জনমত সৃষ্টির আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরাতে

pm_allnewssitebdবঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রত্যর্পণের ব্যাপারে জনমত তৈরির জন্য কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, কিভাবে একটি সভ্য দেশ অভিযুক্ত খুনিকে আশ্রয় দিতে পারে? প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের সামনে এই দাবি রেখে যাচ্ছি যে দেশে আপনারা বসবাস করছেন, সেই দেশের জনপ্রতিনিধিদের চিঠি লিখুন এবং এই চেতনাজাগ্রত করুন কেন এসব দেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের আশ্রয় দিচ্ছে। শনিবার রাতে কানাডার সেন্টার মন্ট রয়েলে দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কানাডা শাখা এই সংবর্ধনার আয়োজন করে।

 

 

 

আওয়ামী লীগ কানাডা শাখার সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ মাহমুদ মিয়ার সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান প্রিন্স অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী একেএম মোজাম্মেল হক এবং আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এসময় উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, যতদূর আমরা জানি বঙ্গবন্ধুর এক খুনি যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আছে। একজন কানাডায়, দুইজন পাকিস্তানে এবং অপর দুইজন কোথায় আছে সন্ধান পাওয়া যায়নি, আমরা তাদের আটকের জন্য খুঁজছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সরকারকে বলেছে, কেন তারা খুনিদের লালন করছে এবং আশ্রয় দিচ্ছে।

 

 

 

তিনি বলেন, তারা বলেছে, কানাডার সংবিধানে উল্লেখ আছে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ থাকলে তাকে তার দেশে ফেরত পাঠাবে না, ‘এটি কি ধরনের কথা’ বলে প্রধানমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, পিতা হারানোয় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা বাংলাদেশের নাগরিক এবং দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে। ‘কেন হত্যাকারীদের রক্ষার চেষ্টা হচ্ছে’, কেন এই দেশগুলো হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধে অভিযুক্তদের আশ্রয় দিচ্ছে। যদি এই খুনিরা তাদের দেশের নাগরিক হতো তাহলে সেটি বিষয় হতো। যদি তারা হত্যাকারীদের আশ্রয় দিতে চায় তাহলে সব হত্যাকারী সেই দেশের আশ্রয় চাইবে।

 

 

 

একথা উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, তারা কি তাহলে সকল খুনিকে আশ্রয় দেবে? প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর অর্থ হলো- যে দেশে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির বিধান নেই, সেই দেশ হত্যাকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এ জন্য জনমত সৃষ্টিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামনে আমি এই প্রশ্ন রেখে গেলাম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ১৯৯৬ সাল থেকে পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর হওয়া পর্যন্ত সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বাধার সম্মুখীন হয়েছে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধকালে যারা ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছে সেই ঘৃণ্য খুনিদের বিচার বন্ধের জন্য অনেক বড় জায়গা থেকে তিনি টেলিফোন পেয়েছেন। সরকার প্রধান বলেন, আমি তাদের বলেছি যে, আমাদের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন এবং এখানে আমাদের দেশের আইন রয়েছে এবং আইন অনুযায়ী রায় কার্যকর হবে।

 

 

 
প্রবাসী সন্তানদের বিষয়ে আরো সতর্কতার আহ্বান: এদিকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সন্তানরা যাতে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে আরো সতর্ক থাকার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, এটা কেউই আশা করে না যে, তারা (সন্তানরা) জল্লাদের মতো কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের সন্তানদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে বলবো- তারা কি করে, কোথায় যায় এবং তারা কাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশছে- এই দায়িত্ব অভিভাবক, শিক্ষক ও ইমাম সকলের- এক্ষেত্রে সকলের দৃষ্টি রাখতে হবে। তিনি বলেন, কেউ এটি আশা করে না যে, সচ্ছল পরিবারের সন্তান, যারা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে জল্লাদের মতো কাজ করবে। গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে কাপুরুষোচিত হামলার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ১লা জুলাই গুলশানের ওই ক্যাফেতে জঙ্গিরা কি রকম জঘন্যভাবে মানুষ হত্যা করেছে। এটি কল্পনা করা যায় না- একজন সুস্থ মানুষ কি করে এভাবে মানুষ হত্যা করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা গুলশানে হামলা চালিয়েছে তারা কানাডা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যত্র পড়াশোনা করেছে। সবাই আশা করে যারা বিদেশে পড়াশোনা করছে তারা উদার মনের হবে। এখন মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, কিভাবে তারা চরমপন্থায় এবং ইসলামের অপব্যাখ্যার সঙ্গে যুক্ত হলো। শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম তবে ইসলামের নামে কিছু মহল ইসলামকেই হেয় করছে। আল্লাহ শেষ বিচারের মালিক এবং আল্লাহ এই দায়িত্ব কাউকে দেননি।

ad

পাঠকের মতামত