
যা আছে জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায়
জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা স্বাক্ষর করেছেন।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সনদে স্বাক্ষর করা হয়।
এতে সাতটি মূল অঙ্গীকারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠনের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে।
ঢাকা পোস্টের হাতে আসা জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায় দেখা গেছে, ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া’ –এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে এটি শুরু হয়েছে। প্রথম অঙ্গিকারনামায় বলা হয়েছে, জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়া এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য যে দীর্ঘ সংগ্রাম চলেছে, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান সেই লড়াইয়ের ঐতিহাসিক মোড়।
এতে উল্লেখ করা হয়, হাজারো মানুষের জীবনদান ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত সুযোগে প্রণীত জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে।
দ্বিতীয় অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, জনগণ যেহেতু রাষ্ট্রের মালিক, তাদের অভিপ্রায়ই সর্বোচ্চ আইন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে এই সনদ গ্রহণ করেছে। তাই সনদটি সংবিধানে তফসিল হিসেবে বা উপযুক্তভাবে সংযুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
অঙ্গীকারনামার তৃতীয় দফায় বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদের বৈধতা বা প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা হবে না। বরং এর প্রতিটি ধাপে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।
চতুর্থ অঙ্গীকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের জন্য জনগণের ১৬ বছরের সংগ্রাম এবং বিশেষত ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করা হবে।
অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফায় বলা হয়েছে, গণঅভ্যুত্থানপূর্ব ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারগুলোকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করব। (আজ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে জুলাই যোদ্ধাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ দফা সংশোধন করা হয়। নতুন করে লেখা হয়, ‘শহীদ পরিবারকে এবং জুলাই আহতদের রাষ্ট্রীয় বীর, আহত জুলাই বীর যোদ্ধাদের যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান যেমন মাসিক ভাতা, সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ব্যবস্থা এবং শহীদ পরিবার ও আহত বীর যোদ্ধাদের আইনগত দায়মুক্তি, মৌলিক অধিকার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করব’)।
ষষ্ঠ দফায় সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ কাঠামো ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থার সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। এসব বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় আইন, বিধি ও প্রবিধি সংশোধন বা নতুনভাবে প্রণয়ন করার অঙ্গীকার করা হয়েছে।
শেষ দফায় উল্লেখ করা হয়, জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত যেসব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেগুলো দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করবে– কোনো প্রকার বিলম্ব ছাড়াই।
জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর ভিত্তি হলো ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান, যা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত। ওই সময়ে হাজার হাজার নাগরিক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দুঃশাসন, রাষ্ট্রীয় দমন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থা ও সামাজিক অন্যায়-বঞ্চনার প্রতিবাদে সড়কে নেমেছিলেন। সেই আন্দোলনের সহস্রাধিক মানুষ নিহত এবং ২০ হাজারের অধিক মানুষ আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করেন। এমনকি একপর্যায়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়।