যেসব কাজ করতে পারেননি প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা দায়িত্ব গ্রহণের পর বিচার বিভাগে বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক কজলিস্ট চালু, প্রধান বিচারপতির পুরস্কার প্রবর্তন, ডিজিটাল রেকর্ডিং সিস্টেম চালুসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও এগুলো আলোর মুখ দেখেনি। আদালতের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগও কার্যকর হয়নি। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রকারান্তে বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ বেড়েছে।
২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান আপিল বিভাগের বিচারক এসকে সিনহা। এর মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসে প্রথম সনাতন ধর্মাবলম্বী ও মণিপুরী সম্প্রদায়ের কেউ প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। একই বছরের ১৭ জানুয়ারি তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর নানাভাবে আলোচনায় আসেন এই প্রধান বিচারপতি। বিচারকদের নির্দিষ্ট সময়ে এজলাসে ওঠা, দিনের পূর্ণাঙ্গ কর্মঘণ্টা ব্যবহারের জন্য দুপুরের পরে জামিন আবেদনের শুনানি করা, উচ্চ আদালতের কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি করা, অবকাশকালীন ছুটি কমিয়ে আনাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ তিনি বাস্তবায়ন করে গেলেও অনেক পদক্ষেপ আলোর মুখ দেখেনি।
এ ব্যাপারে আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিকের মন্তব্য উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের জন্য আলাদা শৃঙ্খলাবিধি তৈরির জন্য প্রধান বিচারপতি বেশ আন্তরিক ছিলেন। কিন্তু সরকারের অসহযোগিতায় তা বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি তিনি। এটা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। তিনি আরও বলেন, প্রধান বিচারপতি আরও কিছু সংস্কারমূলক উদ্যোগ নিয়েছিলেন, বিশেষত বিচার ব্যবস্থায় ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ। আর এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য বিচার প্রশাসন প্রধান বিচারপতিকেন্দ্রিক না রেখে বিকেন্দ্রীকরণ করা উচিত ছিল। অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্য বিচারপতিদের সম্পৃক্ত করলে সংস্কারগুলো তরান্বিত হতো।
জানা গেছে, সংস্কারমূলক পদক্ষেপ হিসেবে গত বছরের জানুয়ারি থেকে সুপ্রিমকোর্টের দৈনন্দিন কার্যতালিকা সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক করার উদ্যোগ নেন বিচারপতি এসকে সিনহা। তখন সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন থেকে এক সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়, কাগজের তৈরি কজলিস্ট বাদ দেওয়া হলে প্রতিবছর ২১ কোটি টাকার অপচয় রোধ সম্ভব হবে। হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের দৈনন্দিন কাগজের কার্যতালিকা তৈরির জন্য প্রতিদিন যে পরিমাণ কাগজ লাগে, তাতে গড়ে ৬৫টি গাছ কাটা পড়ে। অনলাইনে হলে সেটিও বন্ধ হবে। ঘরে বসেই বিচার প্রার্থীরা তাদের মামলার অবস্থান জানতে পারবেন। কিন্তু আইনজীবীদের তীব্র বিরোধিতার মুখে এ পদক্ষেপ থেকে পরে সরে আসেন প্রধান বিচারপতি।
এ ছাড়া আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় স্বতন্ত্র এবং কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সুপ্রিমকোর্ট কোনো প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, ব্যক্তি অথবা সরকারি কর্মকর্তাকে ‘প্রধান বিচারপতি পুরস্কার’-এ ভূষিত করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। আইনের ক্ষেত্রে দক্ষতা ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে একটি কমিটিও তখন গঠন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এ পদক্ষেপ আর আলোর মুখ দেখেনি। অন্যদিকে ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন, নতুনভাবে অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত স্থাপনসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এসব পদক্ষেপের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান শ ম রেজাউল করিম বলেন, প্রধান বিচারপতি কোনো ব্যক্তি নন। এটা একটা প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ। এ পদে পরিবর্তন হলেও আগের কর্মকা-ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বিচারপতি এসকে সিনহার জায়গায় যিনিই দায়িত্বে থাকবেন, তিনিই আগের ভালো ভালো সব পদক্ষেপ এগিয়ে নেবেন বলে আমি প্রত্যাশা করি।