‘আমি এসআই আরেফিন, যারে ধরি তারে খাইয়া ফেলি’

Obaidur Mridha2একটি উত্তেজিত কর্কশ কণ্ঠ। কথাগুলো টানা বলে যাচ্ছেন পুলিশের একজন সাব ইন্সপেক্টর- ‘আমি আরেফিন, যারে ধরি তারে গিইল্লা ফেলি। আমি যারে টার্গেট করি তারে খাইয়া ফেলব। আমি ভালোর ভালো ফেরেশতার মতো না। আমি যারে টার্গেট করব সে আর বাঁইচা থাকতে পারে না।’

একটি অনলাইন পত্রিকার নিউজরুমের সামনে এসে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে, নিজের ফোনে একজন সাব-ইন্সপেক্টরের সাথে কথোপকথনের এই রেকর্ড শোনাচ্ছিলেন মিরপুরের রেন্ট এ কার ব্যবসায়ী ওবাদুর মৃধা। তার দাবি ওপাশ থেকে হুমকিগুলো দিচ্ছেন রাজধানীর ওয়ারী জোনের কদমতলী থানার এসআই তৌহিদুল আরেফিন। ওই অনলাইন পত্রিকার অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ হুমকিদাতা কদমতলী থানার এসআই তৌহিদুল আরেফিনই।

এসআই আরেফিনের সঙ্গে মৃধার পক্ষে কথোপকথনের সময় মাঝে মধ্যে শুধু জ্বি ভাই, জ্বি ভাই বলে গেছেন বেসরকারি টেলিভিশনের ওই ভিডিও জার্নালিস্ট (ক্যামেরা পার্সন)। যৌক্তিক কারণেই ওই ক্যামেরা পার্সনের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।

বেসরকারি টেলিভিশনের ক্যামেরা পার্সন ও মৃধা সম্পর্কে দুই ভাই। মৃধার পক্ষে সুপারিশ করতে ও মৃধাকে হয়রানি না করতে আরেফিনকে অনুরোধ জানাতে ফোন করেছিলেন ওই ক্যামেরা পার্সন।

ওবায়দুর মৃধা ওই অনলাইন পত্রিকার কাছে বর্ণনা করলেন এই হুমকির পেছনের কাহিনী। জানালেন, মিরপুর এলাকায় রেন্ট এ কারের ব্যবসা করেন তিনি। এসআই আরেফিন মিরপুর থানায় থাকার সময় তাদের পরিচয়। মিরপুর থেকে পল্লবী হয়ে এখন কদমতলী থানায় আছেন আরেফিন। চেষ্টা করছেন আবার মিরপুরে আসার। বাসা এখনও মিরপুরেই।

আনুমানিক তিন মাস আগে এসআই আরেফিন মৃধাকে ফোন করে বলেন, ‘কদমতলী থানার বাইরে তার একটি গাড়ি আছে, গাড়িটি নিয়ে যেতে। আরেফিনের কথায় মৃধা প্রায় অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকা গাড়িটি থানার সামনে থেকে ঠিক করে এনে ভাড়ায় চালাতে শুরু করেন।

মৃধার দাবি, প্রায় দু’মাসে গাড়িটি চালিয়ে অসংখ্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ব্যবসায়িক লাভ হয়নি। তাছাড়া গাড়ির কোনো কাগজপত্র চাইলে এসআই আরেফিন দিতে পারেননি। তাতে করে গাড়ির চালক একাধিকবার সার্জেন্ট এর হাতে হেনস্তা হয়েছেন বলে মৃধার অভিযোগ।

এ অবস্থায় গাড়িটি এসআই আরেফিনকে ফেরত দিতে চাইলে, আরেফিন তা কদমতলী থানায় দিয়ে যেতে বলেন। মৃধা তাই করেন। আর এ সময় এসআই আরেফিন তার গাড়ি দিয়ে ব্যবসার লাভ বাবদ ৪০ হাজার টাকা তাৎক্ষণিকভাবে মৃধার কাছে দাবি করেন।

