ফার্মের মুরগি মানবদেহে ছড়াচ্ছে মরণঘাতী রোগ, আতকে উঠবেন বিস্তারিত জানলে
বেঁচে থাকার তাগিদেই প্রতিদিনি আমরা খাবার খাই। কিন্তু এই খাবারই যে আবার মানুষকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করছে সে খেয়াল কজনে রাখেন। মানুষের অসচেতনতাই এজন্য দায়ী।
আধুনিক শহুরে জীবন, ফাস্টফুড, বাসা বাড়িতে ফার্মের মুরগীর চাহিদা খুব বেশী। কিন্তু মুরগীর মাংসের নাম করে আমরা আসলে কী খাচ্ছি? কখনো কি জানতে চেয়েছি? জানার চেষ্টা করেছি? বা জেনে খাচ্ছি?
আগে হাস-মুরগি বড় হতো প্রাকৃতিকভাবে। রান্না করা ভাত, ধানের কুড়া ও ভুষি এসব খেয়ে বড় হতো হাস-মুরগি। আর ফার্মের মুরগির খাবার হলো দানাদার।
যার সাথে মিশ্রিত থাকে নানা রকম রাসায়নিক। যার কারণে এসব খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি বড় হয় ফার্মের মুরগি ওজনও বাড়ে। এসব খাবারে লুকিয়ে আছে মরণঘাতী ব্যাকটেরিয়াসহ মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর মারাত্বক জীবাণু। যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বুঝা সহজ নয়।
ফার্মের মুরগীকে যেসব খাবার খাওয়ানো হচ্ছে তাতে রয়েছে আর্সেনিক। এবং এই খাদ্য খাওয়ার পর আর্সেনিক সম্পূর্ণভাবে হজম না হয়ে সংক্রামিত হচ্ছে মুরগীর মাংসে। আর এ মাংস খাবার সঙ্গে সঙ্গে তা চলে আসছে মানব দেহে।
অনেকেই মনে করেন রান্নার পর মুরগীর মংসে আর্সেনিক থাকে না। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে রান্না করলে মুরগীর মাংসে যে আর্সেনিক থাকে তা ধংস হয় না।
আমরা যেই তাপে রান্না করে থাকি আর্সেনিকের স্ফুটনাংক তার চাইতেও বেশি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীসম্পদ বিভাগের অধ্যাপক রতন কান্তি বিশ্বাস আরটিভি অনলাইনকে বলেন, বেশীরভাগ ফার্মের মুরগিতেই রয়েছে এমনসব মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু যা মানবদেহের জন্য খুব ক্ষতিকর।
মুরগীর দেহে হিউম্যান অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়। এতে মুরগী খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়। এর ফলে খুব বেশি খাবার দেয়ার দরকার হয় না।
আর দানাদার যেসব খাবার মুরগিকে খেতে দেয়া হয়, তাতেও মিশ্রণ করা হয় নানারকম রাসায়নিক।
আর এসব মুরগীর মাংস খেলে মানুষের শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। ফার্মের মুরগীর মাংসে আর্সেনিকও রয়েছে। নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, হরমোন ও ওষুধের ফলে এমন হয়।
তিনি বলেন, ৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রে মুরগীর ব্রেস্টে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়ে থাকে। আর এসবেরই মূল কারণ স্বাভাবিক উপায়ে বাড়তে না দিয়ে তাড়াতাড়ি মুরগীকে বড় করে তোলার চেষ্টা।
মুরগির বৃদ্ধির জন্য গ্রোথ হরমোন প্রয়োগ করা হয়। ফলে মুরগি তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যায়। দেখেন না, বড় চেহারার মুরগীগুলোর সঙ্গে আগেকারদিনের দেশি মুরগীর কোন তুলনা হয় না।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতালের লিভার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আবু হানিফ আরটিভি অনলাইনকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ছোট-বড় সকলেই মুরগীর মাংস খেতে পছন্দ করেন। অন্য নানা ধরনের মাংসের চেয়ে এটি অনেক বেশি সহজলভ্য বলে সবচেয়ে বেশি মুরগীর মাংসই খাওয়া হয়ে থাকে। ফলে দেশে ফার্মের মুরগীর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
