পানিবন্দি ১০ হাজার পরিবার দোহারে
পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে ঢাকার দোহারে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এতে নয়াবাড়ী, মাহমুদপুর ও বিলাশপুর ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। গত তিনদিনে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তলিয়ে গেছে এসব এলাকার বসতবাড়িসহ ফসলী জমি।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গত দুইদিনে দোহার নবাবগঞ্জে ৫০ সে.মি. পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে প্রতিদিনই ডুবছে নতুন নতুন এলাকা ও ঘরবাড়ি।
শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত দোহারের মাহমুদপুর ও বিলাশপুর ইউনিয়নের সব গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বানের পানিতে তলিয়ে গেছে নারিশা ও নয়াবাড়ীর বেশিরভাগ গ্রাম ও রাস্তাঘাট।
পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার পরিবার। তাদের হাট বাজারে যেতে একমাত্র বাহন এখন নৌকাই ভরসা।
মাহমুদপুরের বাসিন্দা হান্নান শেখ জানান, সকালে ঘুম থেকে জেগেই দেখি আমার ঘর তলিয়ে গেছে পানিতে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে পরিবার পরিজন নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হবে।
সরেজমিনে দোহারের বিলাশপুর ইউনিয়নে গিয়ে বন্যার পানিতে অনেক গ্রামের ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ার চিত্র পাওয়া যায়।
কাঁচা-পাকা অনেক রাস্তাই ডুবে গেছে। এলাকার সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা পানি মাড়িয়ে তাদের প্রয়োজনীয় কাজে যাচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
গবাদিপশু ও হাঁস মুরগী রাস্তায় তুলে দেয়া হয়েছে। পানিতে ডুবে গেছে বিলাশপুরের মাঝিরচর, মধূর চর, রাধানগর, হাজার বিঘা, নারিশা জোয়ার, মাহমুদপুরের হরিচন্ডী, নারায়নপুর, চর কুশাইর চর জামার চরসহ প্রায় ৩০টি গ্রাম।
মধূরচর আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা রাহিমা বেগম বলেন, আমার স্বামী নেই। দুটি সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটছে। প্রতিদিন সাঁতরে বাজারে যেতে হয়। সাপের ভয়ও আছে। ঘরে খাবারও সংকট। ছেলেরা পানির কারণে দিনমজুরের কাজ করতে পারে না।
দোহার পৌরবাসিন্দা মনির হোসেন নৌকা নিয়ে ঘরবাড়ির আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
এদিকে পানির কারণে দোহার নবাবগঞ্জে প্রায় ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দোহারের সুন্দরীপাড়া, পুরুলিয়া, হরিচন্ডী, বিলাশপুর, রাধানগর এবং নবাবগঞ্জে জয়কৃষ্ণপুরের ঘোশাইল, চারাখালীতে প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে ডুবে গেছে।
বন্যার পানি প্রবেশ করেছে খোদ পৌরসভা এলাকায়। সোনার বাংলা গ্রামের অনেকগুলো বসতবাড়ি পানির নিচে। এ অবস্থা কতদিন স্থায়ী হবে তা নিয়ে শংকা দোহারবাসীর।
দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম আল আমিন বলেন, আমরা দোহারের বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখছি। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। এমপি মহোদয়ও নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে দ্রুত ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হবে।
দোহারের বন্যা পরিস্থিতির সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিচ্ছেন ঢাকা-১ আসনের এমপি সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম।
তিনি কয়েকদিন ধরে তার নিবার্চনী এলাকায় অবস্থান করছেন। দুই উপজেলার ইউএনওসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, দলীয় নেতাকর্মী ও সুশীল সমাজকে বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দেন। তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে দ্রুত ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করারও তাগিদ দেন।
এ দিকে নবাবগঞ্জের বান্দুরা ইউনিয়নের সাদাপুর ইছামতির শাখা নদীর পাশে প্রায় ৪০টি পরিবার বসতভিটে হারিয়েছে। গত কয়েকদিনে পানি বাড়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।