বাংলাদেশ বনাম আর্জেন্টিনার ক্রিকেট ম্যাচটির কথা মনে আছে?
স্পোর্টস ডেস্ক: বিশ্ব মানচিত্রে আর্জেন্টিনা নামক দেশটি বিখ্যাত ফুটবলের জন্য। ম্যারাডোনা থেকে লিওনেল মেসি- বিখ্যাত সব ফুটবল জাদুকরের জন্ম এই দেশে। আর্জেন্টিনার মানুষ ফুটবল খায়, ফুটবল ঘুমায়, ফুটবলেই নাকি জীবন পার করে! এছাড়া রাগবি এবং মেয়েদের হকিও ব্যাপক জনপ্রিয় দেশটিতে। পাশাপাশি আছে সন্ত্রাস-মাদক আর খুনোখুনির কুখ্যাতি। কিন্তু এটা জানেন কি, আর্জেন্টিনাতেও ক্রিকেট দল আছে! এমনকী তারা বাংলাদেশের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ম্যাচও খেলেছে?
এতটা পড়ে যদি অবাক হয়ে যান, তাহলে জেনে নিন আরও চমক অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। আজ থেকে দেড়শ বছর আগে ১৮৬৮ সালে উরুগুয়ের বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিল আর্জেন্টিনা। লুইস সুয়ারেসের সেই উরুগুয়েও এখন ফুটবলের জন্যও পরিচিত। ১৯৭৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপেই বাছাপর্বে খেলেছিল আর্জেন্টিনা! ওই গ্রুপে ছিল বারমুডা, পূর্ব আফ্রিকা, পাপুয়া নিউগিনি এবং সিঙ্গাপুর। এর আগে ১৯১২ সালে এমসিসির একটা দল আর্জেন্টিনা সফরে গিয়েছিল। তিন ম্যাচের সিরিজে প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছিল আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনার ক্রিকেট ইতিহাস অনেক পুরনো হলেও সেখানে এখনও পেশাদার ক্রিকেট দল গড়ে ওঠেনি। হাতে গোনা কয়েকজন ক্রিকেপ্রেমী তরুণ জাতীয় দল হিসেবে এখনও ক্রিকেট খেলে বেড়ান। কিন্তু সরকারী কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই। দর্শকের অভাবে আর্জেন্টিনার স্থানীয় কোনো চ্যানেলে কখনই ক্রিকেট ম্যাচ লাইভ দেখানো হয় না। স্পনসরের তো প্রশ্নই আসে না। সত্যিকার অর্থে আর্জেন্টিনার গুটিকয়েক মানুষ কেবল ক্রিকেট সম্পর্কে জানে। ১৯৭৪ সালে আইসিসির সদস্য হয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু ক্রিকেটকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে আইসিসির কেন যেন আপত্তি আছে!
এবার আসা যাক বাংলাদেশ বনাম আর্জেন্টিনা ম্যাচের প্রসঙ্গে। ১৯৮৬ সালের ২৫ জুন হেয়ারফোর্ডে আইসিসি ট্রফিতে প্রথমবার বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা। ওই সময় বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। ওই ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে ১২২ রানে অল-আউট হয়েছিল আর্জেন্টিনা। ওপেনার রকিবুল হাসানের অপরাজিত ৪৭ রানে ভর করে ৭ উইকেটে সহজেই জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর ১৯৯৪ আর ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফিতেও দুই দলের দেখা হয়েছিল। দুটি ম্যাচেই জয় পেয়েছিল টাইগাররা।
১৯৮৬ থেকে ২০০১ আইসিসি ট্রফিতে উপস্থিতি ছিল আর্জেন্টিনার। ২০০৭ সালে আইসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগে সর্বশেষ ‘লিস্ট এ’ ম্যাচ খেলেছিল দলটি। এরপর থেকে কেবলই পিছিয়ে যাওয়া। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি মোটেও উৎসাহ দেখায়নি আর্জেন্টিনার ক্রিকেট প্রসারে। শুধু আর্জেন্টিনা কেন, গোটা বিশ্বকেই যেন ক্রিকেট থেকে দূরে রাখতে পারলে খুশি হত আইসিসি। ক্রিকেটটাকে হাতে গোনা তিন-চারটি দেশের খেলা বানিয়ে ফেলার অবস্থান থেকে এখনও সরে আসতে পারছেনা ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
তবে আশার কথা হলো, বছর কয়েক আগে আর্জেন্টিনা ক্রিকেট বোর্ড পুনর্গঠিত হয়েছে। সেখানে এখন স্কুল পর্যায় থেকে ক্রিকেটার তুলে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। গড়ে তোলা হচ্ছে অবকাঠামো। যদিও এখনও কোনো ক্রিকেট স্টেডিয়াম নেই সে দেশে। প্রায় ১২টি স্কুলের মাঠকেই ক্রিকেট খেলার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। স্কুলগুলোতে ক্রিকেট দল তৈরী করা হয়েছে। কেবল তাই নয়, বোর্ডের ঐকন্তিক প্রচেষ্টায় আর্জেন্টিনায় নারী ক্রিকেট দলও গঠিত হয়েছে। এভাবেই দেশটির মুষ্টিমেয় ক্রিকেটপ্রেমীরা আবারও ক্রিকেটে পূনর্জাগরণের স্বপ্ন দেখছে।