371995

১৮ বছর পর বাংলাদেশ-কুয়েত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক: বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও শ্রমবাজারে নতুন সম্ভাবনা

চুক্তি হওয়ার দীর্ঘ ১৮ বছর পর প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও কুয়েত। ২০০৬ সালে এ পর্যায়ের বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে চুক্তি সই হলেও এবারই প্রথম ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ (এফওসি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে এ বৈঠক।

রোববার (১৯ অক্টোবর) ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠেয় বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব ও পশ্চিম) ড. মো. নজরুল ইসলাম। কুয়েতের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রদূত সামি ঈসা জোহর হায়াত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বৈঠকে রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো, শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে সহযোগিতা, অবকাঠামো ও কৃষিখাতে পারস্পরিক সহযোগিতা—এসব বিষয় গুরুত্ব পাবে।

এছাড়া ঢাকার পূর্বাচলে ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনে কুয়েতের সহযোগিতা, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ ও হালাল পণ্যের অ্যাক্রিডিটেড সনদ প্রদানে সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হবে।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বৈঠকে কুয়েত থেকে বাংলাদেশ সার আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করবে। একই সঙ্গে শ্রমবাজার ও সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের কৃষিপ্রযুক্তি ব্যাপকভাবে সফল। আমাদের কর্মীরা সেখানকার বিভিন্ন মরুভূমিতে চাষাবাদ করে সফলতা দেখিয়েছে। কুয়েতের কাছেও আমরা বিষয়গুলো তুলে ধরবো।’

সফরসূচি অনুযায়ী, কুয়েতের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী শনিবার দিনগত রাতে ঢাকায় পৌঁছে একদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে রোববার (১৯ অক্টোবর) বৈঠকে যোগ দেবেন। পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে তার।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের বাইরে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে কুয়েতে বাংলাদেশের একটি সামরিক কন্টিনজেন্ট কাজ করছে, যারা সরাসরি কুয়েত সরকারের অধীনে দায়িত্ব পালন করে। এদের অধিকাংশই অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, কিছু আছেন কর্মরত অবস্থায়। প্রকৌশলী, চিকিৎসক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ এ দলের সদস্য পাঁচ হাজারের বেশি।

তিনি জানান, ইরাক-কুয়েত যুদ্ধের পর ‘অপারেশন কুয়েত পুনর্গঠন (ওকেবি)’ প্রকল্পের মাধ্যমে এই সহযোগিতার সূত্রপাত, যা দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকেও নতুন মাত্রা দিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়টি। আমরা চাই, কুয়েত থেকে বিনিয়োগ আসুক, পাশাপাশি দেশটিতে আমাদের রপ্তানিও বাড়ুক।’

বর্তমানে কুয়েতে প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশি কর্মী কাজ করেন। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি কর্মী নেয় না দেশটি।

আরও বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পাবে জানিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কুয়েতের অর্থনীতি আকারে বড় না হলেও দেশটি জিসিসি সদস্য এবং আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ। আমরা সেখানে কর্মসংস্থানের নতুন খাত ও সম্ভাবনা খুঁজে দেখতে চাই।’

এর আগে ২০১৬ সালের ৩ মে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী জাবের আল মুবারক আল হামাদ আল সাবাহ তিনদিনের সফরে ঢাকায় আসেন। ওই সফরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য-বিনিয়োগ উন্নয়ন, সামরিক খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি, যোগাযোগ খাতে সহযোগিতা ও ভিসা সহজীকরণ সংক্রান্ত চারটি চুক্তি সই হয়। এছাড়া সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ ও কুয়েত একযোগে কাজ করবে বলে একমত হয়।

এর আগে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কুয়েতে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফর করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কুয়েতের আমিরের পাঠানো একটি বিশেষ প্লেনে করে দেশটিতে যান তিনি। উৎস: জাগোনিউজ২৪

 

 

ad

পাঠকের মতামত