174041

ধুর, এটা কোনো হিরো হইলো নাকি : শাবনূর

আজ স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহর ২১তম প্রয়াণ দিবস। তার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ছবিতে (১৪টি) অভিনয় করেছেন চিত্রনায়িকা শাবনূর। যার বেশিরভাগই ব্যবসাসফল। শুধু ছবিতে নয়, সালমানের ব্যক্তি জীবন সম্পর্কে কথা উঠলেও শাবনূর চলে আসেন। আজকের দিনে সালমানকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন শাবনূর। সেখানে উঠে এসেছে অনেক কথা-

সালমানের সঙ্গে প্রথম দেখা
দিন-তারিখ ঠিক মনে নাই। তবে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির শুটিং স্পটে এটা নিশ্চত। মা আর এহতেশাম দাদুর সঙ্গে এফডিসি গিয়েছিলাম। ঝর্না স্পটে একটি গানের শুটিং হচ্ছে। মৌসুমী আপু আর সালমান শাহ ছিলেন ওই গানের শুটিংয়ে। তখন ইশারা করে এহতেশাম দাদু বললেন, ‘ওই যে দেখ নতুন হিরো। নাম সালমান।’ এই হচ্ছে সালমান শাহর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা। সেদিন আমাদের কোনো কথা হয়নি। সুযোগও ছিল না। দেখেই চলে আসি। পরে মনে হলো, ধুর, এটা কোনো হিরো হইলো নাকি। কিন্তু যেদিন ছবিটা রিলিজ হলো, আমি ছবিটা দেখতে এহতেশাম দাদুর সঙ্গে হলে যাই। মৌসুমী আপুও সেদিন সঙ্গে ছিলেন। সেনানিবাসের একটি হলের পর্দায় সালমানকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই। এত চমৎকার অভিনয়। এত স্টাইলিশ একজন নায়ক। আমি তার ভক্ত হয়ে গেলাম।

সালমানের বিপরীতে অভিনয়
সালমানের সঙ্গে আমার প্রথম কথা হয় ‘তুমি আমার’ ছবির শুটিংয়ে। ১৯৯৪ সালের শেষের দিকে। পরিচয় হওয়ার পর সালমান বলল, ‘এই পিচ্চি, তুমিও কাজ করবা? তুমিও শুটিং করবা?’ এটা বলে হো হো করে হাসতে লাগলো। মজার বিষয় হচ্ছে, তারপর থেকে সালমান আমাকে পিচ্চি বলেই ডাকত। আমাকে কখনো নাম ধরে ডাকেনি। একসময় আমরা একজন আরেকজনকে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করতাম। সালমান বলত, ‘আমার কোনো বোন নাই তো, তুই আমার বোন’। সালমানের মা-বাবা দুজনই আমাকে খুব আদর করতেন। তারাও আমাকে মেয়ের মতোই দেখতেন।

সামিরার সঙ্গে বন্ধুত্ব
সালমান আর আমি প্রথম একসঙ্গে ঢাকার বাইরে যাই রাঙামাটিতে। ‘তুমি আমার’ ছবির শুটিং। আমরা একই হোটেলে ছিলাম। আমার মা এবং সালমানের স্ত্রী সামিরাও ছিল। সামিরা সব সময় আয়াতুল কুরসি পড়ত। সালমান আমার মাকে খুব সম্মান করত। ও সামিরাকে খুব ভালোবাসতো। আমার মাকে বলত, ‘আন্টি আন্টি, আমার কলিজাটাকে (সামিরা) একটু দেখে রাইখেন।’ আম্মার সঙ্গেও সামিরার চমৎকার সম্পর্ক ছিল। সালমান আউটডোরে কোথাও শুটিং করতে গেছে, সেখানে জুতা পছন্দ হয়েছে। কিংবা কোনো জামা পছন্দ হয়েছে। আমার জন্য সেই জুতা কিংবা জামা কিনে নিয়ে আসত। হঠাৎ এমন উপহার পেলে খুব ভালো লাগত। সালমানের চেয়ে সামিরা আমাকে বেশি উপহার দিত। দেখা গেল, কোনো শুটিংয়ের সময় ড্রেসের সঙ্গে ম্যাচিং করা কোনো গয়না তার কাছে আছে, সঙ্গে সঙ্গে তা আমাকে দিয়ে দিত। চুড়িও পরিয়ে দিত। আমাকে নানা বিষয়ে পরামর্শ দিত।

মানুষ হিসেবে সালমান
সালমান অনেক বড় মনের একজন মানুষ ছিল। ও মানুষকে শ্রদ্ধা করতে জানত। একদিন আমার মা শুটিংয়ের সেটে গেছে, সেখানে বসার কিছু ছিল না। ও পকেট থেকে টাকা বের করে দিয়ে প্রোডাকশনের একজনকে বলল দ্রুত একটা মোড়া কিনে নিয়ে আসার জন্য। মুরব্বিদের কীভাবে শ্রদ্ধা, ছোটদের কীভাবে আদর করতে হয়, সেটা সালমান খুব ভালো করেই জানত। সালমান মারা যাওয়ার পর প্রোডাকশনের এমন কোনো ছেলে বলেনি যে তাদের বাসায় সালমান যায়নি। প্রোডাকশন ছেলেদের সুখে-দুঃখে সালমান সব সময় পাশে ছিল। টাকা দিয়ে কিংবা মানসিকভাবেই হোক, সালমান তার অবস্থান থেকে সবাইকে সহযোগিতা করে গেছে। চলচ্চিত্রের কেউ বিপদে পড়েছে অথচ সালমানের কাছে গিয়ে সহযোগিতা পায়নি, এমন নজির নাই। ভালো মনের একজন মানুষ। ওর যে শ্রদ্ধাবোধ ছিল, তা এখন অনেকের মাঝেই দেখি না। ২৪বিবিডি.কম

ad

পাঠকের মতামত