও তার বাবা নুরুল হক। আলমের মা পূর্বেই মারা যাওয়ায় নবজাতকের যত্ন নিয়ে এখন ১০দিন যাবত বিপাকে দিন পার করছেন আলম।

আলম জানান, সন্তানের বাবা হওয়া অনেক আনন্দের। কিন্তু নবজাতক শিশুকে তার মা আমার কাছে রেখে চলে গেছে। আমি ও আমার বাবা মরিয়মকে অনেক অনুরোধ করেছি যেন জন্মের পর শিশুটিকে একটু যত্ন করে। আমি ভরণ-পোষণের সকল খরচ দিতে চেয়েছি। কিন্তু সন্তানের গর্ভধারিনী মা ও তার পরিবার রাজি হয়নি।

তিনি বলেন, শিশুটিকে কিভাবে যত্ন করবো সেটাও জানি না। দিন মজুরি করে কোনরকম সংসার চলে আমাদের। গত ১০দিন ধরে নবজাতক সন্তানের জন্য কাজেও যেতে পারিনি। কেউ যদি আমার এই নবজাতক সন্তানটির দায়িত্ব নেয় সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।

নবজাতকের মা মরিয়মের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আলমের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। বিচ্ছেদের আগে যেহেতু সন্তান গর্ভে ছিল তাই জন্মের পর আলমকে সন্তানটি দিয়ে এসেছি। মায়ের দুধ ও যত্ন না পাওয়ায় শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে এই অনুভূতিটি জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।

 

আলমের প্রতিবেশী শেফালি বেগম জানান, মরিয়ম কেমন মা? একটি সন্তান জন্ম দিতে কতই না কষ্ট হয়, সে কি সেই কষ্ট কয়েক দিনেই ভুলে গেছে। একজন পুরুষ মানুষের কাছে এভাবে শিশুটি দিয়ে চলে যাওয়ায় অযত্নে ও মায়ের দুধের অভাবে দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুটি।

আলমের বাবা নুরুল হক জানান, আলম ও আমি কোনমতে খেয়ে না খেয়ে দিন পারি করি। কিন্তু মরিয়ম হঠাৎ শিশুটি পাঠিয়ে দেওয়ায় আমরা বিপদে পড়েছি। কয়েক মাস শিশুটির লালন পালনের জন্য মরিয়মের পরিবারকে অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা নবজাতক শিশুটি নিতে নারাজ।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, শুনেছি সন্তান জন্মের পর আলমের স্ত্রী নবজাতকটিকে দিয়ে চলে গেছেন। কিন্তু শিশুটি ১০দিন ধরে মায়ের দুধ পান না করায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আলম দরিদ্র। নবজাতকটিকে কেউ লালন-পালনের জন্য আগ্রহী থাকলে আলম দিয়ে দেভে। তার সিদ্ধান্ত আমাকে জানিয়েছেন।

এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে নানা আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

ad

পাঠকের মতামত