এমনকি গ্রামেও পাওয়া যাচ্ছে। খুব সহজেই এই মাংস রান্না করা যায় ও শরীরের জন্যও বেশ উপকারী। তবে এতে নানা রোগ সংক্রমিত হতে পারে। এ ব্যাপারে মুরগির খামারি ও ক্রেতা সাধারণকে সচেতন হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ডঃ আবুল হোসেনের এক গবেষণায় দেখা যায় দেশি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে এমন ফার্মের মুরগির ক্রমিয়ামের পরিমাণ উচ্চ পর্যায়ে।
যা মানুষের শরীরে ধীরে ধীরে ক্যান্সার এর কোষ গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, এক গবেষণায় একটি ফার্মের মুরগির রক্তে নিম্বের উপাদানগুলো পাওয়া যায়।
মুরগির মাংসে পাওয়া গেছে ৭৯০ মাইক্রোগ্রাম ক্রোমিয়াম।
মুরগির মাংসে পাওয়া গেছে ৩৫০ মাইক্রোগ্রাম ক্রোমিয়াম।
মুরগির হাড়ে পাওয়া গেছে ২০০০ মাইক্রোগ্রাম ক্রোমিয়াম।
মুরগির কলিজায় পাওয়া গেছে ৬১২ মাইক্রোগ্রাম ক্রোমিয়াম।
মুরগির মগজে পাওয়া গেছে ৪,৫২০ মাইক্রোগ্রাম ক্রোমিয়াম।
ড. আবুল হোসেন বলেন, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ দৈনিক খাবারের সঙ্গে ৩৫ মাইক্রোগ্রাম ক্রোমিয়াম খেতে পারে, অথচ সেখানে আমরা গড়ে ৯০ থেকে ৯৭ মাইক্রোগ্রাম খাচ্ছি।
যা আমাদের শরীরের জন্য ভয়ংকর হুমকি স্বরূপ।
বিভিন্ন সূত্র মতে, ঢাকার চামড়ার ট্যানারিগুলোতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার পর চামড়ার উচ্ছিষ্টগুলো প্যাকেট হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের মুরগির খাবার প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো কাছে। এসব কোম্পানি মুরগির খাবার তৈরিতে চামড়ার এই উচ্ছিষ্ট ব্যবহার করছে।
যাতে পাওয়া গেছে ভয়াবহ ক্রোমিয়াম! মানুষের শরীরে যদি একবার ক্রোমিয়াম প্রবেশ করে তবে তা মানুষের শরীরের কোষগুলো নষ্ট করে দেয়। এতে ওই কোষের পাশে থাকা অন্যান্য কোষও নষ্ট হতে থাকে। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ক্যান্সার বলা হয়ে থাকে!
অপর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মুরগিকে দেয়া হচ্ছে সিফ্রোফ্রক্সাসিন নামের অ্যান্টিবায়োটিক। এই উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক মুরগির ডিম এবং মাংসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণায় দেখা গেছে মুরগির শরীরে এবং ডিমে পাওয়া যাচ্ছে মানুষের শরীরে সহনীয় মাত্রা থেকে প্রায় ৫ গুণ বেশি সিফ্রোফ্রক্সসিন অ্যান্টিবায়োটিক।
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা সাময়িকীর এক গবেষক জানান, আমরা গবেষণাকালে রাজধানীর ফুলবাড়িয়া, বঙ্গবাজার চানখাঁরপুল এলাকা এবং হাজারীবাগের ট্যানারি এলাকার পোল্ট্রি ফিডের কারখানা থেকে সরাসরি এসব খাদ্য কিনে মুরগিকে খাইয়েছি।
এ ছাড়া গবেষণায় ট্যানারির চামড়া সংরক্ষণের জন্য ক্রোমিয়াম ছিটানোর পর সেই চামড়ার বর্জ্য পরীক্ষা করে প্রতি কেজিতে ১৪ হাজার মিলিগ্রাম ক্রোমিয়াম পেয়েছি। একইভাবে ওই ট্যানারির বর্জ্য থেকে উৎপাদিত মুরগির খাদ্যে প্রতি কেজিতে আট হাজার মাইক্রোগ্রাম ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি পেয়েছি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মুরগির খাদ্য হিসেবে অনেক খামারে ব্যবহার করা হয় নানা বিষাক্ত রাসায়নিকযুক্ত খাবার।
এ ছাড়া মানুষের জন্য ক্ষতিকর নানা হরমোন বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োগ করা হয় মুরগির শরীরে, যা আগুনের তাপে নষ্ট না হওয়ায় ওই মাংসের মাধ্যমে তা ঢুকে পড়ে মানবদেহে।
একপর্যায়ে মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়ে ক্যান্সার, হৃদরোগ, গ্যাসট্রিক আলসারে। বিকল হয়ে পড়ে কিডনি ও লিভার। শেষ পরিণতি হিসেবে মানুষ ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে।