আশ্চর্য হলেও সত্যি অদ্ভুত এক গ্রাম, যেখানে ব্যাংকেও তালা দেয়া হয় না!
গ্রামটির নাম শনি শিগনাপুর। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, এই গ্রামে খোলা থাকে বাসা-বাড়ির দরজা। আর থাকবেই বা না কেন, কারণ দরজা যে নেই! ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের আহমেদনগর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামটি।
খোলা ঘরেই যেখানে সেখানে পড়ে থাকে টাকা-পয়সা, গহনাগাটি। চুরি হয় না। চুরি করবে কে? চোরই যে নেই সেই গ্রামে। তাই থানাও নেই। শুধু কি বাড়ি! ব্যাংকের দরজাতেও তালা পড়ে না। কোন দোকান বা অফিসেও নয়। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।
মূলত এই শনি শিগনাপুর গ্রামে আঁখ চাষিদের বাস। বাসিন্দাদের সকলের অগাধ বিশ্বাস শনি দেবতার ওপর। আর সেই বিশ্বাসের জেরে দেশে একমাত্র এই গ্রামেই রয়েছে ইউকো ব্যাংক-এর এমন এক শাখা, যার কোন দরজায় তালা লাগানোর ব্যবস্থা নেই। এলাকাবাসীর বিশ্বাস, তাদের রক্ষা করেন শনি ঠাকুর।
এই গ্রামের স্থানীয়রা বলেন, পূর্বপুরষেরা তাদের বলে গেছেন দরজা যেন না লাগানো হয়। সেই নির্দেশ এখনও তারা মেনে চলেন এবং এর জেরে কোন বিপদও হয় না। শোনা যায়, প্রায় ৩০০ বছর ধরে এই রেওয়াজ চলছে মহারাষ্ট্রের এই গ্রামে। তবে নামে গ্রাম হলেও এখন রীতিমতো শহর শনি শিগনাপুর। এখানেই কেউ একজন শনি ঠাকুরের স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন— ‘কোন বিপদের ভয় নেই এই গ্রামে। আমি তোমাদের রক্ষা করব।
সেই বিশ্বাস থেকেই চলে আসছে দরজা না রাখার রেওয়াজ। এখানকার ব্যাংকে টাকা-পয়সা স্ট্রংরুমে রাখা থাকলেও মূল দরজায় কোন তালার ব্যবস্থাই নেই। একটি সাধারণ কাচের দরজাই ভরসা। সেটাও কোন পশু যাতে ব্যাংকের ভিতরে ঢুকে না পড়ে সেই কারণে।
প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের বাস শনি শিগনাপুরে। আর তারা সকলেই শনি দেবতার ভক্ত। বহু বহু বছর আগে বন্যার সময়ে নদীর জল গ্রামে ঢুকে যায় আর সেই জলে ভেসে আসে একটি শনি দেবতার মূর্তি। এখনও গ্রামের মূল আরাধ্য সেই মূর্তি। আর সেই মূর্তির কল্যাণেই সকলের আস্থা চোর কোন কিছু স্পর্শ করার সাহসই পাবে না। খবরটা পড়তে একটু হলেও আজব লাগছে মনে হয়। যেখানে দুর্ধষ উপায়ে ব্যাংক ডাকাতীর খবর শোনা যায়, সেখানে কিনা এভাবে খোলা ঘরেই যেখানে সেখানে পড়ে থাকে টাকা-পয়সা, গহনাগাটি। এটা শুধু মাত্র বাস্তব শনি শিগনাপুরে।