হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হতো এবং ঝড়ো বাতাস বইত; তখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চেহারায়
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হতো এবং ঝড়ো বাতাস বইত; তখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চেহারায় পেরেশানির ভাব ফুটে উঠত। এ অবস্থায় এদিক-সেদিক পায়চারি করতে থাকতেন এবং এ দোয়া পড়তে থাকতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা-ফিহা ওয়া খাইরা মা-উরসিলাত বিহি, ওয়া আঊজু বিকা মিন শার্রিহা-ওয়া শার্রি মা-ফিহা-ওয়া শার্রি মা-উরসিলাত বিহি। ’
অতঃপর যখন বৃষ্টি হতো, তখন তিনি শান্ত হতেন। ’
আয়েশা (রা.) আরো বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম যে লোকজন মেঘ দেখলে বৃষ্টির আশায় আনন্দিত হয়ে থাকে, আর আপনি এতে পেরেশান হয়ে থাকেন?’
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আমি এ ভেবে শঙ্কিত হই যে তা আমার উম্মতের ওপর আজাব হিসেবে পতিত হয় কি না, কেননা পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপর এ পদ্ধতিতে আজাব পতিত হয়েছিল। ’ (মুসলিম, হা. ৮৯৯)
নামাজে মনোযোগ ধরে রাখার কিছু টিপস
আপনি যেই ব্যবসা, চাকরী বা কাজই করুন না কেন, আল্লাহ একটি সয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া আমদের মাঝে চালু রেখেছেন, একটি স্বর্গীয় প্রক্রিয়া যার মধ্য দিয়ে কোন ব্যক্তি মরুভুমিতে থাকুক, কিংবা নিউইয়র্কে থাকুক, বা কোন বনের মাঝে থাকুক, যেখানেই থাকুক না কেন সে সবসময় আল্লাহর সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকবে। কিসের মাধ্যমে? সালাত বা নামাজের মাধ্যমে। আপনি নামাজ পড়েই এটা ভাবতে পারেন না যে আল্লাহর সাথে আপনার যোগাযোগ স্থাপিত হয়ে গেল।
আপনার নামাজের মাঝে একটি বিশেষ গোপন উপাদান থাকতে হবে, যা আপনাকে আল্লাহর সাথে যুক্ত রাখবে। যদি সেই জিনিস অনুপস্থিত থাকে তাহলে আপনার নামাজ হয়ে পড়বে অন্তঃসারশূন্য একটি ব্যাপার। হ্যাঁ, আপনি অন্তত নামাজের জন্য হয়তো দাঁড়াচ্ছেন কিন্তু সেখানে একটা ফাঁক রয়ে যাচ্ছে। এখন সেই গোপন জিনিসটি কি? আল্লাহ বলছেন قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ ”মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে”, ’الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ ‘ এখানে গোপন জিনিসটি হলো خَاشِعُونَ সত্যিকারের মু’মিনরাই সফল হয়েছে, যাদের সালাতে রয়েছে খুশু। বিনম্রতা, আনুগত্য, অখন্ড মনোযোগ, এই সবকিছুই হচ্ছে খুশু।
প্রকৃত অর্থে যেটা আমাদেরকে করতে বলা হয়েছে তা হল, যেই মাত্র আমি বলবো আল্লাহু আকবার, আমরা অন্য আরেকটি জগতে চলে যাব, এই দুনিয়া তখন আপনার কাছে অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে, আপনার সন্তানের কথা মনে থাকবে না, স্ত্রীর কথা মনে থাকবে না, আপনার কাজের কথা মনে থাকবে না, কোন কিছুরি অস্তিত্ব থাকবে না, শুধু মাত্র আপনি এবং আল্লাহ, ব্যাস। যখন আমরা নামাজে দাঁড়াবো তখন আমাদেরকে এই রকম মনোজগতে প্রবেশ করতে হবে।
তাই সাধারণভাবে বলা হয় যে নামাজের জন্য একটি নিরিবিলি জায়গায় দাঁড়াতে। আর আমার ব্যক্তিগত উপদেশ হচ্ছে নামাজ শুরু করার আগে সেই জায়গায় আগে চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকুন এবং মনের সব চিন্তাভাবনা আগে সরিয়ে ফেলুন, মাথা থেকে সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন, এবং নিজেকে শুধুমাত্র সালাতের সাথে যুক্ত করুন।
এবং যখন নামাজ পড়বেন, জানুন যে কি পড়ছেন, যদি আরবী নাও জানেন, তাহলেও কিছু শব্দ ভান্ডার গড়ুন, বিভিন্ন লেকচার শুনুন, তাফসীর পড়ুন, অন্তত যেই আয়াতগুলো আপনার মুখস্ত সেগুলোর। যাতে সেই আয়াতগুলোর সাথে আপনার গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে।
কারণ সালাহ মানেই হচ্ছে আল্লাহ এবং আপনার মাঝের কথোপকথন। আপনার নামাজ যদি ঠিক থাকে তাহলে আপনি আল্লাহর সাথে কানেক্টেড আছেন, আর যদি আপনার নামাজ দূর্বল থাকে,তাহলে আল্লাহর সাথে যোগাযোগও দুর্বল এমনকি যদি আপনি মসজিদেও থাকেন। অর্থাৎ মসজিদে থেকেও আপনার আল্লাহর সাথে কোন সম্পর্কই নাও থাকতে পারে, যদি আপনি নামাজে মনোযোগ না দেন। তাই এই প্রশ্নে আমার জবাব হচ্ছে সমস্যা আপনার কাজ নয়, সমস্যা হচ্ছে আপনার মনোযোগে। আল্লাহ ভাল জানেন।