স্তন কেটে, ধর্ষণের পর লজ্জাস্থানে কাঠ গুঁজে রোহিঙ্গা নারীদের নির্যাতন (ভিডিও)
আগস্ট থেকে অক্টোবর। পেরিয়ে গেছে দু’মাস। এরপরও মিয়ানমারের রাখাইনে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের ক্ষত এতটুকু শুকায়নি। এই অল্প সময়ের মধ্যে মিয়ানমার সেনা বাহিনীর হাতে প্রাণ দিয়েছেন ৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম। প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন ৬ লাখের বেশি রাষ্ট্রহীন নাগরিকেরা। এখনও এই স্রোত বহমান। এসব হতভাগা রোহিঙ্গাদের প্রত্যেকটি ক্যারেক্টার যেন এক একটি জীবন্ত মহাকাব্য।
রাখাইন টু কক্সবাজার- তাদের জীবন সংগ্রাম আর নির্যাতনের নির্মমতা যেন বাস্তব উপন্যাসের হাজারো পাতাকে হার মানায়। রোহিঙ্গাদের জীবনের এই বুনন যেন পরতে পরতে মানবতাহীন সমাজের নির্দয় সুঁচের আঁচড়ে ঠাসা।
রাখাইনের বুচিডংয়ের একজন আয়েশা সিদ্দিকা (৩৭), বর্মি সেনা তার স্বামী আব্দুল জলিলকে চোখের সামনে হত্যা করেছে। এরপরও স্বামীর ভূমি আঁকড়ে ছিলেন। এই সময়েই তার ওপর সেনাবাহিনী করে পাশবিক নির্যাতন। আর টিকতে না পেরে ৭ ছেলে-মেয়েকে নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন বাংলাদেশে।
আয়েশা তার এবং স্বজনদের জীবনের যে গল্প বললেন, সেটি সেল্যুলয়েডে তোলা সম্ভব হলে সব ট্র্যাজেডি তার কাছে মাথা অবনত করতে বাধ্য। ইতিহাসের আগ্রহীরাও এখান থেকে পাবেন বাস্তবের রোমহর্ষক রসদ।
আয়েশা এখন আশ্রয় পেয়েছেন কুতুপালং ক্যাম্পে।
তার মুখ থেকেই শুনে নিতে পারেন মিয়ানমারের সেনা নামক নরপশুদের পাশবিকতা। ‘বুচিডংয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরুষদের হত্যা করা হয়েছে। যারা পারছেন পালাচ্ছেন। এরপরই নেমে আসছে বাড়িতে থাকা নারীদের ওপর ভয়ঙ্কর নির্যাতন।’
আয়েশা সিদ্দিকা জানান, তার এলাকার বেশিরভাগ নারী বর্মি সেনাদের ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। বৃদ্ধারা পর্যন্ত রেহাই পাননি।
তিনি জানান, ধর্ষণেই থেমে থাকেনি জান্তারা। কারও স্তন কেটে সেখানে স্কচটেপ লেপটে দিয়েছে। ধর্ষণের পর কাঠের টুকরোকে বরশার ফলা বানিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছে গোপনাঙ্গে।
পাশবিকতার শিকার এই রোহিঙ্গা নারী বলেন, ‘বাড়ি বাড়ি ঢুকে ওরা (বর্মি সেনা) আমাদের মেয়েদের প্রকাশ্যে কাপড়-চোপড় খুলে জুলুম করেছে। আমাদের শিশুদের এদিক-সেদিক ছুঁড়ে মেরে হত্যা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘স্বামীকে হত্যার পরও ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে বাড়িতে ছিলাম। এক দিন এক ছেলেকেও গুলি করে মারল। এরপর এল আমার পালা। ওরা আচমকা এসে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করল। এভাবে আরও কয়েক দিন, শেষ পর্যন্ত টিকতে না পেরে কোনোমতে বাকি ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি।’
আয়েশা সিদ্দিকার ভাষ্যে, বুচিডংয়ে মিলিটারিরা ঘরে ঘরে ঢুকে তরুণীদের ওপর বেশি নির্যাতন চালিয়েছে। পরিবারের পুরুষরা বাধা দেওয়ার আগেই তাদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে। আর ধর্ষণে বাধা দিলে তাদের ইচ্ছেমতো মারধর করেছে।
তিনি বলেন, ‘ধর্ষণ করেই নরপশুরা ক্ষ্যান্ত হয়নি, কাঠের টুকরো ধারাল করে মেয়েদের লজ্জাস্থানে ঢুকিয়ে দিয়েছে। অনেকের স্তন টেনে উপড়ে ফেলেছে, কারও স্তন কেটে স্কচটেপ লাগিয়ে দিয়েছে। এভাবে দিনের পর দিন নির্যাতনে অনেক নারী মারা গেছে।’
আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘বৃদ্ধ নারী যার দাঁত নাই, চুল পেকে গেছে, তাদের পর্যন্তও রেহাই দেয়নি সেনারা।’
তিনি আরও জানান, আমাদের শিশুদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করেছে মিলিটারিরা। কাঁটাতার দিয়ে তাদের ইচ্ছেমত আঘাত করে মেরে ফেলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযানের ঘোষণা দিয়ে আগে থেকেই রাখাইনের রোহিঙ্গা গ্রামগুলো অবরুদ্ধ করে রাখে। এরই মধ্যে রোহিঙ্গা যোদ্ধারা অন্তত ২৫টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে গত ২৪ আগস্ট মধ্যরাতের পরে প্রবেশের চেষ্টা করলে শুরু হয় সংঘর্ষ।
ওইদিনের পর থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন। সেনা অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র হিসাবে, সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২৫ আগস্ট থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
গত বছরের অক্টোবরে একই ধরনের ঘটনায় পালিয়ে আসে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা। এভাবে কয়েক দশক ধরে শুধুমাত্র বাংলাদেশেই ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, এখন পর্যন্ত বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠা শরণার্থী সংকট হচ্ছে রোহিঙ্গারা। সংস্থাটি মিয়ানমার সেনা বাহিনীর এই নির্মমতাকে ‘গণহত্যা’ ও ‘জাতিগত নিধন’ বলে উল্লেখ করেছে।
সূত্র: পরির্বতন