173086

‘আফরোজকে আমার শরীর, মন সব দিয়েছি’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রোজ ফোনে কথাবার্তার চলতে চলতে দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। সেই সময়ে যুবতীর পরিবার তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। সেকথা যুবতী তার প্রেমিককে জানায়।

মঙ্গলবারই ঐতিহাসিক রায় দিয়ে তিন তালাককে অবৈধ ঘোষণা করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তিনটি শব্দ উচ্চারণ করেই সারাজীবনের মতো স্ত্রীকে প্রাক্তন করে দেওয়ার এই সামাজিক রীতি থেকে মুসলিম মহিলাদের মুক্তি দিয়েছে ভারতের শীর্ষ আদালত।

আসলে মহিলাদের যন্ত্রণা যে কতটা, পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরের এক যুবতীর পরিণতিতেই তা ফের প্রমাণিত হল। অন্ধ বিশ্বাসে যার সঙ্গে একদিন ঘর ছেড়েছিলেন, তার বিরুদ্ধেই এখন লিফলেট ছাপিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে বিচার চাইছেন এই তরুণী। বিয়ে না করেই যার সঙ্গে দিনের পর দিন কাটিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি, সেই যুবকই তাকে একরকম ‘তালাক’ দিয়েছেন। যার ফলে সব হারিয়ে এখন বিচারের অপেক্ষায় দিন গুনছেন এই তরুণী।

আদতে পুরুলিয়ার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের এই যুবতীর এখন ২৭ বছর বয়স। 8 বছর আগে মোবাইল ফোন মারফত তার সঙ্গে দুর্গাপুরের বাসিন্দা আফরোজ আখতার নামে এক যুবকের যোগাযোগ হয়। রোজ ফোনে কথাবার্তার চলতে চলতে দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। সেই সময়ে যুবতীর পরিবার তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। সেকথা যুবতী তার প্রেমিককে জানায়। তখন তার প্রেমিক আফরোজ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়। পাশাপাশি পরিবারকে চাকরি করার কথা বলে যুবতীকে দুর্গাপুরে চলে আসতে বলে।

প্রেমিকের কথা বিশ্বাস করে যুবতী দুর্গাপুরে চলে আসে। যুবতীর দাবি, এর পরে তাকে নিয়ে দুর্গাপুর এবং আসানসোলের বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে আফরোজ। তার সঙ্গে ওই যুবকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয় বলেও দাবি।

বেশ কিছুদিন একসঙ্গে থাকার পরে বিয়ের জন্য আফরোজকে চাপ দিতে থাকে যুবতী। কিন্তু বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বিয়ে পিছোতে থাকে আফরোজ। এর পরে খোঁজ নিয়ে যুবতী জানতে পারেন, আফরোজ আগে থেকেই বিবাহিত। তার একটি সন্তানও আছে।

তার পরেই ওই যুবতী আসানসোল আদালতের দারস্থ হন। পাশাপাশি দুর্গাপুর থানায় লিখিত আভিযোগও জানান। যুবতীকে মারধর শুরু করে আফরোজ। তার ব্যক্তিগত ছবিও ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেয় ওই যুবক। শুধু তাই নয়, আফরোজের পরিবারও যুবতীকে মারধর করে বলেও অভিযোগ।

যুবতীর অভিযোগের ভিত্তিতে আফরোজকে গ্রেফতারও করে দুর্গাপুর থানার পুলিশ। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সে জামিন পায়। এত কিছুর পরে নিজের বাবা মায়ের কাছে ফিরে যাননি ওই যুবতী। তিনি এখনও আফরোজের সঙ্গেই ঘর বাঁধতে চান।

আফরোজ পেশায় ব্যবসায়ী। দুর্গাপুরে চণ্ডীদাস এলাকায় তার দোকান। সেই দোকানের বাইরে গিয়েও শুয়ে থাকতেন তিনি। শেষপর্যন্ত আশপাশের ব্যবসায়ীরা যুবতীর পাশে দাঁড়িয়েছে। এই মুহূর্তে যুবতীর নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে দোকানদার থেকে স্থানীয় প্রতিবেশী মহিলারা যথেষ্ট চিন্তিত। ঘর বাঁধার স্বপ্ন ত্যাগ করে যুবতী এখন আফরোজ আখতারের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

যদিও একবার গ্রেফতার করলেও আফরোজের বিরুদ্ধে পুলিশ এখন আর কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলেই যুবতীর অভিযোগ। বাধ্য হয়ে এখন প্রেমিকের বিরুদ্ধে লিফলেট ছাপিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে বিচার চাইছেন ওই যুবতী। দিনের পর দিন কীভাবে আফরোজ তাঁকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে শোষণ করেছে, সেই অভিজ্ঞতার কথাই লিফলেটে লিখেছেন তিনি।

এ বিষয়ে পুলিশের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার ওই যুবতীর কাউন্সিলিং করা হয়েছে। তাতেও অবশ্য নিজের পুরুলিয়ার বাড়িতে ফিরতে নারাজ তিনি। অভিযুক্ত যুবকের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

ad

পাঠকের মতামত