173001

যারা ‘বাঁচাতে’ চেয়েছিলেন নূর হোসেনকে

নারায়ণগঞ্জে আলোচিত ৭ খুন মামলায় আসামিদের নিম্ন আদালতের দেওয়া দণ্ড বহাল থাকবে, নাকি পরিবর্তিত হবে সে সিদ্ধান্ত জানা যাবে আজ। এর আগে ৭ খুনের মামলায় নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রধান আসামি নূর হোসেন, র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২২ আগস্ট (আজ) রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়। নিহত পরিবারগুলোর প্রত্যাশা- উচ্চ আদালতেও বহাল থাকবে নিম্ন আদালতের রায়। আর তাতেই প্রশান্তি আসবে নিহত পরিবারগুলোতে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেনের হয়ে আইনি লড়াই চালিয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা। চাঞ্চল্যকর মামলাটির প্রধান আসামি নূর হোসেনের মুক্তির দাবিতে মিছিল করতেও দেখা গেছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের। নূর হোসেনের মতো র‌্যাবের চাকরিচ্যুত আসামিদের পক্ষেও ছিলেন আওয়ামী লীগঘনিষ্ঠ আইনজীবীরা।

গত ১৬ জানুয়ারি মামলায় রায় ঘোষণার সময় বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিল নূর হোসেনের পক্ষের আইনজীবীদের। তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থক অন্য আইনজীবীদের পাশাপাশি জেলা আইনজীবী সমিতির নেতাদের দেখা গেছে আনন্দ মিছিল করতে।

এই সমিতির ১৭টি পদের মধ্যে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ৯ জনই আওয়ামী লীগপন্থী। যদিও এর আগে এ আইনজীবী সমিতির নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে ন্যায়বিচার চেয়েছিলেন যার পরোক্ষ কারণ হিসেবেও নূর হোসেনকে সহযোগিতার অভিযোগ তোলা হয় বাদীপক্ষের কাছ থেকে।
এই মামলায় নূর হোসেনের পক্ষে খোকন সাহা, তারেক সাঈদের হয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের নেতা অ্যাডভোকেট সুলতানুজ্জামান (যিনি আগে পাবলিক প্রসিকিউটর ছিলেন) আর আরিফ হোসেনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন আড়াইহাজার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ ভূঁইয়া। মামলা চলার সময় পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) ওপর চাপ সৃষ্টি করতে দেখা গেছে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের।

গত বছরের ৩ মার্চ একটি মামলার বাদী ও নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটিকে কড়া সুরে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। ওই সময় নূর হোসেনসহ কয়েকজনকে নিঃশব্দে হাসতে দেখা যায়। সে দিন খোকন সাহাকে পাল্টা প্রশ্ন করে বিউটি বলেন, ‘একজন আইনজীবী মারা গেছেন। তাকে খুন করা হয়েছে। আর আপনি একজন আইনজীবী হয়ে কিভাবে এ মামলা করছেন? আপনি তো আপনার সহকর্মী আর ভাইয়ের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করছেন। সাত খুনের পর আপনি আমার বাসায় গিয়ে বলেছেন, সহায়তা করবেন। অথচ এখন আসামিদের পক্ষে কাজ করছেন। ‘

জবাবে খোকন সাহা বলেন, ‘আমি এখন একজন আইনজীবী হিসাবে মামলায় সহায়তা করছি। এখন আমি একজন আইনজীবী। ‘

সে দিন বিউটিকে অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি দেখেছেন, নূর হোসেন আপনার স্বামীসহ সাতজনকে অপহরণ করেছেন?’

উত্তরে বিউটি বলেন, ‘আমি যদি দেখতাম, তাহলে কি আর আমার স্বামীকে মারতে পারত। আপনি একজন আইনজীবী। যদি আজ আপনার বোন এভাবে স্বামীহারা হতো, তাহলে আপনার কেমন লাগত? সাতটি পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেল, অথচ আপনারা আসামিদের সহায়তা করছেন। ‘

১৬ জানুয়ারি রায় ঘোষণার পর নূর হোসেনের বরাত দিয়ে খোকন সাহা বলেন, নূর হোসেন বলেছেন যে আমি ন্যায়বিচার পাইনি। আমি এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট না। রায়ের বিরুদ্ধে অচিরেই উচ্চ আদালতে আপিল করব। আশা করি, উচ্চ আদালতে আমরা ন্যায়বিচার পাব।

ওই সময়ে তিনি আরো বলেন, আমি, অ্যাডভোকেট সুলতানুজ্জামান ও আব্দুর রশিদ পেশাদার আইনজীবী। আইনকে নিজস্ব গতিতে চলার জন্য আমরা এই মামলায় আসামিদের পক্ষে ছিলাম। আমরা স্বাধীনতার পর থেকে অর্ধশতাধিক মামলার শুনানি করেছি। আমরা প্রমাণ করেছি, এই ধরনের চাঞ্চল্যকর মামলায় শুনানি করার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন আইনজীবী নারায়ণগঞ্জে রয়েছে। আসামিরা এই রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকলে উচ্চ আদালতে আপিল এবং লিভ টু আপিল করতে পারবেন। আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করলে ন্যায়বিচার পাবেন বলেও মন্তব্য করেন খোকন সাহা।

সূত্র:কালের কণ্ঠ

ad

পাঠকের মতামত