
সোনার দামে নতুন রেকর্ড, তবে বিনিয়োগে সতর্কতার পরামর্শ বিশ্লেষকদের
গত দেড় মাস ধরে অস্বাভাবিক উত্থান দেখা যাচ্ছে সোনার বাজারে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে সোনার দাম; এমন ভবিষ্যদ্বাণীর কারণে এখন অনেক সাধারণ মানুষের মধ্যেও সোনায় বিনিয়োগের ব্যাপক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরই মধ্যে চরম অস্থিরতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে সোনার বাজারে; শিগগিরই দেখা যেতে পারে বড় ধরনের উত্থান-পতন। এ অবস্থায় সোনায় বিনিয়োগের মাধ্যমে আগের তুলনায় অনেক বেশি লাভবান হওয়ার আশা থাকলেও এক্ষেত্রে কৌশলী হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। কারণ, ভুল সময়ে বিনিয়োগ ডেকে আনতে পারে বড় ধরনের লোকসান।
সোমবার (২০ অক্টোবর) সংযুক্ত আরব আমিরাতে রেকর্ড উচ্চতার কাছাকাছি অবস্থানে পৌঁছেছে সোনার দাম। এদিন স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় প্রতি আউন্স সোনা ৪ হাজার ২৬৬ দশমিক ২০ ডলারে লেনদেন হয় দেশটিতে, যা আগের তুলনায় শূন্য দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি। এর আগেই সোনার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৩৭৮ দশমিক ৯৮ ডলারে পৌঁছায়।
‘সোনার শহর’ হিসেবে পরিচিত দুবাইতেও নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে সোনার দাম। প্রথমবারের মতো প্রতি গ্রামে ৫০০ দিরহাম ছাড়িয়ে গেছে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম।
এই অবস্থায় বিশ্লেষকরা খুচরা বিনিয়োগকারীদের বেশ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদের মতে, বাজারে প্রবেশের জন্য এখনই উপযুক্ত সময় নয়। বরং, ৫–১০ শতাংশ দামের পতন হলে সেটাই হতে পারে বিনিয়োগের আদর্শ সময়।
পেপারস্টোন-এর গবেষণা প্রধান ক্রিস ওয়েস্টন বলেন, এই মুহূর্তে অনেক বিনিয়োগকারীরই চোখ সোনার বাজারে। তাই ছোটখাটো পতনের সময়ই বাজারে ঢোকার চেষ্টা করছেন অনেকে। তবে, আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন তাদের। ৫–১০ শতাংশ দাম কমলে সেটিই হবে পরবর্তী বড় ঊর্ধ্বগতির আগে একটি আদর্শ এন্ট্রি পয়েন্ট।
ওয়েস্টন মনে করেন, সোনার দামের এমন ঊর্ধ্বগতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হলো চীনের মতো উদীয়মান অর্থনীতির কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্রমবর্ধমান সোনা সঞ্চয়ের প্রবণতা। বিগত বছরগুলোতে বৈশ্বিক কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের রিজার্ভে সোনার অনুপাত ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২২–২৩ শতাংশে উন্নীত করেছে। এ প্রবণতা এখনও অব্যাহত আছে।
এ অবস্থায় সোনায় বিনিয়োগের আরও সুযোগ অবশিষ্ট রয়ে গেছে বলে অভিমত ওয়েস্টনের। তবে, এক্ষেত্রে আবেগী না হয়ে কৌশল অবলম্বন জরুরি।
ট্রেজের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা আফশিন সেটুদেহ বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বলেন, গত ১৮ মাস সোনার বাজার ব্যবসায়ীদের অনুকূলে ছিল, তবে আত্মতুষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। সোনার দামে ১০০–১৫০ ডলারের ওঠানামা এখন স্বাভাবিক ঘটনা। এলোমেলোভাবে বিনিয়োগে ঝাঁপ দেওয়া ঠিক নয়।
তার পরামর্শ, বাজার থেকে শিখুন, অর্জিত শিক্ষা কাজে লাগান, স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলুন; কিন্তু আবেগপ্রবণ হবেন না।