এসপি বাবুল আক্তার ‘চ্যাপ্টার ক্লোজ’ হচ্ছে: পদত্যাগপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে

SP-Babul-Wifeঅবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হচ্ছে। আর চাকরিতে ফিরছেন না আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার। চরম বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে। ইতিমধ্যেই তার পদত্যাগপত্র পৌঁছে গেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায়।

মন্ত্রণালয়ের পদস্থ একজন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, এতদিন যেসব গুজব ডালপালা মেলেছিল, তা সত্যি হতে চলেছে। এখন শুধু সিদ্ধান্তের অপেক্ষা। তবে এসপি বাবুল আক্তারও শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বুধবারের পর বৃহস্পতিবারও তিনি পুলিশ সদর দফতরে গিয়ে দিনভর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছেন। তবে তার সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। শীর্ষ কোনো কর্মকর্তা তাকে দেখা দেননি। শেষমেশ তিনি ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে বিলম্বে যোগদানের কারণ লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী বদলি হয়ে আসা কোনো কর্মকর্তাকে সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট শাখায় (প্রশাসন) যোগদানপত্র দেয়ার কথা। তবে গত দুই দিন তিনি পুলিশ সদর দফতরে গেলেও সংশ্লিষ্ট শাখায় যাননি বলে ওই শাখার একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, নতুন কর্মস্থলে যোগদান এবং বিলম্বে যোগদানের কারণ ব্যাখ্যা করতে যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী একজন কর্মকর্তাকে সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির আর্টিকেল-৪৭ অনুসরণ করতে হয়। এসপি বাবুল আক্তার তা করেননি।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার বৃহস্পতিবার টেলিফোনে জানান, তিনি অনেক আগে থেকেই পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত আছেন। তার নির্ধারিত কোনো অফিস কিংবা কাজ নেই। আর যেহেতু পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত আছেন, তাই নতুন করে যোগদানের প্রশ্ন নেই। তবে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন মাত্র।

বাবুল আক্তার আরও বলেন, যদিও বিষয়টি পদস্থ কর্মকর্তা ছাড়াও দেশবাসী জানেন। তারপরও অফিসের নিয়মানুযায়ী তিনি শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন।

পুলিশের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে কোনো পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি বাবুল আক্তার।

তবে কোনো কোনো মিডিয়ায় এসপি বাবুল আক্তারকে স্ত্রী হত্যার অভিযোগ স্বীকার করে স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়ার প্রস্তাব দেয়া হয় বলে খবর হয়। এমনকি তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার কাছ থেকে পদত্যাগপত্র নেয়া হয় বলেও খবর বেরোয়।

তার পদত্যাগপত্রটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় সিদ্ধান্তের জন্য জমা রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাবুল আক্তারের ঘনিষ্ঠ এক স্বজন বলেন, বাবুল আক্তার নিজে থেকে কোনো পদত্যাগপত্র জমা দেননি। তবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কাগজে স্বাক্ষর রাখা হয়েছিল। ওই কাগজে লেখা ছিল স্ত্রী মৃত্যুর কারণে তিনি চাকরি করতে আপাতত অক্ষম।

পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অফিসে আসেন এসপি বাবুল আক্তার। তিনি নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলায় তার এক সহকর্মী (২৪তম বিসিএস ক্যাডারের) কর্মকর্তার কক্ষে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকেন। এখানে বসেই শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য দফায়-দফায় চেষ্টা করেন।

তবে ব্যর্থ হয়ে শেষমেশ ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি পান। পরে তিনি ওই কর্মকর্তার কাছে গিয়ে দেরিতে যোগদানের কারণ ব্যাখ্যা করে হাতে লেখা একটি চিঠি দেন। এরপর পৌনে ৪টার দিকে তিনি সদর দফতর ছেড়ে যান।

এর আগে দুর্বৃত্তদের গুলিতে স্ত্রী খুন হওয়ার ৫৮ দিন পর বুধবার প্রথম পুলিশ সদর দফতরে যান আলোচিত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টায় পুলিশ সদর দফতরে গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থানের পর তিনি কিছুটা নিভৃতেই সেখান থেকে চলে যান।

এদিকে এ পুলিশ কর্মকর্তা কর্মস্থলে যোগদান করছেন- এমন খবরে মিডিয়াকর্মীরা জড়ো হন সদর দফতরে। কিন্তু পুলিশের পদস্থ কোনো কর্মকর্তা এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

বাবুল আক্তারের নতুন কর্মস্থলে যোগদান করা না করা নিয়ে পুলিশ সদর দফতরে দিনভর চলে এক ধরনের নাটক। দু-একটি অনলাইন মিডিয়া ও বেসরকারি টেলিভিশনে বাবুল আক্তারের যোগদানের খবরটি ‘ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবে প্রচারও করে।

তবে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (মিডিয়া) একেএম শহিদুর রহমান এসপি বাবুল আক্তার কর্মস্থলে যোগ দেননি বলে নিশ্চিত করেন।

প্রসঙ্গত, ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন এসপি বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। ঘটনার সময় বাবুল আক্তার নতুন কর্মস্থলে (পুলিশ সদর দফতর) যোগ দিতে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। স্ত্রী হত্যার খবর পেয়ে তিনি চট্টগ্রাম ছুটে যান। এ ঘটনায় দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাবুল আক্তার অজ্ঞাত পরিচয় তিন ব্যক্তিকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কয়েকজন ওই ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতে মিতু হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা হিসেবে নাম এসেছে কামরুল সিকদার ওরফে মুছার। আর এ মুছা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের বিশ্বস্ত সোর্স।

মিতু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মুছার জড়িয়ে পড়ায় এবং বেশকিছু তথ্য মেলায় বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। এ প্রেক্ষিতে ২৪ জুন রাতে এসপি বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ি থেকে তুলে নেয়ার পর শুরু হয় নানা গুঞ্জন।

জিজ্ঞাসাবাদের নামে প্রায় ১৫ ঘণ্টা তাকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। পরে তাকে বাসায় পৌঁছে দেয়া হলেও দীর্ঘদিন চাকরিতে যোগদান না করে এক প্রকার স্বেচ্ছাবন্দি জীবনযাপন করতে থাকেন তিনি। আর এতেই জনমনে নানা সন্দেহের ডালপালা মেলতে থাকে।

ad

পাঠকের মতামত