174314

বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য, কেন রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করা হচ্ছে!

জ্বলছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। ঘটনার ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের সামপ্রতিক রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে অনেকে বলছেন, জাতিগত সংঘাত, আবার কেউ বলছেন ধর্মীয় বিদ্বেষ।

তবে মিয়ানমারের সা¤প্রতিক রোহিঙ্গা সংকটের নেপথ্যে বহুমাত্রিক কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন রুশ বিশেষজ্ঞরা।

তাদের দাবি, এ সংকটের পেছনে অভ্যন্তরীণ ও বহির্দেশীয় দুই কারণই রয়েছে এবং বড় বড় ভূ-রাজনৈতিক ক্রীড়ানকরা এর সঙ্গে জড়িত।

বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতামতের বরাত দিয়ে রুশ সংবাদমাধ্যম স্পুটনিকের এক প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা সংকটের নেপথ্যের কিছু সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরা হয়েছে।

ইন্সটিটিউট অব ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ অব দ্য রাশিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সেস-এর সেন্টার ফর সাউথ ইস্ট এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং ওশেনিয়াবিষয়ক পরিচালক দিমিত্রি মোসিয়াকভ আরটিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

তার দাবি, আন্তর্জাতিক ক্রীড়নকরা রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আরও উসকে দিচ্ছে। মোসিয়াকভের মতে, রোহিঙ্গা সংকট অন্ততপক্ষে একটি তিন মাত্রিক ঘটনা। প্রথমত, এটি চীনবিরোধী একটি খেলা।

কারণ আরাকানে (রাখাইন রাজ্য) চীনের বিশাল বিনিয়োগ আছে। দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মুসলিম উগ্রপন্থা ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এমনটা করা হচ্ছে।

তৃতীয়ত, আসিয়ানের মধ্যে অনৈক্য (মিয়ানমার ও মুসলিমপ্রধান দেশ ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মধ্যে অনৈক্য) তৈরি করার প্রচেষ্টা এটি।

মোসিয়াকভের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করতে শতাব্দী ধরে চলা এ সংঘাতকে ব্যবহার করেছে আন্তর্জাতিক খেলুড়েরা। বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যের উপকূলীয় এলাকায় হাউড্রোকার্বনের বিপুল রিজার্ভের দিকে দৃষ্টি রয়েছে তাদের।

মোসিয়াকভ বলেন, মিয়ানমারের সাবেক সেনাশাসক থান শুয়ের নামে প্রচুর সংখ্যক গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে। পাশাপাশি আরাকানের উপকূলীয় অঞ্চলে হাউড্রোকার্বন রয়েছে বলে অনেকটাই নিশ্চিত।

২০০৪ সালে রাখাইনে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি সম্পদের সন্ধান পাওয়ার পর সেখানে চীনের দৃষ্টি পড়ে। ২০১৩ সাল নাগাদ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য পাইপলাইন নির্মাণের কাজ শেষ করে দেশটি।

এ পাইপলাইন মিয়ানমারের বন্দর শহর কিয়াউকফিউকে চীনের ইউনান প্রদেশের শহর কুনমিংকে যুক্ত করেছে। তেলের এ পাইপলাইনটির মাধ্যমে বেইজিং মালাক্কা প্রণালি হয়ে মিডল ইস্টার্ন ও আফ্রিকান তেল সরবরাহের সুযোগ পায় বেইজিং।

আর গ্যাস পাইপলাইনটি ব্যবহার করা হয়, মিয়ানমারের উপকূলীয় ক্ষেত্র থেকে চীনে হাইড্রোকার্বন সরবরাহের জন্য। স্পুটনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১-২০১২ সালে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংকট থেকে বাঁচতে যখন ১,২০,০০০ মানুষ অন্য দেশে আশ্রয় খুঁজছিলেন তখন কাকতালীয়ভাবে সিনো-

মিয়ানমার জ্বালানি প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছিল। ইন্সটিটিউট ফর স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ অ্যান্ড প্রোগনোসিস অ্যাট দ্য পিপল’স ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি অব রাশিয়া-এর উপ-পরিচালক দিমিত্রি এগোরচেনকভ একে কাকতালীয় ঘটনা বলতে চান না।

তার মতে, রোহিঙ্গা সংকটের পেছনে নির্দিষ্ট কয়েকটি অভ্যন্তরীণ কারণ থাকলেও এক্ষেত্রে বিদেশি মদদও রয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র।

মিয়ানমারের অস্থিতিশীলতা চীনের জ্বালানি প্রকল্পগুলোতে প্রভাব ফেলতে পারে এবং বেইজিংয়ের দ্বারপ্রান্তেও অস্থিতিশীলতার বীজ বপন করতে পারে। চীনের প্রতিবেশী দেশ উত্তর কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের চলমান উত্তেজনার মধ্যে ক্রসফায়ারে পড়তে পারে চীন।

হাঙ্গেরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন বিনিয়োগকারী জর্জ সরোস এর অর্থায়নে পরিচালিত কয়েকটি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত বার্মা টাস্ক ফোর্স ২০১৩ সাল থেকে সক্রিয়ভাবে মিয়ানমারে কাজ করছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে আহŸান জানিয়ে আসছে তারা।

অবশ্য, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জর্জ সরোস হস্তক্ষেপ করছেন আরও আগে থেকে। মিয়ানমারে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পট-পরিবর্তনের জন্য অন্য দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয় বাড়াতে ২০০৩ সালে একটি মার্কিন টাস্কফোর্স গ্রæপের সঙ্গে যোগ দেন জর্জ সরোস।

দ্য কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশন্স (সিএফআর) এর ২০০৩ সালের নথির বরাত দিয়ে স্পুটনিক জানায়, ‘বার্মা: টাইম ফর চেঞ্জ’ শিরোনামের ওই নথিতে ওই টাস্কফোর্স গ্রæপ গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

সেখানে জোর দিয়ে বলা হয়েছিল, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের সহায়তা ছাড়া গণতন্ত্র টিকতে পারে না।’ আরটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইন্সটিটিউট ফর স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ অ্যান্ড প্রোগনোসিস অ্যাট দ্য পিপল’স ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি অব রাশিয়া এর উপ পরিচালক দিমিত্রি এগোরচেনকভ

বলেন, ‘যখন জর্জ সরোস এদেশে আসেন অথবা ওই দেশে যান…তখন তিনি ধর্মীয়, জাতিগত কিংবা সামাজিক বৈপরীত্য খুঁজতে থাকেন এবং এগুলো থেকে যেকোনও একটিকে বেছে নেন কিংবা এগুলোর মিশ্রণ তৈরি করেন এবং তাদেরকে উষ্ণ করে তোলার চেষ্টা করেন।

অন্যদিকে মোসিয়াকভের মতে, বিশ্বের কিছু প্রতিষ্ঠিত অর্থনীতির দেশ আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ উত্তেজনায় মদদ দিয়ে সেইসব দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লাগাম টেনে ধরতে চায়।

আঞ্চলিক সংঘাতকে উসকে দিয়ে সার্বভৌমত্বের দেশগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং চাপ তৈরি করতে চায়।

ad

পাঠকের মতামত