ছাত্রীকে নৃশংস কায়দায় খুন: অভিযোগের তীর ছাত্রলীগ নেতার দিকে

Mirpur-student Killedঢাকায় ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী আফসানা ফেরদৌসের মৃত্যুর ঘটনায় তেজগাঁও কলেজ ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ করেছে তার পরিবার।

মিরপুরের সাইক ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজির স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থী আফসানাকে অচেতন অবস্থায় গত শনিবার রাতে কাফরুলের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ফেলে যায় দুই তরুণ। এরপর পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।

তার গলায় দাগ পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

আফসানাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবি করে এজন্য তেজগাঁও কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান রবিনকে দায়ী করছেন তার স্বজনরা।

ছোট ভাই ফজলে রাব্বি বলেন, “রবিনের সঙ্গে আমার বোনের বন্ধুত্ব ছিল। ঝগড়া-বিবাদের কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে আমরা সন্দেহ করছি।”

আফসানার স্বজন কবি ও গল্পকার মুজতবা আহমেদ মুরশেদ বলেন, আফসানা তেজগাঁও এলাকায় থাকাকালে রবিনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তাদের সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। পরে এলাকা ছেড়ে চলে যান আফসানা।

ঘটনার ১০ দিন আগে আফসানা ও রবিনের বন্ধুরা আবার দুজনকে মিল করিয়ে দেয়। তবে ঘটনার দুদিন আগে আবার সম্পর্কে ছেদ পড়ে।

এই নিয়ে আফসানাকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে তার স্বজনদের অভিযোগ।

এখন রবিনের ভাই-বন্ধু পরিচয় দিয়ে মোবাইলে আফসানার মা-ভাইকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে ‍অভিযোগ করে মুরশেদ বলেন, “তারা এই বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দিচ্ছে এবং মীমাংসা করার জন্য বলছে।”

এই ‘হত্যাকাণ্ডের’ সঙ্গে রবিন ছাড়াও সৌরভ ও বাবুসহ কয়েকজন জড়িত বলে অভিযোগ করছেন আফসানার স্বজনরা।

আফসানার গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে থাকে তার পরিবার। শনিবার রাতে তার মাকে মোবাইলে মেয়ের মৃত্যুসংবাদ জানিয়ে লাশ নিতে বলা হয় বলে মুজতবা আহমেদ মুরশেদ জানান।

তিনি বলেন, ওই দিন রাত ৯টার দিকে সৌরভ পরিচয় দিয়ে একজন আফসানার মায়ের কাছে ফোন করে জানায়, আফসানা মারা গেছে। তার লাশ বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা আছে। আপনারা এসে লাশ নিয়ে যান।

আফসানার মা সৈয়দা ইয়াসমীন ঢাকায় তার ভাইকে বিষয়টি জানালে স্বজনরা হাসপাতালে ছুটে গিয়ে সেখানে লাশ পাননি।

এরপর আরেকটি মোবাইল থেকে বাবু পরিচয় দিয়ে সৈয়দা ইয়াসমীনকে বলা হয়, কাফরুলের আল হেলাল হাসপাতালে আফসানার লাশ রয়েছে।

স্বজনরা আল হেলাল হাসপাতালে গেলে কর্তৃপক্ষ জানায়, এক তরুণীর লাশ এখানে এসেছিল। তবে পুলিশ নিয়ে গেছে।

হাসপাতালের কর্মচারীদের বরাত দিয়ে কাফরুল থানা পুলিশ বলেছে, দুই তরুণ অসুস্থ অবস্থায় এক তরুণীকে নিয়ে আসে। তারা সিএনজি অটোরিকশা থেকে নেমে ফটকে থাকা হাসপাতালের কর্মচারীদের রোগীর ট্রলি আনতে বলে। রোগীকে ট্রলিতে ওঠানোর পর অটো ভাড়া পরিশোধের কথা বলে তারা চলে যায়। এরপর আর ফেরেনি।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ওই তরুণীকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। পরে থানায় জানালে পুলিশ এসে লাশ নিয়ে যায়।

মুরশেদ জানান, তারা কাফরুল থানায় গেলে লাশের ছবি দেখে চিনতে পারেন। তখন পুলিশ তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে যেতে বলে। এরপর মর্গে গিয়ে আমরা লাশ সনাক্ত করি।

ঘটনাটি নিয়ে ফেসবুকে এক পোস্টে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ‘দোষীদের’ বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন মুরশেদ।

এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে জানিয়ে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ- কমিশনার মাসুদ আহমেদ বুধবার বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অবশ্য ঘটনার তদন্ত এরইমধ্যে শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এক-দুই দিনের মধ্যে তদন্তের সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে পল্লবীর একটি বাসা ভাড়া নিয়ে প্রায় দুই মাস ছিলেন। তাকে গ্রেপ্তার করার পর তার জবানবন্দি অনুযায়ীও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আল হেলাল হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে জানিয়ে কাফরুল থানার ওসি শিকদার মোহাম্মদ শামীম হোসেন বলেছেন, “সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।”

‘ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা’
সংগঠনের কর্মী আফসানার মৃত্যু নিয়ে বিকালে শাহবাগে প্রতিবাদী সমাবেশ করেছে ছাত্র ইউনিয়ন।

বক্তারা অভিযোগ করেন, আফসানাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু একটি মহল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার আগেই আত্মহত্যা বলে প্রচার চালাচ্ছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সমাবেশে বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। চার দিন পরেও রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি, বরং নানা কৌশলে ধামাচাপা দেওয়ার পাঁয়তারা করছে।”

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তারের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে সংঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দী, ঢাকা মহানগর সভাপতি অনিক রায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আল আমিন বক্তব্য দেন।

হামলার অভিযোগ
এই সমাবেশে যোগ দিতে তেজগাঁও কলেজ থেকে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা বের হওয়ার সময় কলেজ ক্যাম্পাসেই তাদের ওপর হামলা হয়েছে বলে সংগঠনের সভাপতি লাকী আক্তার অভিযোগ করেছেন।

সমাবেশে তিনি বলেন, “ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ছাত্র ইউনিয়নের কলেজ শাখার সভাপতি শামীম আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক অন্তু চন্দ্র নাথসহ পাঁচ নেতাকর্মীকে রড হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেরেবাংলা নগর থানার ওসি গণেশ গোপাল বিশ্বাস বলেন, হামলার খবর তার জানা নেই।

অন্যদিকে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগের তেজগাঁও কলেজ শাখার সভাপতি কামরুজ্জামান জামান বলেন, ছাত্র ইউনিয়নের কাউকে মারধরের কোনো ঘটনা তার জানা নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাবিবুর রহমান রবিনকে তিনি চেনেন। তবে সে ছাত্রলীগের কেউ না।

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

ad

পাঠকের মতামত