
বাংলাদেশ আর কখনো স্বৈরশাসনের পথে ফিরবে না : জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ আর কখনও স্বৈরশাসনের পথে ফিরবে না জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দলমত নির্বিশেষে গঠিত ঐকমত্যের ভিত্তিতেই দেশের গণতন্ত্র ও সংস্কার কার্যক্রম টেকসইভাবে এগিয়ে যাবে। জনগণের আত্মত্যাগে অর্জিত ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠনের প্রক্রিয়াকে আর কোনও শক্তি বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।
তিনি বলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে নাগরিকবান্ধব সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
গণঅভ্যুত্থানের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তরুণসমাজ স্বৈরাচারকে পরাভূত করেছিল। যার ফলে আমরা বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের অভিযাত্রা নতুনভাবে শুরু করতে পেরেছি। সেই বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাকে ও আমার সহকর্মীদের।
তিনি বলেন, ভেঙে পড়া রাষ্ট্র কাঠামোকে পুনর্গঠন করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রয়োজন ছিল। সেজন্য আমরা ১১টি স্বাধীন সংস্কার কমিশন প্রতিষ্ঠা করি। কমিশনগুলো জনমত যাচাই ও গভীর পর্যালোচনা করে বিস্তারিত সংস্কার কার্যক্রম সুপারিশ করে।
তিনি আরও বলেন, এই সংস্কার সুপারিশগুলো টেকসইভাবে বাস্তবায়নের জন্য আমরা একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করি, যারা ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দল ও জোটকে নিয়ে আলোচনায় বসে। এ কমিশনের লক্ষ্য ছিল সংস্কার প্রস্তাবগুলোর প্রতি দলমত নির্বিশেষে একটি টেকসই সামাজিক অঙ্গীকার তৈরি করা। আমাদের এই অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ সফল হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে সকলে মিলে ‘জুলাই ঘোষণা’র মাধ্যমে এই সংস্কার কার্যক্রমের প্রতি আমাদের সময়াবদ্ধ অঙ্গীকার ব্যক্ত করি। অর্থাৎ আগামী নির্বাচনে যেই দলই জনগণের সমর্থন পাক না কেন, সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে আর কোনো অনিশ্চয়তার অবকাশ থাকবে না।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলা—যেখানে আর কোনো স্বৈরশাসকের আবির্ভাব হবে না, কোনো নির্বাচিত নেতা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক স্বরূপকে ক্ষুণ্ণ করতে পারবে না, কিংবা রাষ্ট্র ও জনগণের রক্ষকরা ভক্ষকে পরিণত হতে পারবে না।
টাকা পাচারের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, গত ১৫ বছরে দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি ডলার অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আমরা তা ফেরত আনার চেষ্টা করছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইনি প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার কারণে এই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দৃঢ় সদিচ্ছা ছাড়া আমরা পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধারে সফল হব না।