178129

বিয়েতে ৩০০ দরিদ্রকে খাইয়ে নজির গড়লেন এই বাঙালি দম্পতি!

সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা : ‘মানুষ’-এর মতো বিয়ে করতে চেয়েছিলেন ওঁরা। কোনও অতিমানবিক আয়োজন বা উপহার, উপঢৌকনে ঢাকা পড়ার ইচ্ছা ছিল না। ইচ্ছে ছিল মানুষ হয়েও যারা মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, তাদের সঙ্গেই জীবনের বিশেষ মুহূর্তটা কাটানোর। চেয়েছিলেন অহেতুক সবার পেট পুজো না করিয়ে গরীবদের পেটের জ্বালা জুড়োতে। আর সেটাই হবে প্রকৃত ‘মানুষ’-এর মতো কাজ। অধ্যাপক দম্পতি করে দেখিয়েছেন সেটাই।

বিয়ের অনুষ্ঠানে লোকজন ডেকে না খাইয়ে ৩০০ জন গরীব মানুষের পেটের জ্বালা জুড়োলেন নব দম্পতি। এমন বিয়ে বেনজির না হলেও অভিনব বলাই যায়। বাঙালির বিয়ে মানে তিন দিনের বিশাল অনুষ্ঠান, জাঁকজমক। আর সেখানে খাদ্যরসিক বাঙালির জন্য পেট পুজোর আয়োজন থাকবে না? তা হয় না। পাত্র বা পাত্রী পক্ষের যত কমই পুঁজি থাক তার মধ্যেই চেনা, অচেনা, বাসে ট্রামে নাম কে ওয়াস্তে পরিচিতকে বাড়িতে ডেকে চোব্য, চোষ্য, লেহ্য করাতে পারলে তবেই বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পূর্ণতা পায়। এটাই কঠিন বাস্তব।

নিজেদেরকে এমন অতিমানবিক ভাবে লোকদেখানি করে তোলার ইচ্ছাটাই ছিল না দেবীপ্রসাদ ও তিথি’র। চেয়েছিলেন মান-হুঁশ রেখে বিয়েটা স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতে। সেটাই কাজে করে দেখিয়েছেন প্রফেসর দম্পতি দেবীপ্রসাদ ভট্টাচার্য ও তিথি দে। ‘অতিসাধারন’ বিয়েতে তাঁরা খাওয়ালেন শুধুই গরীব দুঃখীদের।

অধ্যাপক দম্পতি দক্ষিণ ২৪ পরগণার নামখানার বাসিন্দা। পেশায় দুজনেই কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক। দেবীপ্রসাদের কর্মস্থল ব্যরাকপুরের রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজ। তিথি নেতাজী নগর কলেজের দিবাবিভাগের অধ্যাপিকা। বছর পাঁচেক আগেই শুরু হয়েছিল প্রেম। তারপরই ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়েছে সম্পর্ক। বিয়ের সিদ্ধান্ত চলতি বছরেই।

কিন্তু এভাবে বিয়ের সিদ্ধান্ত কেন? দেবীপ্রসাদ স্পষ্ট জানিয়েছেন, “বহুমানুষ আছেন যারা দিনের পর দিন খেতে পায় না। আর একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে খাবার খেয়ে লোকে শেষ করতে পারে না। বেঁচে যাওয়া খাবার নষ্টও কম হয় না। এসব বাড়াবাড়ি ছাড়া কিছু নয়।” তিনি আরও জানিয়েছেন, “এই আয়োজন করতে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয় তা দিয়ে যদি না খেতে পাওয়া মানুষের পেট ভরে তবে সেটাই আসল সার্থকতা।” সেটাই সামাজিকভাবে বিয়ে করার আসল সার্থকতা মনে করেন তাঁরা।

বিয়ের এই অনুষ্ঠানে তাঁরা খাইয়েছেন ৩০০ জন গরীব মানুষকে। অনুষ্ঠানের স্থান হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন আদ্যাপিঠ মন্দিরকে। খাওয়ালেন ভাত, আলুর তরকারি, পাঁচমেশালি একটি তরকারি, খিচুরি, পায়েস, চাটনির মতো ‘অসাধারণ’ খাবার। আসলে ওটাই ওই মানুষদের কাছে চিকেন, মাটনের সমান। দেবীপ্রসাদ জানিয়েছেন, “এমনভাবে বিয়ের সিদ্ধান্তটা একসঙ্গেই নিয়েছিলাম।” তবে, একবার ব্যরাকপুর স্টেশনে এক বৃদ্ধাকে স্রেফ একটু জলের জন্য একটা বোতলকে আঁকড়ে থাকতে দেখেছিলেন দুজনে। পরে ওই বৃদ্ধার হাতে নিজেরা জল তুলে দিয়েছিলেন। খুশি হয়েছিলেন বৃদ্ধা। ঘটনাটা কোথাও গিয়ে বিঁধেছিল দম্পতির মনকে। তারপরে এই অভিনব বিয়ে।

অনেকেই ভাবতে পারেন নিশ্চয় বাড়ির অমতেই হয়েছে এমন বিয়ে। দেবীপ্রসাদ জানিয়েছেন, “পরিবার পুরোপুরি সহায়তা করেছেন আমাদের। বিয়ের দিনে অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রত্যেকে।” বিশেষ ভাবে উদ্যোগ নিয়েছিলেন দিদি সোমা ভট্টাচার্য ও বন্ধু সৌম্যদীপ। কিন্তু এমন আলাদা ভাবে বিয়ে সারলে অনেকেই অখুশিও হতে পারেন। প্রফেসর জানিয়েছেন, “হতে পারে। তবে আপাতত তিন দিনের অনুষ্ঠান করার কোনও পরিকল্পনা নেই।” যদি তিন দিন ধরে অনুষ্ঠান হয় তাহলে সেখানে খাওয়া দাওয়া করবে গরীব শিশুরা। নিজেরা উপহার না নিয়ে ওদের হাতে তুলে দেবেন উপহার। এটাই তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

দম্পতির বিয়ের ছবি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। অনেকেই প্রশংসা করছেন তাঁদের এমন সিদ্ধান্তের। কিন্তু কতজন তাঁদের মতো সাহসী হয়ে উঠতে পারবেন তা বলা মুশকিল। কিন্তু তবু কিছু দৃষ্টান্ত থাকে যা ভাবতে শেখায়। তেমনই দৃষ্টান্ত নবদম্পতি দেবীপ্রসাদ-তিথি।-কলকাতা২৪

ad

পাঠকের মতামত