ফেড ও সুইফটের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নয়
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় এখনই আইনি পদক্ষেপে যাচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরিবর্তে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক (ফেড) ও সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশনের (সুইফট) কাছে অর্থ আদায়ে সহযোগিতা আশা করছে। গতকাল রাতেও যুক্তরাষ্ট্র ফেড ও সুইফটের সঙ্গে সভা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিনিধিদল। এ সভাতেও সহযোগিতা আশা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
যদিও ফেড নিউইয়র্কের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ ছাড়া সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও সুইফটের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরে এসেছে, এমন খবর গতকাল প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রয়টার্সের খবরে বলা হয়, রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় নিউইয়র্ক ফেড ও সুইফটের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরিবর্তে সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি যাওয়া অর্থ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার উদ্ধারে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা চাওয়া হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক, ফেড নিউইয়র্ক ও সুইফট—আমরা তিন পক্ষ মিলেই অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছি। এর আগে তিন পক্ষের সভাতে এমন সিদ্ধান্তই হয়েছিল। এ কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারে তৎপরতা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসাইন কিউসিও রয়েছেন। প্রতিনিধিদলটি ফেড ও সুইফটের পাশাপাশি এবার ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্ক, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস, দি ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) সঙ্গেও সভা করবেন।
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় পর্যবেক্ষণমূলক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুয়া আবেদনগুলো ছিল ভুলে ভরা। ভুল ছিল আবেদনের কাঠামোয়, ভুল ছিল বানানে। বোধশক্তিরও অভাব ছিল হ্যাকারদের। এমনকি ব্যক্তির নামে লাখ লাখ ডলার পর্যন্ত হস্তান্তরের আবেদন করা হয়, যা সাধারণ চর্চার পরিপন্থী।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউইয়র্ক ফেড বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ছিল ১৪০ কোটি ডলার, আর সাইবার ডাকাতেরা প্রায় ১০০ কোটি ডলার হস্তান্তরের আবেদন জানায়। ডলার হস্তান্তরের আবেদন জানাতে যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়, তার অনেকগুলোই ছিল অদ্ভুত। পরামর্শ ফি হিসেবে চাওয়া হয়েছে দুই কোটি ডলার। তিন কোটি ডলার চাওয়া হয়েছে ‘ইনএলিজাবল এক্সপেন্স’ বাবদ। তাই ফেডের তদন্ত কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ গণমাধ্যমটি।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক ফেডে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করা হয়। এর মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার স্থানান্তর করা হয় ফিলিপাইনে। আর দুই কোটি ডলার স্থানান্তর হয় শ্রীলঙ্কায়। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কায় যাওয়া রিজার্ভের দুই কোটি ডলার ফেরত পাওয়া গেছে। আর ফিলিপাইনে যাওয়া অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।