জান্তাশাসিত মিয়ানমারে ৫ বছর পর জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু
অবশেষে পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমারে। ২০২১ সালে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের প্রায় ৫ বছর পর এই প্রথম জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে দেশটিতে।
মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশনের এক প্রতিবেদনে এএফপি জানিয়েছে, আজ ২৮ ডিসেম্বর থেকে আগামী ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন ধাপে চলবে ভোটগ্রহণ। আজ রোববার প্রথম ধাপে রাজধানী নেইপিদো, বাণিজ্যিক রাজধানী ও বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন, দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়সহ জান্তানিয়ন্ত্রিত কয়েকটি শহর ও গ্রামাঞ্চলে ভোটগ্রহণ চলছে।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ৬টা (বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৩০মিনিট) থেকে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। জাতীয় পার্লামেন্ট ও প্রাদেশিক আইনসভা— উভয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। তবে বিদ্রোহীদের দখলকৃত অঞ্চল ও প্রদেশগুলোতে ভোটগ্রহণ হচ্ছে না।
মিয়ানমারে এর আগে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০২০ সালের নভেম্বরে। সেই নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় অর্জন করেছিল গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি’র নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)।
কিন্তু ওই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এনএলডি সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
অভ্যুত্থানের পর প্রথমেই সু চিসহ এনএলডির অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা, এমপি-মন্ত্রিসহ হাজার হাজার কর্মী-সংগঠককে গ্রেপ্তার করে সামরিক বাহিনী। তারা সবাই এখনও কারাগারে আছেন। সু চির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দুর্নীতির অবিযোগ এনেছে জান্তা। সেগুলোর প্রমাণিত হলে ১৫০ বছর কারাবাসের সাজা হতে পারে তার। ২০২৩ সালে এনএলডিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে জান্তাশাসিত নির্বাচন কমিশন।
ফলে এবারের নির্বাচনে এনএলডি নেই। সেই সঙ্গে ২০২০ সালের নির্বাচনে যেসব দল অংশ নিয়েছিল, সেসবেরও অধিকাংশই নির্বাচন বর্জন করেছে। মিয়ানমারের নির্বাচনের এ ময়দানে এখন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে আছে সামরিক বাহিনীর সমর্থনপুষ্ট ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি। ভোটগ্রহণের পর তারাই সরকার গঠন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে জান্তা ক্ষমতা গ্রহনের ৬ মাস পর থেকে উত্থান শুরু হয় মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী বিভিন্ন সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠীর। ২০২৩ সাল থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাত শুরু হয় এসব গোষ্ঠীর এবং অধিকাংশক্ষেত্রেই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো জয়ী হয়ে সামরিক বাহিনীকে তাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে মিয়ানমারের বাংলাদেশসংলগ্ন প্রদেশ রাখাইনসহ মিয়ানমারের প্রায় ৩৩ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে আরাকান আর্মি, কারেন লিবারেশন ফোর্সসহ একাধিক জান্তাবিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
সশস্ত্র গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন এলাকা এবং মিয়ানমারের অন্তত ৫টি প্রদেশে ভোটগ্রহণ হচ্ছে না বলে জানিয়েছে এএফপি।
সু চির ছেলে কিম অ্যারিস, যিনি ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, এএফপিকে বলেছেন, “এটা একটা অর্থহীন নির্বাচন। আমার মা এবং মিয়ানমারের অধিকাংশ জনগণ এমনটাই মনে করেন।”
সূত্র : এএফপি