এ প্রসঙ্গে এসআই আরেফিন ওই অনলাইন পত্রিকার কাছে মঙ্গলবার রাতে দাবি করেন যে, তিনি তিন মাস ব্যবসার হিসাবে মৃধার কাছে কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা পান। সেখানে ২০ হাজার টাকা কম দাবি করেছেন।

ওবায়দুর মৃধার অভিযোগ, টাকা পরিশোধ করতে না পারায় গত ১১ আগস্ট রাতে এসআই আরেফিন তাকে ধরে তার (আরেফিন) মিরপুরের বাসায় নিয়ে যান। সেই মুহূর্তেই টাকা দিতে বলেন। টাকা নেই বললে মৃধার কানে প্রচণ্ড জোড়ে চড় মারেন। এখনও সে ব্যথা যায়নি বলে মৃধা কু্ঁকড়ে উঠেন। মৃধার অভিযোগ, বাতাস চলাচল নেই এমন একটি বাথরুমে তাকে সারারাত আটকে রাখা হয়। বাথরুমটি আরেফিন যে বাসায় থাকেন তার নিচতলায় বলে জানান মৃধা। তার দাবি, রাতে চিৎকার করে ওই বাসার দারোয়ানদের সাহায্য চাইলে, তারা জানায় যে, এসআই আরেফিন বাথরুমে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে গেছেন। তাই কিছু করার নেই।

রাতেই মৃধার কাছ থেকে তার মোবাইল, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও শ্রমিক সংগঠনের সদস্য কার্ড কেড়ে নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন মৃধা। সকালে আরেফিন বাসায় ফিরে মৃধাকে ছেড়ে দিয়ে দু’দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধের আলটিমেটাম দেন। সারারাত মৃধাকে খাবার তো দূরের কথা এক ফোঁটা পানিও খেতে দেওয়া হয়নি।

মৃধাকে বাথরুমে আটকে রাখার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসআই তৌহিদুল আরেফিন বিষয়টি অস্বীকার না করে উল্টো বলেন, ‘ওরে শুধু আটকায়ে রাখা না, ওরে আমি গুলি করমু।’

আতঙ্কিত মৃধা অনলাইন পত্রিকাটিকে জানান, তিনি পারলে টাকা দিয়ে দিতেন। টাকা দিতে না পারলে তাকে ক্রসফায়ারে ফেলা বা অন্য কোনো মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

এসআই আরেফিনের ‘হুংকার’
ওই অনলাইন পত্রিকাটির পক্ষ থেকে সার্বিক বিষয়টা কী জানতে চাইলে এসআই আরেফিন আরো উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পত্রিকা অফিসে মৃধাকে আটকে রাখতে অনুরোধ করে জানান, তিনি কিছুক্ষণের মধ্যে আসতে চান। এ পর্যায়ে আবারও সত্য ঘটনা কী জানতে চাইলে আরেফিন বলেন, ‘এ যেহেতু আমার কলিজায় হাত দিয়া দিছে, এরে ছাড়মু না। সাংবাদিক দিয়া ফোন করায়, মনে করে পুলিশ সাংবাদিক ভয় পায়। এর কপালে শনি আছে। শালা, আমার জিদ আরো উঠায়া দিছে। যদি সামনে পাইতাম…।’

আরেফিন দাবি করেন, তার একটি নোয়া গাড়ি মৃধাকে চালাতে দিয়েছিলেন। মাসে ত্রিশ/চল্লিশ হাজার টাকা দেওয়ার কথা। টাকা তো দেয়নি, উল্টো গত কয়েকদিন মৃধা নানান উছিলায় তার ফোন ধরে না বলে।

গাড়িটি কবে কোথা থেকে কিনেছিলেন জানতে চাইলে আরেফিন জানান, বছর দেড়েক আগে এক সোর্সের কাছ থেকে অল্প টাকায় তিনি গাড়িটি কিনেছিলেন।

এসআই আরেফিন আরো দাবি করেন, তাকে মিরপুর এলাকায় সবাই ফেরেস্তার মতো জানে। গাড়িটিকে মৃধা এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল যে তা দেখে তার চোখে পানি এসে যায় এবং মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে ওয়ারী জোনের ডিসি (উপ-কমিশনার) মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেলে আমার বক্তব্য জানাব।

ad

পাঠকের মতামত