বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে যেভাবে সমঝোতার চেষ্টা করছে সরকার
আগামী জাতীয় নির্বাচনের বড় শক্তি হিসাবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যকার সৃষ্ট বিরোধ সামাল দিতে সরকারের তরফ থেকে পর্দার আড়ালে সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে চারজন উপদেষ্টা ইতোমধ্যে বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে দুই দফা কথা বলেছেন। তবে এখন পর্যন্ত সমঝোতার কোনো ইঙ্গিত মেলেনি।
২৮ অক্টোবর জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেওয়ার পরপরই দলগুলোর এরকম অবস্থান প্রকাশ্যে আসে। এক দল অন্য দলের বিরুদ্ধে ক্রমাগত বক্তব্য দিচ্ছে।
তবে সূত্র জানায়, সমঝোতার ক্ষেত্রে সরকার দুটি প্রস্তাব সামনে রেখে আলোচনা শুরু করেছে। এর মধ্যে একটি হলো-বিএনপিকে পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন মেনে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। অপর প্রস্তাবে জামায়াতকে বলা হচ্ছে, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট মেনে নিতে। কিন্তু উভয় পক্ষই এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে তাদের অবস্থানে অনড়।
এ অবস্থায় বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে যোগাযোগ করবে সরকার। এছাড়া ঐকমত্য কমিশন বলছে, রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বক্তব্য দিচ্ছে, এর অধিকাংশই সত্য নয়। কিন্তু এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলে দলগুলোর সঙ্গে তারা বিরোধে যেতে চান না। নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো যুগান্তরকে এমনটি জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, গণভোট ও জুলাই সনদ ইস্যুতে দলগুলোর মধ্যে এরকম মুখোমুখি অবস্থানে সরকার বিব্রত। এ কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধ মেটাতে পর্দার আড়ালে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকেও এ ব্যাপারে আলোচনা হয়।
বিষয়টি সমাধানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে চারজন উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এবং জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সমঝোতার পর জুলাই সনদ বাস্তবায়নসংক্রান্ত আদেশ জারি হতে পারে।
সূত্র আরও জানায়, সমঝোতার জন্য উপদেষ্টা পরিষদ কয়েকটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করছে। প্রথমত, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক না করে আগামী সংসদের সংবিধান সংস্কার পরিষদের ওপর ছেড়ে দেওয়া। দ্বিতীয়ত, অধিকাংশ উপদেষ্টা জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একদিনে আয়োজনের পক্ষে।
তৃতীয়ত, জুলাই সনদে প্রধান উপদেষ্টার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে আদেশ জারি করা। তবে এখন পর্যন্ত এসব বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। উপদেষ্টা পরিষদ মনে করে, ঢাকায় বিএনপির যে নেতৃত্ব রয়েছে, তারা বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।
এজন্য লন্ডন থেকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মতি লাগবে। তাই প্রধান উপদেষ্টাকে তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করা হয়েছে।
অন্যদিকে ঐকমত্য কমিশন সূত্র যুগান্তরকে জানায়, তারা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করেছে। কিন্তু দলগুলো ছাড় দিতে রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত দলগুলো বলেছে, সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে আমরা দলীয় অবস্থান জানিয়েছি। এরপর আপনারা সুপারিশ করেন। সূত্র আরও জানায়, দলগুলো যে অভিযোগ করছে, এর অধিকাংশই সত্য নয়। চাইলে এগুলো প্রমাণ করা যায়। কারণ এখন পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে যেসব আলোচনা হয়েছে, সেগুলো বিটিভি লাইভ প্রচার করেছে। ফলে এর ডকুমেন্ট আছে এবং সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনই এই ডকুমেন্ট সামনে এনে তারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মুখোমুখি হতে চায় না।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ শনিবার একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে উপদেষ্টারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা যোগাযোগ করে সমঝোতার চেষ্টা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের দলীয় অবস্থান হলো আগে গণভোট হতে হবে। না হলে সংস্কার উদ্যোগ বৃথা যাবে। তিনি বলেন, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট হলে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হবে। সুতরাং আগে গণভোট হতে হবে। এখানে আমরা কোনো ছাড় দেব না।
বিএনপি উচ্চকক্ষে পিআর মানলে আপনারা জাতীয় নির্বাচনের দিনে গণভোট মানবেন কি না-প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই নেতা বলেন, দুটি ভিন্ন বিষয়। এটাকে আমরা এক করে দেখছি না। ঐক্যের স্বার্থে দলীয়ভাবে আমরা অনেক ছাড় দিয়েছি। কিন্তু দেশ ও জনগণের স্বার্থে কোনো ছাড় নয়। উৎস: যুগান্তর।









